বৈধ অ-অভিবাসীর মাধ্যমে গ্রিনকার্ড

মার্কিন নাগরিকের স্বামী বা স্ত্রী যদি যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে থাকেন তবে তিনি একজন বৈধ নন-ইমিগ্রান্ট স্ট্যাটাস সম্পন্ন বা অবৈধ অভিবাসীও হতে পারেন।
বৈধ নন-ইমিগ্রান্ট স্ট্যাটাসের কয়েকটি উদাহরণ হলো—আই-২০ মেয়াদ আছে এমন অ্যাকাডেমিক স্টুডেন্ট (এফ ১) ভিসা অথবা ভকেশনাল স্টুডেন্ট (এম ১) ভিসা, ইউএসএতে আসার পরে ৯০ দিনের কম অতিবাহিত হয়েছে এমন বাগ্‌দত্তা (কে ১) ভিসা, মার্কিন নাগরিকের সঙ্গী/সঙ্গিনী (কে ৩) ভিসা, আই-৯৪ মেয়াদ আছে এমন বিজনেস/ভিজিট (বি ১/বি ২) ভিসা, সাংবাদিক (আই) ভিসা, শিল্পী (পি ৩) ভিসা, পারসন ইন স্পেশালিটি অকুপেশন (এইচ ১ বি) ভিসা, ট্রিটি ইনভেস্টর (ই ২) ভিসা, বিজ্ঞান/শিল্প/শিক্ষা/বাণিজ্য/অ্যাথলেটিকসে অসাধারণ দক্ষতার (ও) ভিসা, ইন্ট্রা কোম্পানি ট্রান্সফারি (এক ১ এ/এল ১ বি) ভিসা, ধর্মীয় কর্মী (আর ১), অপরাধী কর্মকাণ্ডে ভুক্তভোগী (ইউ) ভিসা ইত্যাদি।
অন্যদিকে অবৈধ অভিবাসী আবার দুই রকমের হতে পারে। কেউ যদি বৈধ ভিসা নিয়ে আমেরিকায় প্রবেশ করে কিন্তু থাকার অনুমোদিত মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পরও তিনি ওই দেশ ছাড়তে ব্যর্থ হয় তখন তাঁকে অবৈধ অভিবাসী বলা হয়। আবার কেউ যদি কোনো রকম ভিসা ছাড়া আমেরিকার সীমান্ত অতিক্রম করে আসেন তিনিও একজন অবৈধ অভিবাসী। এই তিন ধরনের (বৈধ নন-ইমিগ্রান্ট এবং দুই রকম অবৈধ অভিবাসী) ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমেরিকার নাগরিক বিয়ে করে তাঁর ওপর নির্ভর করে গ্রিনকার্ড পাওয়ার নিয়ম এক রকম নয়।
মার্কিন নাগরিক যদি কোনো বৈধ নন-ইমিগ্রান্টকে বিয়ে করেন, তাঁর ক্ষেত্রে গ্রিনকার্ড পেতে ফরম ব্যবহার করতে হবে সেগুলো হলো—আই-১৩০, পিটিশন ফর এলিয়েন রিলেটিভ। জমা দেওয়ার ফি ৫৩৫ ডলার; আই-১৩০এ, সাপ্লিমেন্টাল ইনফরমেশন ফর স্পাউস বেনিফিশিয়ারি। জমা দেওয়ার জন্য কোনো ফি নেই; আই-৪৮৫, অ্যাপ্লিকেশন টু রেজিস্টার পারমানেন্ট রেসিডেন্স অর অ্যাডজাস্ট স্ট্যাটাস। জমা দেওয়ার ফি এক হাজার ১৪০ ডলার; আই-৭৬৫, অ্যাপ্লিকেশন ফর এমপ্লয়মেন্ট অথোরাইজেশন। কোনো জমা ফি নেই; আই-৮৬৪, অ্যাফিডেভিট অব সাপোর্ট আন্ডার সেকশন ২১৩এ অফ আইএনএ। কোনো জমা ফি নেই; আই-৬৯৩, রিপোর্ট ফর মেডিকেল এক্সামিনেশন অ্যান্ড ভেক্সিনেশন রেকর্ড। কোনো জমা ফি নেই; জি-১১৪৫, ই-নোটিফিকেশন অব অ্যাপ্লিকেশন/পিটিশন অ্যাক্সেপটেন্স। কোনো জমা ফি নেই; বায়োমেট্রিকের জন্য কোনো আলাদা ফরম নেই কিন্তু ফি দিতে হবে ৮৫ ডলার।
সর্বমোট সরকারি ফি পরিশোধ করতে হচ্ছে এক হাজার ৭৬০ ডলার। এই সাতটি ফরম এক সঙ্গে জমা দেওয়াকে বলা হয় কনকারেন্ট ফাইলিং। যেহেতু মার্কিন নাগরিকের স্বামী বা স্ত্রীর গ্রিনকার্ড আবেদনের কোনো প্রায়োরিটি ডেট থাকে না অর্থাৎ এই ক্যাটাগরির গ্রিনকার্ড যেহেতু সব সময় অ্যাভেলেবল থাকে তাই এই কনকারেন্ট ফাইলিংয়ের সুবিধা ভোগ করা যায়।
এই ফরমগুলোর বাইরে অন্যান্য যেসব কাগজ জমা দিতে হবে সেগুলো হলো—ম্যারেজ সার্টিফিকেট, দুজনের জন্ম সনদ, বিয়ের ছবি, পারিবারিক ছবি, দুজনের ছয় কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জয়েন্ট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট, বসবাসের ঠিকানায় জয়েন্ট লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট অথবা জয়েন্ট ইউটিলিটি বিল, জয়েন্ট ট্যাক্স ফাইল (যদি থাকে), সন্তান থাকলে তার জন্ম সনদ, বিয়ের উদ্দেশ্য ও বর্তমান অবস্থা জানেন এমন একজন বা দুজন ব্যক্তি কর্তৃক প্রয়োজনীয়
সব তথ্যসহ অ্যাফিডেভিট, আগে
বিয়ে করলে তার ডিভোর্স বা ডেথ সার্টিফিকেট, মার্কিন নাগরিকত্বের
প্রমাণ হিসেবে ন্যাচারালাইজেশন সার্টিফিকেট/ সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট/ বার্থ সার্টিফিকেট/ আনএক্সপায়ার্ড ইউএস পাসপোর্টের কপি।
ফরমগুলো পূরণ করার জন্য ওপরে উল্লেখিত কাগজপত্রের বাইরেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের বাবা-মার জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান, সর্বশেষ পাঁচ বছরের ঠিকানা ও বসবাসের তারিখ, সর্বশেষ পাঁচ বছরের কর্মস্থলের ঠিকানা ও তারিখ, আবেদনকারীর সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, আবেদনকারী নিজে অথবা যিনি স্পনসর করবেন তাঁর পূর্ববর্তী তিন বছরের আইআরএস ট্রান্সক্রিপ্ট, পূর্ববর্তী তিন বছরের ফরম উব্লিউ-২ বা ফরম ১০৯৯-সহ ট্যাক্স রিটার্নের কপি, জব লেটার অথবা সমসাময়িক ছয় মাসের পে স্টাব, রিলেশনশিপ লেটার, সিটিজেনশিপ সার্টিফিকেট/ বার্থ সার্টিফিকেট/ আনএক্সপায়ার্ড ইউএস পাসপোর্ট/গ্রিনকার্ডের কপি, এখনো গ্রিনকার্ডধারী রয়েছেন এমন কতজনকে ইতিপূর্বে স্পনসর করেছেন সেই সংখ্যা, সেভিংস ও চেকিং অ্যাকাউন্টের ব্যালান্স, কোনো রিয়েল এস্টেট প্রোপার্টি থাকলে মর্টগেজ ঋণ বাদ দিয়ে ওই প্রোপার্টির নেট ভ্যালু ও লোকেশন, মালিকানা ও অ্যাকুইজিশনের কাগজ, ফোন নম্বর ও ইমেইল ঠিকানা, আবেদনকারী ব্যতীত অন্য কেউ স্পনসর করলে ওই ব্যক্তি যদি তাঁর স্পাউস বা অন্য কোনো হাউসহোল্ড মেম্বারের ইনকামসহ জয়েন্ট ট্যাক্স ফাইল করে থাকেন তবে সেই স্পাউস বা হাউসহোল্ড মেম্বারের পূরণ করা ‘ফরম আই-৮৬৪এ, কন্ট্রাক্ট বিটুইন স্পনসর অ্যান্ড হাউসহোল্ড মেম্বার’ প্রয়োজন হবে।

অ্যাপ্লিকেশনগুলো জমা দেওয়ার পরে যার জন্য আবেদন করা হয়েছে অর্থাৎ মার্কিন নাগরিকের স্বামী বা স্ত্রীকে নিকটস্থ অ্যাপ্লিকেশন সাপোর্ট সেন্টারে হাজির হয়ে হাতের ছাপ দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়ে জানানো হবে। সাধারণত আবেদনের পর ৯০ দিনের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়। সব আবেদনের ক্ষেত্রে ইন্টারভিউ প্রয়োজন নাও হতে পারে। যদি ইন্টারভিউ প্রয়োজন হয় তাহলেও চিঠি দিয়ে জানানো হবে। যদি ইন্টারভিউতে ডাকা হয় তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই আগে যেসব কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে সেগুলোর মূল কপি নিয়ে যেতে হবে। এরপর আবেদনের সময় থেকে সাত-আট মাস পরে লিখিতভাবে ফলাফল জানানো হবে। যদি আপনার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়, তাহলে সেই প্রত্যাখ্যানের চিঠি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে ফরম আই-২৯০বি, নোটিশ অব আপিল অর মোশন দাখিল করার মাধ্যমে আপিল অথবা রিওপেন ও রিকনসিডার করার জন্য মোশন করা যায়। গ্রিনকার্ড ইস্যু করার তারিখে যদি বিয়ের বয়স দুই বছরের কম হয় তবে পরবর্তী দুই বছরের জন্য কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড দেওয়া হবে। সেই কন্ডিশন রিমুভ করার জন্য গ্রিনকার্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ৫৯৫ ডলার ফিসহ ‘ফরম আই-৭৫১, পারমিট টু রিমুভ দ্য কন্ডিশনস অব রেসিডেন্স’ পূরণ করে এর সঙ্গে সন্তান থাকলে সন্তানের জন্ম সনদ, বাড়ি ভাড়ার যৌথ লিজ অ্যাগ্রিমেন্ট, যৌথ সেভিংস ও চেকিং অ্যাকাউন্ট, যৌথ ট্যাক্স রিটার্ন, জয়েন্ট ইউটিলিটি বিল এবং কন্ডিশনাল গ্রিনকার্ড পাওয়ার সময় থেকে আপনাদের বৈবাহিক সম্পর্কের বিষয়ে আবগত আছেন এমন দুজন ব্যক্তির অ্যাফিডেভিট জমা দিতে হবে।

(এই নিবন্ধ কোনোরকম আইনি পরামর্শ নয়। এটি কেবল ইউএসসিআইএস এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত তথ্যের সন্নিবেশ মাত্র)

লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্কপ্রবাসী
সেল: (৯২৯)৩৯১-৬০৪৭; ইমেইলঃ [email protected]