নেতানিয়াহুকে 'নির্বাচনী উপহার' ট্রাম্পের

ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রয়টার্স ফাইল ছবি
ডোনাল্ড ট্রাম্প, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রয়টার্স ফাইল ছবি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার টুইটারের মাধ্যমে এক বার্তায় বলেছেন, গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এসেছে। পরে ফক্স টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন ধরেই ভাবছিলেন। সব প্রেসিডেন্টই বলে এসেছেন, করছি, করব। কিন্তু কাজটা একমাত্র তিনিই করে দেখালেন। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য একটি নির্বাচনী উপহার হিসেবে বর্ণনা করছেন বিশ্লেষকেরা।

১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর সঙ্গে ছয় দিন স্থায়ী এক যুদ্ধের পর ইসরায়েল পশ্চিম তীর ও গাজায় ফিলিস্তিনি ভূমি ছাড়াও সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত গোলান মালভূমি নিজ দখলে নিয়ে আসে। সিরিয়া ও লেবাননের ওপর নজর রাখার জন্য সেটি দ্রুত ইসরায়েলের একটি প্রধান সামরিক ঘাঁটি হয়ে ওঠে।

১৯৮১ সালে মালভূমিটি ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে নিজের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। জাতিসংঘসহ বিশ্বের কোনো দেশই এত দিন এই অন্তর্ভুক্তির স্বীকৃতি দেয়নি। কোনো মার্কিন প্রশাসনও গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের অধিগ্রহণ মেনে নেয়নি। ইসরায়েলের সেই সিদ্ধান্তে রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসন এতটাই ক্ষিপ্ত হয় যে, তারা এর আগে স্বাক্ষরিত একটি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্থগিত ঘোষণা করে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টিকে তাঁর একটি প্রধান বৈদেশিক নীতি হিসেবে অনুসরণ করে আসছেন। এই কৌশলের অংশ হিসেবেই গত বছর তিনি আন্তর্জাতিক আইন অগ্রাহ্য করে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

গোলান মালভূমির প্রতি মার্কিন স্বীকৃতির পর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আবারও ইতিহাস সৃষ্টি করলেন। আগামী সপ্তাহে তিনি ওয়াশিংটন আসছেন। সেখানে তিনি ট্রাম্পকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পাবেন।

অধিকাংশ ভাষ্যকার ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে নেতানিয়াহুর জন্য একটি নির্বাচনী উপহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আগামী ৯ এপ্রিল ইসরায়েলে জাতীয় নির্বাচন। ইসরায়েলি দৈনিক ‘হারেৎস’ লিখেছে, একাধিক দুর্নীতি মামলায় জড়িয়ে পড়ায় এই নির্বাচনে নেতানিয়াহুর বিজয় নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর তিনি অবশ্য হাঁপ ছেড়ে বাঁচবেন।

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে মার্কিন স্বীকৃতিতে সে দেশের সব নাগরিকই আনন্দিত। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও স্বীকার করতে হবে, ট্রাম্প-নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলেই এই উপহার এসেছে।

পত্রিকাটি অবশ্য এ কথাও উল্লেখ করেছে, অর্ধশতক ধরে গোলান ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ট্রাম্পের ঘোষণায় বাস্তব ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আসবে না। অথবা আমেরিকার প্রতি অনুগত দু-একটি দেশ ছাড়া এই ভূমির ওপর ইসরায়েলি সার্বভৌমত্বের কোনো স্বীকৃতি আসবে না। বরং উল্টো, এখন সবাই এই সিদ্ধান্তের সূত্র ধরে ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণকে অবৈধ বিবেচনা করে তার সমালোচনা শুরু করবে।

আরেকটি সমস্যার কথা বলেছেন ডেনিস রস নামের এক ভদ্রলোক। তিনি একাধিক মার্কিন প্রশাসনের অধীনে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার একটি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনার উদ্যোগ নিয়েছেন—এ কথা উল্লেখ করে ডেনিস রস বলেন, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের ফলে সেই উদ্যোগে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হবে। ফিলিস্তিনসহ অন্য আরব দেশের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে শান্তি আলোচনায় অংশগ্রহণ সম্ভব হবে না বলে তিনি মনে করেন।

ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের অন্যতম মুখপাত্র সায়েব এরেকাত এই সিদ্ধান্তের সমালোচনায় বলেছেন, এর ফলে আগামী দিনগুলোতে এই অঞ্চল আরও অশান্ত হয়ে উঠবে।

আরব লিগ এক বিবৃতিতে এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে অবশ্য রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের নেতারাই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘চমৎকার, খুবই চমৎকার একটি সিদ্ধান্ত।’