নিউইয়র্কের স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা জারি

নিউইয়র্ক নগরীতে হাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ নগরীর ব্রুকলিন এলাকায় এই রোগের প্রকোপ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় নগরীর স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। একই সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে হামের টিকা গ্রহণের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এ সম্পর্কিত ঘোষণায় ডি ব্লাজিও বলেন, নগরীর ব্রুকলিন এলাকা, বিশেষত উইলিয়ামসবার্গ ও বরো পার্কে এ জরুরি অবস্থা পুরোপুরি জারি থাকবে। গত অক্টোবর থেকে এ দুই অঞ্চলেই হাম সংক্রমণের ২৮৫টি ঘটনা জানা গেছে। ঘোষণায় ব্লাজিও বলেন, ‘নিউইয়র্ক নগরীতে আমরা এ ভয়াবহ রোগকে আবার ফিরিয়ে আনতে পারি না। একে এখানেই বন্দ করতে হবে। আমরা বর্তমানে এমন এক পরিস্থিতিতে রয়েছি, যেখানে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।’
নগর প্রশাসনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোয় বসবাসকারী সব শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে টীকা নিতে হবে। তবে শারীরিক কোনো বিশেষ অবস্থার জন্য চিকিৎসকের নিষেধাজ্ঞা থাকলে টীকা না নিলেও চলবে। এ ধরনের কোনো নিষেধাজ্ঞা ছাড়া কেউ টীকা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে তিনি দোষী বলে সাব্যস্ত হবেন এবং তাঁকে অবশ্যই এ জন্য জরিমানা গুনতে হবে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক নগরীর ব্রুকলিনে টীকাবিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। বিশেষত ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় এ আন্দোলন ব্যাপক জোরালো ছিল। নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের তথ্যমতে, নগরীর ২ হাজার ৭০০ সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও টীকা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এ ক্ষেত্রে তারা ধর্মীয় ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাকে টীকা না গ্রহণের কারণ হিসেবে দেখিয়েছে। নগরীর শিক্ষা বিভাগের তথ্যমতে, নগরীতে বর্তমানে হামের টীকা নেয়নি এমন ২০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে।
হাম একটি সংক্রামক রোগ। এ থেকে নিউমোনিয়া, মস্তিষ্কের রোগ এনসিফালিটিস পর্যন্ত হতে পারে, যা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যুর কারণও হতে পারে। অথচ হাম-মামস-রুবেলা টীকা গ্রহণ করলে সহজেই এ রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) তথ্যমতে, এ টীকা ৯৭ শতাংশ ক্ষেত্রে কার্যকর। কিন্তু তারপরও নিউইয়র্কের ইহুদি সম্প্রদায় পরিচালিত স্কুলগুলো ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে এ টীকা গ্রহণে শিক্ষার্থীদের নিবৃত্ত করে, যা পরে অন্য স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থাতেই মেয়র কার্যালয় এ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।
এর একদিন আগে ৮ এপ্রিল নগরীর স্বাস্থ্য বিভাগ উইলিয়ামসবার্গের স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিল। তারা বলেছিল, যদি কেউ টীকা গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করে, তবে তাকে জরিমানা করা হবে। এবং সংশ্লিষ্ট স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে মেয়র ডি ব্লাজিও বলেন, ‘ব্রুকলিন থেকেই পুরো নগরীতে হাম ছড়িয়ে পড়ছে। এটি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা জরুরি। হামের টীকা কার্যকর। এটা নিরাপদ ও পরীক্ষিত।’
নিউইয়র্ক নগরীতে হামের টীকা নেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহায় বড় ভূমিকা রেখেছে এ সম্পর্কিত অবিশ্বাস। অনেকের দৃষ্টিতেই এই টীকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাপক ভ্রান্ত তথ্যও রয়েছে। নিউইয়র্ক নগরীকে এখন এই সবকিছুর সঙ্গেই লড়তে হচ্ছে। আপাতত প্রশাসনিকভাবে স্বাস্থ্য খাতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিষয়টি সামাল দেওয়া সম্ভব হলেও এ নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ না করলে সংকটের স্থায়ী নিরসন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।