এ দায় আমাদের মানতে হবে

ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইদুল হক সুমন ভাইকে সবাই এত ভালোবাসেন কেন? সারা বাংলাদেশে এত কম সময়ে কীভাবে তিনি এত জনপ্রিয়তা লাভ করলেন? এসব প্রশ্নের এক কথায় উত্তর দিতে হলে হয়তো বলতে হবে সম্ভবত তিনি কাউকে দোষারোপ না করে নিজে দায়িত্ব নিয়ে সবার উপকারে কাজ করতে ভালোবাসেন। একটা একটা করে অনেকগুলো সেতু নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে আমাদের নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হয়। আর সবকিছুর জন্য সরকারের অপেক্ষা করতে হয় না। আমরা কি তা করছি? না আমার দায়িত্ব নয় বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছি? দায়িত্ব নিতে হলে যে আমাদের যোগ্য হতে হবে, খুবই উচ্চ-শিক্ষা অর্জন করতে হবে তা কিন্তু নয়। ফাটা পাইপ থেকে পানি যাতে ছড়িয়ে পড়ে নষ্ট না হয় সে জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা নাইম কোনো উচ্চ-শিক্ষিত বালক নয়। কিন্তু তার আছে একটি সুন্দর মন ও মানুষকে পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার ন্যূনতম দায়িত্ববোধ।
এ রকম দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার উদাহরণ দিতে হলে আমার এ লেখা কখনোই শেষ হবে না। কাজেই আমি আর সেদিকে যাচ্ছি না। তবে, শুধু বলতে চাই আমাদের দায়িত্ব না নিলে কী হয়। দায়িত্ব না নিলে আমরা শুধু একে অন্যকে দোষারোপ করি। এক দল আরেক দলকে দোষারোপ করে। যেমনটি হচ্ছে প্রতিনিয়তই আমাদের দেশে। আর, তার ফলে ক্ষতি হচ্ছে আমাদেরই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের, আমাদের স্বপ্নের দেশ বাংলাদেশের। তার একটা সমাধান নিজে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই নিজে চাইলেও দায়িত্ব নেওয়া যায় না। সেই দায়িত্ব নিতে হয় দেশের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যেমন: পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস। বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টিকে জনপ্রিয় লেখক ও অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল রিখটার স্কেলে ৮মাত্রার ভূমিকম্পের মতো ভয়াবহ বললেও একটা সময় আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি স্বীকার করেনি। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বিষয়টিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে বলেছেন যে প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনো নতুন কিছু নয় এবং সেটা নাকি আগেও হতো। কথা হলো, আগে প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও যে এখনো হতে হবে- এটা কেমন কথা? সে যাই হোক, এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, একটি প্রশ্ন পুরোপুরি ও অন্যগুলো আংশিক ফাঁস হয়েছে। আশা করি, বিষয়টা এবার সমাধান হবে। কারণ নিজেকে তুলসী পাতার মতো নির্দোষ মনে করলে, দায় না নিলে কোনো সমস্যার সমাধান হয়য় না। আর এই পৃথিবীতে যে কোনো সমস্যা সমাধানের পূর্বশর্ত হচ্ছে সে সমস্যাটি স্বীকার করা, সমস্যাটি বোঝা ও দায় নেওয়া।
কীভাবে আমাদের এই দায় নিতে হবে? প্রশ্নটির এক কথায় উত্তর দিতে গেলে বলতে হবে নিজে নিজেই এই দায় নিতে হবে। কারণ এ দায় আমাদের সবার, দেশের সব মানুষের। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে ও দেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে এ রকম একটা দায় নিয়েছিলেন আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও লেখক তাজুল মোহাম্মদ। বাংলা একাডেমি পুরস্কার-২০০৫ প্রাপ্ত এই গবেষক একে একে চার দশক ধরে ৫৫টি মুক্তিযুদ্ধের বই লিখেছেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টার পেছনে এই কাজগুলো কী যথেষ্ট নয়? কীভাবে দায় নিতে হয় তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ দিতে হলে আমাকে বলতে হবে আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, “মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা মেয়েদের বাবা নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দাও। আর ঠিকানা দিয়ে দাও ধানমন্ডি ৩২ নম্বর...” এ দায় জাতির পিতা হিসেবে কি তাঁকে আরও মহান করে তোলেনি?
কাজেই জীবনে বড় হওয়ার জন্য, নিজ সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য দোষারোপ বন্ধ করুন। অন্যের দায়িত্ব বলে এড়িয়ে না গিয়ে নিজে দায়িত্ব নিন। কারণ এ দায় আপনার, আমার, সবার; এ দায় আমাদের, মানতে হবে।