জীবনসঙ্গী আমেরিকায় না থাকলেও যৌথ ট্যাক্স ফাইল করা যাবে

এখন আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়। আয়কর রিটার্ন জমা দিতে গিয়ে অনেকে নানা ধরনের সমস্যায় পড়েন। অনেক সময় যথাযথ তথ্য না থাকায় অনেকে সঠিকভাবে ট্যাক্স ফাইল করতে পারেন না। ফলে তুলনামূলক বেশি কর পরিশোধ করতে হয়। এমনই কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের প্রশ্নোত্তর পর্বটি।

প্রশ্ন: জীবনসঙ্গী (স্পাউস) কখনো আমেরিকাতেই আসেনি। আপনি কি ‘ম্যারিড ফাইলিং জয়েন্টলি’ স্ট্যাটাসে ট্যাক্স ফাইল করতে পারবেন?
উত্তর: হ্যাঁ, পারবেন। আমরা সবাই জানি, সিঙ্গেল হিসেবে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করলে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পাওয়া যায় মাত্র ১২ হাজার ডলার। অথচ ‘ম্যারিড ফাইলিং জয়েন্টলি’ হিসেবে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করলে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পাওয়া যায় ২৪ হাজার ডলার। ধরা যাক, ডব্লিউ-টুতে আপনার আয় হলো ২৫ হাজার ডলার। এখন আপনি যদি সিঙ্গেল হিসেবে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করেন, তাহলে আপনার করযোগ্য আয় হবে ১৩ হাজার ডলার। এই ১৩ হাজার ডলারের ওপরই আপনার আয়কর নির্ধারিত হবে। অথচ আপনি যদি ‘ম্যারিড ফাইলিং জয়েন্টলি’ হিসেবে ট্যাক্স ফাইল করেন, তাহলে আপনার করযোগ্য আয় হবে ১ হাজার ডলার। এই ১ হাজার ডলারের ওপর নির্ধারিত করের পরিমাণ নিশ্চিতভাবেই ১৩ হাজার ডলারের ওপর নির্ধারিত করের চেয়ে কম হবে।
মনে করুন, আপনি আমেরিকায় আছেন এবং আপনার স্পাউস বাংলাদেশে আছেন, যিনি কখনোই আমেরিকায় আসেননি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ট্যাক্স ফাইলের সময় আপনি অবশ্যই যৌথ ট্যাক্স ফাইল করতে পারবেন। আইআরএসে ভাষায়, আপনি যদি রেসিডেন্ট এলিয়েন হন এবং আপনার স্পাউস যদি নন-রেসিডেন্ট এলিয়েন হন এবং তার যদি সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর নাও থাকে, তাও আপনি আপনার স্পাউসকে সঙ্গে নিয়ে ‘ম্যারেড ফাইলিং জয়েন্টলি’ স্ট্যাটাসে ফাইল করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তার অরিজিনাল পাসপোর্ট অথবা ইস্যুইং এজেন্সি দ্বারা সনদপ্রাপ্ত পাসপোর্টের অনুলিপি ডব্লিউ-সেভেন ফর্মের সঙ্গে জমা দিয়ে আইটিআইএনের জন্য আবেদন করতে হবে। ওই আবেদনের সঙ্গেই আপনাদের জয়েন্ট ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে পারবেন। এ বিষয়ে https://www.irs.gov/…/internationa…/nonresident-alien-spouse ঠিকানায় বিস্তারিত জানা যাবে।

প্রশ্ন: মনে করুন, আপনার স্পাউস আপনার সঙ্গে থাকে না। কিন্তু আপনার সঙ্গে তাঁর ডিভোর্স বা সেপারেশনও হয়নি। আবার আপনার সন্তান বা মা-বাবা আপনার ওপর নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে আপনি কি ‘ম্যারেড ফাইলিং সেপারেটলি’ হিসেবে, নাকি ‘হেড অব হাউজহোল্ড হিসেবে’ ট্যাক্স ফাইল করবেন?
উত্তর: যেহেতু ‘ম্যারেড ফাইলিং সেপারেটলি’ হিসেবে ফাইল করলে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ১২ হাজার ডলার। আর ‘হেড অব হাউজহোল্ড’ হিসেবে ফাইল করলে স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ১৮ হাজার ডলার। তাই আপনার করযোগ্য আয়ের পরিমাণ ৬ হাজার ডলার কমিয়ে আনতে অবশ্যই আপনার উচিত ‘ম্যারেড ফাইলিং সেপারেটলি’ হিসেবে ফাইল না করে ‘হেড অব হাউজহোল্ড’ হিসেবে ফাইল করা। প্রশ্ন হচ্ছে হেড অব হাউজহোল্ড হিসেবে ট্যাক্স ফাইল করার যোগ্যতা কী? এই যোগ্যতা নিচের বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে।
১। করবছরের শেষ দিন যদি আপনি আনম্যারেড হন, অথবা ম্যারেড হলেও কোনো ‘ডিক্রি অব ডিভোর্স’ বা ‘ডিক্রি অব সেপারেট মেইনটেন্যান্স’-এর অধীনে আইনত আলাদা থাকার কারণে অথবা সর্বশেষ ছয় মাস আপনার স্পাউস আপনার সঙ্গে বসবাস না করার কারণে আইআরএস নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে অবিবাহিত বিবেচনা করে।
২। আপনি যদি আপনার ‘আনম্যারেড কোয়ালিফাইং চাইল্ড’ অথবা ‘রিলেশনশিপ টেস্টে’ যোগ্য বিবেচিত হয় এমন কোনো আত্মীয়ের জন্য কোনো ‘হাউজহোল্ড’ মেইনটেইন করেন।
৩। যোগ্য সন্তানের ক্ষেত্রে বছরের অর্ধেকের বেশি সময় এবং যোগ্য আত্মীয়ের ক্ষেত্রে সারা বছর সেই ‘হাউজহোল্ডে’র খরচ বহন করেন, তাহলে আপনি ‘হেড অব হাইজহোল্ড’ হিসেবে ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করতে পারেন।

প্রশ্ন: আপনার ওপর নির্ভরশীল কে?
উত্তর: সমরেশ মজুমদারের একটা বই পড়েছিলাম, ‘আমি কার, কে আমার’। আবার ‘তুমি বা কার কে বা তোমার এই সংসারে’ শিরোনামে একটা লালনগীতিও রয়েছে। কিন্তু ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের বেলায় আপনি কার ওপর নির্ভরশীল বা কে আপনার ওপর নির্ভরশীল, তা অনেকটা এই দুই শিরোনামের মতোই অস্পষ্ট। অনেকের কাছেই বিষয়টি এক বড় ধাঁধা। চলুন দেখি আইআরএস কী বলছে—
প্রথম কথা হলো আপনাকে অথবা আপনার স্পাউসকে যদি নির্ভরশীল (ডিপেন্ডেন্ট) হিসেবে অন্য কোনো করদাতা দাবি করেন, তবে আপনি অন্য কাউকে ডেপেন্ডেন্ট হিসেবে দাবি করতে পারবেন না। আর যদি আপনি অথবা আপনার স্পাউস অন্য কোনো করদাতার ডিপেন্ডেন্ট না হন, সে ক্ষেত্রে আপনার ডিপেন্ডেন্ট হতে পারে আপনার ‘কোয়ালিফাইং চাইল্ড’ অথবা ‘কোয়ালিফাইং রিলেটিভ’।
কোয়ালিফাইং চাইল্ড হিসেবে যাকে দাবি করবেন ছয়টি মানদণ্ডে তাকে উত্তীর্ণ হতে হবে—
১. সম্পর্ক- সম্পর্কে সে হতে হবে আপনার ছেলে, মেয়ে, সৎ সন্তান, দত্তক সন্তান, ভাই-বোন, সৎ ভাইবোন, অথবা এদের কারও সন্তান।
২. বয়স- ওই করবছরে তার বয়স হতে হবে ১৯ বছরের কম, অথবা নিয়মিত শিক্ষার্থী হলে তার বয়স হতে হবে ২১ বছরের কম। সে আপনার অথবা আপনার স্পাউসের চেয়ে বয়সে ছোট হতে হবে। তবে সে যদি স্থায়ী ও পূর্ণাঙ্গভাবে অক্ষম হয়, তবে কোয়ালিফাইং চাইল্ড হিসেবে দাবি করার জন্য, তার বয়স কোনো বাধা হবে না।
৩. বাসস্থান- সে আপনার সঙ্গে ওই করবছরে অর্ধেকের চেয়ে বেশি সময় বসবাস করতে হবে। কোনো শিশু যদি ওই করবছরে জন্ম নেয় অথবা কোনো ব্যক্তি যদি ওই করবছরে মারা যায়, সে ক্ষেত্রে তার জন্য অর্ধেকের চেয়ে বেশি সময় আপনার সঙ্গে বসবাসের নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। আবার কলেজে পড়াশোনার কারণে সে যদি অন্য কোথাও বাস করে, সে ক্ষেত্রে সেটাকে সাময়িক অনুপস্থিতি ধরা হবে এবং এই মানদণ্ডে সে যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
৪. আর্থিক সহায়তা- নির্ভরশীল ব্যক্তি নিজে তার সারা বছরের খরচের অর্ধেকের চেয়ে বেশি বহন করতে পারবে না।
৫. যৌথ রিটার্ন- সে নিজে ওই করবছরে যৌথ রিটার্ন ফাইল করতে পারবে না।
৬. স্ট্যাটাস- তাকে হতে হবে আমেরিকান নাগরিক, রেসিডেন্ট এলিয়েন, ইউএস ন্যাশনাল অথবা কানাডা বা মেক্সিকোর রেসিডেন্ট।
উপরিউক্ত সম্পর্ক অথবা রেসিডেন্সি টেস্টের যেকোনো একটি এবং সেই সঙ্গে আর্থিক সহায়তা, যৌথ রিটার্ন ও স্ট্যাটাসের মানদণ্ডে যোগ্য, অথচ বয়স বিবেচনায় অযোগ্য হলে, অর্থাৎ যদি দেখা যায় যে, সে আপনার বা আপনার স্পাউসের চেয়ে বয়সে বড় এবং তার নিজের গড় বার্ষিক আয় ৪ হাজার ১৫০ ডলারের বেশি না হলে আপনি তাকে ‘কোয়ালিফাইং চাইল্ড’-এর বদলে ‘কোয়ালিফাইং রিলেটিভ’ ক্যাটাগরিতে নির্ভরশীল হিসেবে দাবি করতে পারবেন। সাধারণত ‘কোয়ালিফাইং রিলেটিভ’ হিসেবে মা-বাবা, বয়সে বড় ভাইবোন, মা-বাবার ভাইবোন এবং আরও কিছু আত্মীয়কে দাবি করা যায়। যেহেতু সম্পর্ক ও বাসস্থানের মনাদণ্ডের যেকোনো একটিতে উত্তীর্ণ হলেই চলে, তাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আপনার সঙ্গে সারা বছর বসবাস না করলেও তাকে নির্ভরশীল হিসেবে দাবি করতে পারবেন।

লেখক: আইনজীবী