ট্রাম্পের সীমান্ত বন্ধের হুমকিতে শঙ্কিত সবাই

রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ঠেকাতে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে ঘন ঘন সীমান্ত অতিক্রমকারী কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৯ মার্চ দেওয়া এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে আমেরিকায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। মেক্সিকো সরকার এসব বন্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হবে।
২২ বছর বয়স্ক কলেজ শিক্ষার্থী অ্যান্ড্রু টোরেস আমেরিকার এল পাসো নগরীতে খালার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে। সপ্তাহের ছুটির দিন বাদে বাকি সময় ওই বাড়িতে থেকেই টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এই মার্কিন নাগরিক। সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে তিনি মেক্সিকোতে বসবাসকারী মা ক্লিওডেড জুরেজের কাছে যান। তাঁর মতো এমন হাজার হাজার শিক্ষার্থী প্রতি দিন সীমান্তের স্থায়ী সেতু দিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে। এভাবে নিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেন বহু কর্মজীবীও। কিন্তু ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণা এখন তাঁদের শঙ্কিত করে তুলেছে।
অ্যান্ড্রু টোরেস বলেন, ‘এখন এল পাসোতে থাকাটাই সমীচীন বলে মনে করছি। কারণ, আমাকে এ বছর স্কুল ফাইনাল শেষ করতে হবে। আমার পক্ষে আর মায়ের দেখাশোনা করা সহজ হবে না। সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় কে জানে।’
৩৮ বছর বয়স্ক আমেরিকান নাগরিক মেকানিক গিয়ার্ডো পজাজ ১৯৯৭ সালে আমেরিকার এল পাসোর একটি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এখন স্বাবলম্বী। দীর্ঘদিন আমেরিকায় থাকলেও জন্মভূমি মেক্সিকোর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রাখতে খুবই আগ্রহী তিনি। এ ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক ঘোষণা গিয়ার্ডোকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবার, উপাসনালয় ও প্রেম—সবই সীমান্তের ওপারের জুরেজ শহরে। অথচ আমি হয়তো ওখানে আর যেতেই পারব না।’
এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমেরিকা মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধ করে দিলে শুধু নিয়মিত সীমান্ত পাড়ি দেওয়া ব্যক্তিরাই সমস্যায় পড়বে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমেরিকার অর্থনীতিও। মার্কিন পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুসারে, গত বছর আমেরিকার সঙ্গে মেক্সিকোর মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। সীমান্ত বন্ধ হলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে এ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে।
কিন্তু এসব কিছুকেই আর ধর্তব্যে নিচ্ছে না ট্রাম্প প্রশাসন। রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ঠেকাতে তারা ব্যবসায়িক স্বার্থও জলাঞ্জলি দিতে যাচ্ছে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বারবার রিপোর্ট করে চলছেন যে, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তা করতে গিয়ে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটছে। কঠোর অভিবাসন নীতি গ্রহণ করা ট্রাম্প প্রশাসনও এই বক্তব্যকে অকাট্য হিসেবে গ্রহণ করে এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা শেষ পর্যন্ত আমেরিকার জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।