মুসলিমদের জন্য নিরাপদ নিউইয়র্ক

কথায় বলে জগৎ বৈচিত্র্যময়। সপ্রাণ পৃথিবীর সর্বত্র বৈচিত্র্যই সত্য হয়ে ওঠে। একে একমুখী করতে গেলে অঘটন অবশ্যম্ভাবী। এমন বহু নজির আছে। সর্বশেষ নজির নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক ঘটনা।
মাত্র একজন ব্যক্তি, আর আগ্নেয়াস্ত্র। স্থানীয় আল নুর মসজিদে ঢুকে ব্রেনটন টারান্ট নামের ওই অস্ত্রধারী ব্যক্তির হামলায় ৫০ জন মুসলমান নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন প্রায় সমসংখ্যক মুসলমান। হামলার যুক্তি হিসেবে ওই ব্যক্তি যা প্রচার করেছে, সেখানে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারণা ছাড়া আর কিছু নেই। ওই ব্যক্তি জনমিতির কথা বলেছেন। মুসলমানদের তিনি ‘দখলদার’, ‘হামলাকারী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। আর এ কারণেই শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদী ধারণা থেকে তিনি ‘শ্বেতভূমি’ পুনরুদ্ধারে নেমেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আহডার্ন এই হামলাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে আখ্যা দিতে দেরি করেননি। সেখানকার মুসলমানদের আস্থা অর্জনে তাঁদের পাশে দাঁড়াতেও সম্ভাব্য সবকিছুই তিনি করেছেন এবং করছেন। কারণ জেসিন্ডা আহডার্ন জানেন ‘বৈচিত্র্যই সুন্দর, তাকে রক্ষা করতে হয়’।
‘বহুর মধ্যে ঐক্য উপলব্ধি, বিচিত্রের মধ্যে ঐক্যস্থাপন’, কবিগুরু বহু আগে এ কথা বলেছেন। এ তাঁর উপলব্ধি, যা এসেছে বাস্তবতা থেকেই। বিশ্বের আজ যা কিছু অর্জন, তা এ বৈচিত্র্যের ঐক্য থেকেই এসেছে। কোনো একক জাতি বা গোষ্ঠীর হাত ধরে বিশ্ব আজকের এ অবস্থানে আসেনি।
বিশ্ব শাসনের দায় নিজের কাঁধে তুলে নেওয়া আজকের যে আমেরিকা, তার দিকে তাকালেই এই বৈচিত্র্যই মুখ্য হয়ে ওঠে। বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষের মিলনকেন্দ্র এই আমেরিকা উৎকর্ষের শীর্ষে পৌঁছেছে এই বৈচিত্র্যকে ধারণ করতে পারার সামর্থ্যের জন্যই। নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যথাযথ অবস্থান নিতে দেরি করলেও তাই নিউইয়র্ক প্রশাসন কিন্তু বসে থাকেনি। তারা স্থানীয় মুসলিম কমিউনিটির আস্থা অর্জনে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে। আর এই নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে আস্থা অর্জনের পথে নিউইয়র্ক নগর প্রশাসন স্থানীয় প্রবাসী মুসলমানদের হাতে গড়ে ওঠা জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের (জেএমসি) সামনের ১৬৮ স্ট্রিটের একাংশের নাম ‘জেএমসি ওয়ে’ করেছে। একই সঙ্গে নিউইয়র্ক পুলিশের কমিশনার জেমস ও’ নিলসহ জনপ্রতিনিধিরা নিউইয়র্কের মুসলমানদের ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করেছেন। শুধু মুসলমানদের জন্যই নয় তাঁরা নিউইয়র্ক সব ধর্মের ও জাতির মানুষের জন্য নিরাপদ করে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ঘৃণার এই সময়ে এমন আশ্বাস প্রতিটি মানুষকে শক্তি জোগায়, যা জীবনের জলার পথে অন্যতম পাথেয়।
নিউইয়র্ক নগরী ও এর প্রশাসন নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর এই তড়িৎ উদ্যোগের মধ্য দিয়ে জানিয়ে দিল, ঘৃণার বিপরীতে মৈত্রীই একমাত্র ওষধি। ঘৃণায় তৈরি ক্ষত সারাতে এই মৈত্রীর কোনো বিকল্প নেই। শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশ, যেকোনো শহর নিউইয়র্কের এই উদাহরণকে অনুসরণ করতে পারে। কারণ যেকোনো ধরনের ঘৃণা, যেকোনো ধরনের উগ্রবাদ রুখতে বৈচিত্র্যের মিলিত শক্তির কোনো বিকল্প নেই। এর চেয়ে বড় কোনো ওষুধ নেই।