ট্যাক্স রিফান্ডে রাজ্য সরকারের কাণ্ড!

নিউইয়র্কে আপনাকে দৈনিক ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ধরে কাজ করতে হয়। সপ্তাহে পাঁচ দিনে গড়ে সে কাজের পরিমাণ ৪৫ ঘণ্টায় দাঁড়ায়। মাসে আপনার কাজের গড় প্রায় ১০০০ ঘণ্টা এবং বছরে প্রায় ১২,০০০ ঘণ্টা হয়। কিন্তু মাস শেষে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ফোন বিল ও বাজার খরচ দিয়ে সঞ্চয় করার মতো কিছুই থাকে না। কোনো ভাবে যদি দিন কেটে যায়! কখনো আবার আপনাকে সংসারের ব্যয় মেটাতে দুই বা তিনটি পর্যন্ত খণ্ডকালীন চাকরি করতে হয়। ফেডারেল সরকার, অঙ্গরাজ্য সরকার ও নগর সরকার হাজার হাজার ডলারের কর প্রতি সপ্তাহের আপনার বেতন থেকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সংসারের ব্যয় ও কর দিয় হাতে সঞ্চয় বলে কিছু থাকে না।
বছরের শেষে কর বিবরণী দাখিল করে কর ফেরতের (ট্যাক্স রিফান্ড) আশায় বুকের মধ্যে সঞ্চয়ের আশা জাগে। কিছু ডলার সঞ্চয় হলে বুঝি দেশে পাঠানো যাবে বা বাংলাদেশ থেকে ঘুরে আসা যাবে। কিন্তু কর প্রত্যর্পণের এই অর্থ না পেলে আপনার কেমন লাগবে। অধিকন্তু সেই অর্থ প্রদানে যদি নিউইয়র্কের মতো রাজ্য সরকার ছিনিমিনি খেলে তাহলে কী করবেন? এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। যুগ যুগ ধরে শাসকগোষ্ঠী এভাবেই শোষণ করে। সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এভাবেই ভঙ্গ করে আসছে রাজ্য সরকার।
এক দুর্ভাগা নাগরিকের নাম ডেভিড ইভান (৫৯)। সিবিএস নিউজকে তিনি বলেন, গত চার বছর ধরে তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য সরকার থেকে কোনো কর ফেরত পাচ্ছেন না। তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সরকারের থেকে তাঁর প্রাপ্য অর্থ কোথায় যাচ্ছে? তিনি নিজেই এর উৎস বের করবেন।
দুই বছর আগে তিনি জানতে পারেন যে, তার প্রাপ্য অর্থ নিউইয়র্ক সিটি ট্রানজিট অথোরিটির (এনওয়াইসিটিএ) কাছে যাচ্ছে। এনওয়াইসিটিএ নগরীর বাস ও ট্রেনের দায়িত্বে আছে। কিন্তু কেন তাঁর অর্থ এনওয়াইসিটিএর কাছে যাচ্ছে? কয়েক বার তাদের অফিসে ঘোরাঘুরি করে জানতে পারেন এনওয়াইসিটিএ ইভানের কাছে এক হাজার নয় শত ডলার পান। কীভাবে? তাকে নাকি ১৯৯৯-২০০৫ সালের মধ্যে ১০টি সিভিল ভায়োলেশন টিকিট দেওয়া হয়েছে।
প্রায় বিশ বছর আগের কথা! ইভানের মোটেও স্মরণে নেই সেই টিকিটগুলোর কথা। এনওয়াইসিটিএ’র ডেটাবেইসেও কোনো প্রমাণ মেলেনি।
“আমাকে কখনো এই টিকিটগুলো দেওয়া হয়নি। আমি তো শুনে অবাক। তারা আরও বলে টিকিটগুলো প্রমাণ চাইতে হলে আমাকে আরও ৪০০ ডলার ফি দিতে হবে”—বলেন ইভান।
আরেকজন দুর্ভাগা নাগরিক হলেন ন্যাথানিয়াল রবিনসন। তাঁর বেলায়ও ইভানের মতো ঘটনা। তিনিও কর প্রত্যর্পণের অর্থ পাননি। কারণ তাঁকে নাকি ১৯৯৭-২০০৩ সালে দুইটি টিকিট দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নেই। যখন তিনি এনওয়াইসিটিএ’র অফিসে গিয়ে ওই টিকিটগুলোর প্রমাণ চান। তারা বলেন তাঁকে প্রমাণ করতে হবে যে টিকিটের ব্যক্তিটি তিনি নন।
এই সমস্যাটি অনেক বিস্তর। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের কম্পট্রোলারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত এনওয়াইসিটিএর অপরিশোধিত টিকিটের ডলার মূল্য প্রায় ৩৮ কোটি ডলার। যেগুলো আস্তে আস্তে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে করপত্র দাখিল করার পর ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে।