ট্রাম্পের অভিশংসনের বিপক্ষে পেলোসি

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি।

মার্কিন কংগ্রেসের ডেমোক্রেটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে হটানোর লক্ষ্যে তাঁর ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন সমর্থন করেন না।

গতকাল সোমবার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মত জানান পেলোসি।

পেলোসি বলেন, ‘অভিশংসন দেশকে বিভক্ত করবে। সত্যি সত্যি বড় ধরনের অনিয়ম বা বেআইনি কাজ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এবং উভয় দলের কাছ থেকে উদ্যোগ না আসা পর্যন্ত আমাদের অভিশংসনের পথ অনুসরণ করা ঠিক হবে না।’

পেলোসি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার কোনো মানে হয় না। এতটা গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য তিনি নন।’

ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার ব্যাপারে পেলোসি আগেও একাধিকবার তাঁর অনাগ্রহের কথা জানিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের গোপন আঁতাত তদন্তরত বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারের প্রতিবেদন প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট মন্তব্য করতে চাননি তিনি। তবে এবারই তিনি অভিশংসনের বিরোধিতা করে তাঁর অবস্থান খোলাসা করলেন।

অভিশংসনের ব্যাপারে ডেমোক্রেটিক পার্টির অভ্যন্তরে যে বিভক্ত রয়েছে, পেলোসির মন্তব্য তা আরও প্রকট করবে।

গত নভেম্বরে বিজয়ী হয়েছেন—এমন কংগ্রেস সদস্যদের অনেকেই অবিলম্বে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের পক্ষে।

মিশিগান থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য রাশিদা তালিব ইতিমধ্যেই এ উদ্দেশ্যে একটি খসড়া প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে উত্থাপনের কথা বলেছেন।

দলের একাধিক সদস্য মনে করেন, এই প্রস্তাবের পক্ষে প্রতিনিধি পরিষদে পর্যাপ্ত সমর্থন রয়েছে।

রোড আইল্যান্ড থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান ডেভিড সিসিলিনে মনে করেন, অভিশংসনের দরজা বন্ধ করা ঠিক হবে না।

কংগ্রেসম্যান ডেভিড সিসিলিনে বলেন, যদি এ কথা প্রমাণিত হয়, ট্রাম্প আইন ভঙ্গ করেছেন, তাহলে অবশ্যই অভিশংসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ম্যারিল্যান্ড থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান জেইমি রাসকিন বলেছেন, ট্রাম্প কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ব্যাপার নয়। প্রজাতন্ত্রের জন্য তাঁর অভিশংসন গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয়।

নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের ধারণা, অভিশংসনের ব্যাপারে পেলোসির অবস্থান বাস্তবতা দ্বারা পরিচালিত। দেশের ভেতরে এই ব্যবস্থার পক্ষে পর্যাপ্ত সমর্থন নেই। তা ছাড়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনপ্রক্রিয়া শুরু হলে তাঁর সমর্থকেরা আরও উজ্জীবিত হবেন, যার প্রভাব পড়বে ২০২০ সালের নির্বাচনে।

প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্রেটিক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই প্রস্তাব হয়তো গৃহীত হবে। কিন্তু রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত সিনেটে তা গৃহীত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই প্রস্তাব পাশের জন্য সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন দরকার।

১৯৯৮ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু সিনেটে তা প্রত্যাখ্যাত হয়।

ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া একই সাক্ষাৎকারে পেলোসি ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার অযোগ্য বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘বর্ণবাদী ও অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের কারণে কারও কারও হয়তো ট্রাম্পকে পছন্দ হতে পারে। কিন্তু এ কথা ভুললে চলবে না, এই প্রেসিডেন্ট চান না, আমাদের শিশুরা বিশুদ্ধ বায়ু গ্রহণ করুক। অথবা তারা বিশুদ্ধ পানি পান করুক বা বিশুদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুক। আমাদের দায়িত্ব হলো এসব জরুরি কাজের জন্য প্রতিদিন লড়াই চালিয়ে যাওয়া।’

পেলোসির মন্তব্য থেকে স্পষ্ট, আপাতত তিনি অভিশংসনের বিষয়টি এড়িয়ে ট্রাম্পের অধিক বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধে মনোযোগ দিতে চান। তাঁর জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে দলের বিভিন্ন উপশাখাকে এই এজেন্ডার পেছনে ঐক্যবদ্ধ রাখা।