শিক্ষাঋণ আমেরিকার জাতীয় সংকট

আমেরিকায় ব্যাপক হারে শিক্ষাঋণ বকেয়া পড়ে আছে। ২০২০ সালের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থীরা এই সংকট মোকাবিলার উপায় খুঁজছেন। রাজনৈতিক নেতারা এটিকে জাতীয় সংকট হিসেবে দেখছেন। তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছেন, এই শিক্ষাঋণ পরিশোধ করা কঠিন।
আমেরিকার ফেডারেল রিজার্ভের দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে শিক্ষাঋণের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ২০০ শতাংশ হারে বাড়ছে।
ডেমোক্র্যাট পার্টির বার্নি স্যান্ডার্স গত ১৪ মার্চ নর্থ ক্যারোলিনায় এক সমাবেশে বক্তৃতা করেন। সেখানে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য ডেমোক্রেটিক প্রার্থীরা ছাত্রঋণের সংকট মোকাবিলা নিয়ে আলোচনা করেন।

এঁদের মধ্যে এলিজাবেথ ওয়ারেন, কোরি বুকার, কমলা হ্যারিস, ক্রিস্টিন গিলিব্রান্ড ও তুলসি গাবার্ড এই বিষয়ে বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন করেন।
‘সবার জন্য কলেজ’—২০১৭ সালে বার্নি স্যান্ডারাসের প্রস্তাবিত কলেজ ঋণ বিষয়ক আইনি পরামর্শের কথা উল্লেখ করে সবাই তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। এই আইন পাস হলে ৪ হাজার ৭০০ ডলারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। পাবলিক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ফি ও শিক্ষানবিশ ফি বাতিল করা হবে। এটি শিক্ষার্থী ঋণের সুদের হার কমিয়ে দেবে। যারা এখন শিক্ষাঋণের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের ঋণ পুনঃতফসিল করার সুযোগ হবে।
হ্যারিস, বুকার, ওয়ারেন ও গিলিব্রেন্ডের মতো নেতারা ঋণমুক্ত কলেজ অ্যাক্টে স্বাক্ষর করেছেন, যা জীবনযাত্রার ব্যয় সামালের পাশাপাশি বই ও শিক্ষার ব্যয় সামাল দেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। সাউথ ক্যারোলিনার ডেমোক্র্যাট সদস্যরা আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনার স্বপ্ন দেখেন, যা কিনা ছাত্রদের আনুমানিক ৯ হাজার কোটি ডলারের শিক্ষাঋণ মওকুফ করবে।
২০০৬ সাল থেকে আমেরিকার কলেজের খারাপ ঋণের পরিমাণ ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এখন ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দেশব্যাপী প্রায় ৪ কোটি ৩০ লাখ শিক্ষাঋণ গ্রহীতা রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি বিধান চাপাতে চাচ্ছেন যা ছাত্রদের ফেডারেল এইডের সুবিধা কেড়ে নেবে। শিক্ষার্থীকে ঋণ থেকে অব্যাহতির পথ বন্ধ করে নিতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘শিক্ষাঋণের পরিমাণ ঠিক করার লক্ষ্যে আমি কাজ করতে যাচ্ছি, কারণ এখন যা ঘটছে তা ঠিক নয়। এভাবে ঋণ বাড়ানোর ন্যায্য অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি।’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আমি ঋণ নেওয়া যেমন ভালোবাসি, তেমনি আমি অন্যের অর্থ ফেরত দেওয়াও পছন্দ করি।’
তবে উল্টো মনোভাব ডেমোক্র্যাদের। তারা শিক্ষার্থীদের ঋণ সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধানের উপায় খুঁজছেন। কমলা হ্যারিস বলেন, ‘বেসরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করে তারা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে বিনা পরিকল্পনায় প্রতিশ্রুতিবিহীন চাকরির বাজারে ঢুকছে। শিক্ষাঋণের সংকট নিরসনে রাজনীতিকদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। ঋণমুক্ত কলেজ ও শিক্ষার্থীদের ঋণ পুনঃতফসিল করার জন্য একটি পদ্ধতি চালু করার প্রস্তাব করেন তাঁরা।
শিক্ষাঋণ মওকুপের কর্মসূচিতে কত ঋণ মওকুপ করা হবে তার ওপর আলোচনা চলছে। অনেকেই সবার জন্য বিনা মূল্যে চার বছরের কলেজ ফ্রি দিতে রাজি নয়, এর পরিবর্তে অনুদান বাড়ানোর পক্ষে। ফেডারেল সহযোগিতায় বিনা মূল্যে দুই বছরের কমিউনিটি কলেজ সবার উম্মুক্ত করার পক্ষে বলছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা।
প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতা সিনেটর কোরি বুকার সমস্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খোঁজা যেতে পারে। তাঁর প্রস্তাব হচ্ছে, আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেক শিশুর জন্য ১০০০ ডলারের একটি সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট করা। পরিবারের উপার্জনের ওপর নির্ভর করে প্রতি বছর ২০০০ ডলার অ্যাকাউন্টে যোগ করা হবে। শিশুটি ১৮ বছর পর উচ্চশিক্ষার ব্যয় মেটানো বা বাড়ি কিনতে ওই অর্থ পাবে।
এলিজাবেথ ওয়ারেন শিক্ষাঋণ সমস্যা ‘জরুরিভিত্তিক জাতীয়’ সমস্যা বলে উল্লেখ করেন। তিনি ঋণমুক্ত কলেজ ফর অল অ্যাক্টে স্বাক্ষর করে ঋণগ্রহীতাকে তাদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ করে দেওয়া চেষ্টা করেছেন বলে জানান।
জুলিয়ান কাস্ত্রো বলেন, কলেজের প্রথম দুই বছর সাশ্রয়ী মূল্যের একটি সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম চালুর ওপর তিনি জোর দিচ্ছেন। যাতে ঋণে না ডুবে শিক্ষার্থীরা ভালো কাজ পাওয়ার মতো দক্ষতা অর্জন করতে পারে।