ট্রাম্পের ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কে হচ্ছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এখনো ১৯ মাস বাকি। কিন্তু ইতিমধ্যে চারদিকে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। রিপাবলিকান দলের পক্ষে ডোনাল্ড ট্রাম্পই যে প্রার্থী হচ্ছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ট্রাম্প নিজে অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তহবিল সংগ্রহের কাজেও ব্যস্ত রয়েছেন। এই কাজে সহায়তা করতে গত সপ্তাহে তাঁর ক্যাবিনেট থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসাবিষয়ক প্রশাসক লিন্ডা ম্যাকমোহন পদত্যাগ করেছেন। জানা গেছে, এখন থেকে তাঁর প্রধান দায়িত্ব হবে ট্রাম্পের জন্য তহবিল সংগ্রহ।

কিন্তু কে হচ্ছেন ট্রাম্পের ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী? ইতিমধ্যে এই দলের ডজনখানেক প্রথম ও মাঝারি সারির নেতা নিজেদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন। আরও ডজনখানেক প্রার্থিতা ঘোষণার জন্য সময় গুনছেন। তবে আলোচনায় রয়েছেন মাত্র তিন বা চারজন। তাঁদের অন্যতম হলেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। জনমত জরিপে তাঁদের দুজনেই যথাক্রমে ২৭ ও ২৫ শতাংশ দলীয় সমর্থকদের অনুমোদন পেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া রয়েছেন চার বা পাঁচজন নারী প্রার্থী, যাঁদের অন্যতম হলেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সিনেটর কমলা হ্যারিস।

স্টেসি আব্রামস, যিনি গত নির্বাচনে জর্জিয়ার গভর্নর পদে পরাস্ত হওয়া সত্ত্বেও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য সব মহলের নজর কাড়েন, তাঁর নামও সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর তালিকায় রয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্ব অবশ্য চাইছে, আব্রামস ২০২০ সালে জর্জিয়া থেকে সিনেটর পদে নির্বাচনে অংশ নিন।

তাঁদের সবাইকে ছাপিয়ে এই মুহূর্তে যাঁর নাম গণমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হলেন টেক্সাসের সাবেক কংগ্রেস সদস্য বেটো ও’রুরক, যাঁকে সবাই বেটো নামেই চেনে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি টেক্সাসের রক্ষণশীল সিনেটর টেড ক্রুজকে সামান্য ব্যবধানে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। তহবিল সংগ্রহে অভূতপূর্ব সাফল্যের কারণে সে সময় তিনি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এবারও বেটো তহবিল সংগ্রহে অন্য সবাইকে পেছনে ফেলেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হচ্ছেন, এই ঘোষণার প্রথম ২৪ ঘণ্টাতেই ৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ তাঁর নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সংগ্রহে সক্ষম হন তিনি। এর আগে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর ঘোষণার প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করে নজর কেড়েছিলেন। শুধু তহবিল সংগ্রহ নয়, মার্কিন মিডিয়া যেভাবে বেটোর প্রতিটি কথা গিলছে, তাতেও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। বস্তুত, তিন প্রধান পুরুষ প্রার্থী—বাইডেন, স্যান্ডার্স ও বেটো যতটা মিডিয়ার মনোযোগ পাচ্ছেন, কোনো নারী প্রার্থী তার ধারেকাছেও নেই। কেউ কেউ এটাকে একধরনের লিঙ্গবৈষম্য বলে অভিযোগ করেছেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তাঁরা কী নীতি অনুসরণ করবেন এবং ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁদের পার্থক্য কোথায়, সে কথা নির্দেশে পুরুষদের তুলনায় নারী প্রার্থীরা অবশ্য অনেক এগিয়ে। বার্নি স্যান্ডার্স ছাড়া অন্য কোনো পুরুষ প্রার্থীই নজর কাড়ার মতো কোনো কথা বলেননি।

অন্যদিকে সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন ও সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড নিজেদের দলের সবচেয়ে প্রগতিশীল এবং বামঘেঁষা প্রার্থী হিসেবে সামনে নিয়ে এসেছেন। তাঁরা সবার জন্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্য এবং আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণের দাবি তুলেছেন।

ডেমোক্রেটিক পার্টিতে এই মুহূর্তে নবাগত ও তরুণ নারী প্রার্থীরাই দলের এজেন্ডা নির্ণয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দলটিও অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অধিক বামঘেঁষা হয়ে পড়েছে। বাছাই পর্বের নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হবে দলের সবচেয়ে অনুগত ও সবচেয়ে বামঘেঁষা এসব সমর্থকের ভোটে। অনেকেই বলছেন, বাছাই পর্বে জিতলেও চূড়ান্ত নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারানো এঁদের কারও পক্ষে সম্ভব না–ও হতে পারে। কারণ, দেশের অধিকাংশ ভোটার এখনো মধ্যপন্থী।

ঠিক এই কারণেই জো বাইডেনের কথা ভাবছেন নিরপেক্ষ অধিকাংশ ভাষ্যকার। অধিকাংশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রশ্নে তিনি মধ্যপন্থী হিসেবেই পরিচিত। ওবামার সুযোগ্য সহকারী হিসেবে তিনি নিজেকে তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে আগ্রহী। তিনি কোনো এক সময় নিজ দলের এক নারী সহকর্মীকে যৌন-হেনস্তা করেছেন, এমন অভিযোগ সত্ত্বেও বাইডেন দলের মধ্যপন্থীদের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হয়েছেন। আদর্শগত বিশুদ্ধতা নয়, ট্রাম্পকে পরাস্ত করতে সবচেয়ে সক্ষম কে, ডেমোক্রেটিক সমর্থকেরা তার ভিত্তিতে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে বেছে নেবেন। এই বিচারে বাইডেন সম্ভবত অন্য সবার চেয়ে এক-দুই কদম এগিয়ে।

অধিকাংশ জরিপেই বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনের মতো ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও নারী ও অশ্বেতকায় ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। অথচ চলতি ধারা টিকে থাকলে কোনো নারী প্রার্থী নয়, দুই সত্তোরোর্ধ্ব শ্বেতকায় পুরুষই হয়তো নির্বাচনী লড়াইতে মুখোমুখি হবেন।