প্রি-স্কুল পর্যায়ে অটিজমের হার নিউজার্সিতে সবচেয়ে বেশি

আমেরিকায় অটিজমের সর্বোচ্চ হার পাওয়া গেছে নিউজার্সির প্রি-স্কুল শিশুদের মধ্যে। রুটগার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ১২ এপ্রিল এ তথ্য জানিয়েছেন। এই অঙ্গরাজ্যের শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার এক দশকে তিনগুণ বেড়েছে।
নিউজার্সিতে ৩৫ জন শিশুর মধ্যে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চতুর্থ জন্মদিনে গিয়ে তাদের অটিজম ধরা পড়েছে। অটিজমের মাঝারি থেকে গুরুতর উপসর্গগুলো দেখা দেওয়ায় শিশু বিশেষজ্ঞ ও প্রি-স্কুল প্রতিষ্ঠানগুলোর মনোযোগ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। তখন তাদের আরও পরীক্ষা করতে বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুটি পাবলিক স্কুলে ভর্তির সময় অটিজম ধরা পড়ে।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, ২০১২ সালে জন্ম নেওয়া শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার শতকরা ৩ শতাংশ। ১৯৯২ সালে এ হার ছিল মাত্র এক শতাংশ। বিশেষজ্ঞা বলছেন, ‘অটিজমের হার যেভাবে বাড়ছে, তাতে একে উপেক্ষা করা যায় না।’
অটিজমের হার বাড়ায় স্কুল ডিস্ট্রিক্টগুলোতে অটিস্টিক শিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। ক্লিনিকগুলোয় এ সম্পর্কিত সেবাগ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। ফলে এ জন্য সেবাগ্রহীতাদের আগের চেয়ে লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। গবেষকেরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
হঠাৎ করে একটি নির্দিষ্ট প্রজন্মের মধ্যে অটিজমের হার বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। নিউজার্সি ও আশপাশের এলাকাতে কেন অটিজমের হার বেড়েছে, তা গবেষকেরা ব্যাখ্যা করতে পারছে না।
অটিজমের হার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে জেনেটিক মিউটেশনস ও জন্ম সম্পর্কিত ঝুঁকি, প্রিম্যাচিউরড হওয়া, একাধিক ভাইবোনের সঙ্গে জন্ম নেওয়া, গর্ভাবস্থায় অসুস্থ হওয়া বা ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক বাবা-মায়ের সন্তান হওয়া অটিজমের কারণ হতে পারে। কিন্তু সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে পরিবেশের কয়েকটি অচেনা বিষয়, যা বিশেষজ্ঞরা এখনো বের করতে পারেননি। গবেষকেরা জানান, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চার বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার ৪৩ শতাংশ বেড়েছে। নিউজার্সিতে প্রতি ২৩ জন শিশুর মধ্যে একটি শিশু অটিজমে আক্রান্ত।
অটিজম নিউজার্সির নির্বাহী পরিচালক সুজান বুকানন বলেন, ‘অটিজমে আক্রান্ত প্রতিটি শিশুর জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে তহবিল বৃদ্ধির জন্য আমাদের অবশ্যই দ্রুত ও পদ্ধতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে।’ প্রাথমিকভাবে এই প্রিস্কুলারদের জন্য পরিষেবাগুলো পরিবারগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়াটা জরুরি। তবে এ জন্য আগে শিশুটির অটিজম আছে কিনা, তা আগে শনাক্ত হওয়া জরুরি। তারপরই শুধু তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া সম্ভব। আর এই শনাক্ত হওয়ার ওপর তার শিক্ষা পদ্ধতিটিও নির্ভর করে।’
নিউজার্সিতে অটিস্টিক শিশুর হার বৃদ্ধির তথ্যটি আর্লি অটিজম ও ডেভেলপমেন্টাল ডিজেবেলিটি মনিটরিং নেটওয়ার্ক দ্বারা সাতটি রাষ্ট্রীয় গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত, যা ১৯ বছর ধরে অটিজম নির্ণয়ের হার পর্যবেক্ষণ করেছে। সব মিলিয়ে তারা অটিজম আছে এমন ১ হাজার ২০০ শিশুকে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে দেখা গেছে নিউজার্সিতে অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেশি। সাদা, কালো ও হিস্পানিক শিশুদের মধ্যে অটিজমের হার বাড়ছে বলেও গবেষণায় উঠে আসে। তবে শ্বেতাঙ্গ শিশুদের ক্ষেত্রে অটিজম তুলনামূলক আগে ধরা পড়ে। অন্যদের ক্ষেত্রে দেরিতে শনাক্ত হতে দেখা যায়। এমনকি ১৫ বছর বয়সেও অটিজম শনাক্ত হওয়ার মতো ঘটনা আছে। অটিজম যত আগে শনাক্ত হয়, তত ভালো—এমনটা বলে থাকেন চিকিৎসকেরা।