ট্রাম্পের ছেলে-মেয়ে-জামাতাও তদন্তের আওতায়

ডোনাল্ড ট্রাম্প, ট্রাম্প জুনিয়র, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প, ট্রাম্প জুনিয়র, ইভাঙ্কা ট্রাম্প, জ্যারেড কুশনার।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাশাপাশি তাঁর পরিবারের সদস্যরাও এবার মার্কিন কংগ্রেসের তদন্তের আওতায় পড়ছেন।

প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটির প্রধান কংগ্রেসম্যান জেরি ন্যাডলার জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের বড় ছেলে ট্রাম্প জুনিয়র ও তাঁর ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত—এমন প্রায় ৬০ জনের কাছে বিভিন্ন নথিপত্র তলব করে চিঠি পাঠাচ্ছেন।

ন্যাডলার বলছেন, বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলার যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত পরিচালনা করছেন, ট্রাম্প সেই বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ প্রমাণের জন্যই সংশ্লিষ্ট নথি দরকার।

ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ও জামাতা জ্যারেড কুশনারও তদন্তের বাইরে থাকছেন না। কংগ্রেসের তত্ত্বাবধান (ওভারসাইট) কমিটির প্রধান কংগ্রেসম্যান ইলাইজা কামিংস জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের ছেলেমেয়েদের তাঁর কমিটির সামনে জবাবদিহির জন্য ডেকে পাঠাবেন।

গোয়েন্দা দপ্তরগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও জ্যারেডকে সর্বোচ্চ গোপনীয় অনুমতিপত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) প্রদানের ব্যাপারে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এই খবর প্রকাশিত হওয়ার পর তিনিও তদন্তের আওতায় এসেছেন।

আগে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন, তিনি এই ব্যাপারে নাক গলাননি। সব বিধি মেনেই করা হয়েছে।

জানা গেছে, গোয়েন্দা বিভাগের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প ওই অনুমতিপত্র প্রদানের জন্য তাঁর সাবেক চিফ অব স্টাফ জেনারেল কেলিকে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন।

বিষয়টি নিয়মবহির্ভূত—সেই বিবেচনা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য কেলি ট্রাম্পের নির্দেশ উল্লেখ করে এক অভ্যন্তরীণ মেমো রেখে গেছেন বলে জানা গেছে।

কামিংস জানিয়েছেন, এই অনুমতিপত্র কীভাবে প্রদান করা হলো, তার পূর্ণাঙ্গ নথিপত্র চেয়ে তিনি হোয়াইট হাউসের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। হোয়াইট হাউস ওই নির্দেশ মানতে অস্বীকৃতি জানালে সমন জারি করা হবে।

গত সপ্তাহে ট্রাম্পের সাবেক ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন কংগ্রেসের সামনে বিস্ফোরক সাক্ষ্য প্রদান করেন। এতে ট্রাম্পের বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও জড়িত বলে তথ্য উঠে আসে। এই কথা উল্লেখ করে কামিংস বলেছেন, কোহেনের সাক্ষ্য অনুসরণ করলেই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে।

বিচার বিভাগীয় কমিটির অন্যতম সদস্য স্টিভ কোহেন বলেছেন, মাইকেল কোহেন যা বলেছেন, তার সত্যতা নিরূপণের জন্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ডাকা প্রয়োজন।

স্বাভাবিকভাবেই ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের এই চেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করছেন ট্রাম্প।

শনিবার সিপ্যাক নামে পরিচিত রক্ষণশীল রাজনৈতিক গ্রুপের সামনে ওয়াশিংটনে দুই ঘণ্টাব্যাপী এক ভাষণে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের কোনো প্রমাণ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছেন ডেমোক্র্যাটরা। এখন তাঁরা বিচারপ্রক্রিয়ায় বাধা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছেন।

ট্রাম্পের ভাষায়, এসব উইচ-হান্ট বা মিথ্যা ষড়যন্ত্র। নিজ সমর্থকদের আশ্বস্ত করতে ট্রাম্প বলেন, ডেমোক্র্যাটদের কোনো চেষ্টাই ফলপ্রসূ হবে না। কারণ, তারা (রিপাবলিকান) জিতেছেন, ডেমোক্র্যাট নয়।

অধিকাংশ ভাষ্যকার মনে করেন, মুখে যতই বড় বড় কথা ট্রাম্প বলছেন, কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাটরা যে হারে তদন্ত শুরু করেছেন, তা প্রেসিডেন্টের জন্য শিরপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। যত দিন রিপাবলিকান পার্টির হাতে কংগ্রেসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণ ছিল, তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে প্রেসিডেন্টকে আগলে রাখতে। কিন্তু গত নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের পর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের ভার চলে গেছে ডেমোক্র্যাটদের হাতে।

ট্রাম্প কতটা উদ্বিগ্ন, তা বেশ বোঝা যায় গতকাল রোববার ট্রাম্পের এক টুইট থেকে। এতে তিনি দাবি করেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ, একদল বাজে লোক আমার বিরুদ্ধে অবৈধ তদন্তে মেতে উঠেছে। আমার একমাত্র অপরাধ গত নির্বাচনে আমি জিতেছি।’

ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, তাঁর পরিবারের ব্যবসায়িক বিষয়ে নাক গলানো তিনি সহ্য করবেন না। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা ঠিক সেখানেই নাক গলানো শুরু করেছেন।

ট্রাম্পের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রধান আর্থিক ব্যবস্থাপক এলেন ওয়াইসালবার্গকে কংগ্রেসের সামনে সাক্ষ্য দিতে ইতিমধ্যে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। একটি জার্মান ব্যাংকের মাধ্যমে ট্রাম্প অর্থ পাচারে জড়িত থাকতে পারেন—এই সন্দেহে ব্যাংকের নথিপত্র তলব করা হয়েছে।

জেরি ন্যাডলার বলেছেন, আমেরিকার শাসনব্যবস্থার ভিত্তি হলো আইন। ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউস সেই ব্যবস্থার ওপর হাত দিয়েছেন। আইনের শাসনের ওপর হুমকির প্রমাণও তাঁরা পেয়েছেন।

তবে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের কোনো উদ্যোগ নেওয়ার ব্যাপারে ডেমোক্র্যাটরা এখনো প্রস্তুত নন। গতকাল এক টিভি সাক্ষাৎকারে ন্যাডলার বলেন, ‘অভিশংসন থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে।’