নিউইয়র্কে খুনের হার বাড়ছে

নিউইয়র্ক নগরে খুনের ঘটনা বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় খুনের ঘটনার হার বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। ৪ মার্চ নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ (এনওয়াইপিডি) এ তথ্য জানায়।
এনওয়াইপিডি কর্মকর্তারা বলেন, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে নিউইয়র্ক নগরে ৫২টি হত্যাকাণ্ড হয়েছে। গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৩৮। এ হিসেবে চলতি বছরে নিউইয়র্ক নগরে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৭ শতাংশ বেড়েছে।

এর মধ্যে শুধু ফেব্রুয়ারিতেই হয়েছে ২৬টি হত্যাকাণ্ড। আগের বছরের ফেব্রুয়ারিতে মাত্র ১৬টি হত্যাকাণ্ড হয়েছিল এই নগরে।
এ বিষয়ে এনওয়াইপিডির অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কৌশল বিভাগের প্রধান লরি পোলক নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজকে বলেন, ‘নিউইয়র্কের কিছু অঞ্চলে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর মধ্যে ব্রুকলিন নর্থ অন্যতম, যেখানে চলতি বছর ১৫টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। অঞ্চলটিতে মাদক ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো বেশ তৎপর। অথচ এই অঞ্চলেই গত বছরের একই সময়ে পাঁচটি হত্যাকাণ্ড হয়েছিল।
৪ মার্চ ম্যানহাটনে এনওয়াইপিডি সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক নগরের এ অপরাধের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এ সময় সংবাদ সম্মেলনের পশ্চাৎপটে চিরপরিচিত ‘আমেরিকার নিরাপদতম নগরী’ লেখাটির বদলে লেখা ছিল ‘দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’। এই পরিবর্তনই বলে দেয়, এনওয়াইপিডির তালিকায় সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়া বিষয়টি সম্পর্কে, আর তা হলো হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের হার কমিয়ে আনা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোয় পুলিশ উপস্থিতি বাড়ানো হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনার জেমস ও’নিল। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি সব সময়ই বদলাতে থাকে। প্রতিটি এলাকারই নিজস্ব কিছু চরিত্র রয়েছে, যা আমলে নেওয়া প্রয়োজন। আমরা সব সময়ই চেষ্টা করি, সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে। এ ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
চলতি বছর নিউইয়র্ক নগরে ৫২টি হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি প্রাণঘাতী নয় এমন আরও ৯৩টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। নগরে ঘটে চলা হত্যা ও গোলাগুলির ঘটনা সামাল দিতে এনওয়াইপিডি চারটি প্রিসিংক্টে আরও আটজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ওয়াশিংটন হাইটস ও ইনউড অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৩৪ প্রিসিংক্ট, ক্যাসলভিউ ও সাউন্ডভিউ নিয়ে গঠিত ৪৩ প্রিসিংক্ট, বেডফোর্ড-স্টাইভস্যান্টে ৭৯ প্রিসিংক্ট ও ১১৩ প্রিসিংক্ট, যার আওতায় রয়েছে সেন্ট আলবানস, স্প্রিংফিল্ড গার্ডেনসসহ বেশ কিছু অঞ্চল। এসব অঞ্চলের চিহ্নিত অপরাধীদের ওপর বিশেষ নজর রাখা হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র থেকে তরুণদের দূরে রাখার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে এনওয়াইপিডি। আর যেসব তরুণ এরই মধ্যে এসব গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে, তাদের বের করে আনারও চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছে এনওয়াইপিডি। পুলিশ বিভাগের ভাষ্য, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে শর্তসাপেক্ষে মুক্তিপ্রাপ্ত অপরাধীদের সঙ্গে কাজ করা হবে, যাতে তারা আর অপরাধের সঙ্গে না জড়ায়। একই সঙ্গে অস্ত্র আইনে মামলা হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সে লক্ষ্যেও কাজ করা হবে।
লরি পোলক বলেন, ২০১৮ সালে নিউইয়র্কের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৬৬টি বন্দুক উদ্ধার করা হয়। পারিবারিক সহিংসতার তদন্ত করতে গিয়ে এসব অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। এখন এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আরও কঠোর নজরদারির আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
অবশ্য নিউইয়র্ক নগরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বাড়লেও মোট হিসেবে অপরাধের হার কমেছে ১১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে অপরাধের হার আগের মাসের চেয়ে ১১ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে ডাকাতি, চুরির মতো অপরাধ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। তবে বেড়েছে ধর্ষণের হার। চলতি বছরের প্রথম দু মাসে নিউইয়র্কে ২৮৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ শতাংশ বেশি। গত বছরের প্রথম দুমাসে ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়েছিল ২৪০টি। অবশ্য পুলিশ বিভাগ বলছে, ‘মিটু’ আন্দোলনের কারণে এ ধরনের অভিযোগ বেশি জমা পড়ছে। একই সঙ্গে জাতিগত বৈষম্যমূলক অপরাধ বেড়েছে ৪০ দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে এ ধরনের অপরাধের শিকার হয়ে এনওয়াইপিডিতে অভিযোগ জমা পড়েছে ৬৬টি। আগের বছরের একই সময়ে এ ধরনের অপরাধ হয়েছিল ৪৭টি।