ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?
ওয়াশিংটনের সামরিক তৎপরতা দেখে অনেকেই এখন প্রশ্ন করছেন, যুক্তরাষ্ট্র কি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে?
মাত্র দুই দিন আগেই পেন্টাগন পারস্য উপসাগরের উদ্দেশে একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। লক্ষ্য—ইরানকে সাবধান করে দেওয়া।
হোয়াইট হাউস থেকে জানানো হয়, ইরান প্রতিবেশী ইরাকে অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পাঠাচ্ছে, যা সেখানে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও জার্মানিতে পূর্বনির্ধারিত সরকারি সফল বাতিল করে অত্যন্ত গোপনীয়তায় বাগদাদ সফর করেন।
ইরাকে মার্কিন সেনাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে পম্পেও ইরাকি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইরান একটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে মর্মে পম্পেও ইরাকি নেতাদের বিস্তারিত জানিয়েছেন।
বাগদাদে অনির্ধারিত সফর শেষে পম্পেও তাঁর সফরসঙ্গী সাংবাদিকদের জানান, ইরাকি নেতাদের তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, ইরানের ব্যাপারে তাঁদের হুঁশিয়ার হওয়া কেন প্রয়োজন।
পম্পেও ইরানের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে মিসর ও জর্ডানের সঙ্গে ইরাকের সহযোগিতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান।
ওয়াশিংটনের তৎপরতায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাদের প্রশ্ন, তবে কি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র?
ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন দীর্ঘদিন থেকেই ইরানে ‘সরকার পরিবর্তনের’ পক্ষে ওকালতি করে আসছেন।
‘জন বোল্টন প্রথম আঘাত হানতে ইরানকে উসকাচ্ছেন’ শিরোনামে ওয়াশিংটন পোস্টে ম্যাক্স বুটস লিখেছেন, গত বছরই বোল্টন ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন। সে সময় তাঁর কথায় পেন্টাগনে উদ্বেগের সঞ্চার হয়েছিল। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে এক ভিডিওবার্তায় তিনি ইরানি নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘অভিনন্দন। খুব বেশি দিন আর বিপ্লবের বার্ষিকী আপনাদের উদ্যাপন করতে হবে না।’
ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিলের পেছনেও বোল্টন ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে নতুন নিষেধাজ্ঞা ও ইরানের বিপ্লবী গার্ডকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত করার পেছনের ব্যক্তিটিও বোল্টন বলে পত্রিকাটি জানিয়েছে।
ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎস জানিয়েছে, গাজায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুধু সময়ের ব্যাপার।
জন বোল্টনের কথা উদ্ধৃত করে দৈনিক হারেৎস জানিয়েছে, পারস্য উপসাগরে বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের প্রতি এই হুঁশিয়ারি পৌঁছে দেওয়া যে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানলে যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
ইরাকে প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। মার্কিন সূত্রের দাবি, ইরান যে ইরাকের উদ্দেশে ব্যালিস্টিক মিসাইল পাঠাচ্ছে, তার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। ইরান-সমর্থিত বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া সেখানে তৎপর। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এই অস্ত্র মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে।
কেউ কেউ বলছেন, যে হুমকির কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই।
ডেইলি বিস্ট নামক ওয়েব পত্রিকা মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ইরানের তৎপরতার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে যুদ্ধজাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত ‘বাড়াবাড়ি’।
ওয়েব পত্রিকাটি অবশ্য বলেছে, মার্কিন সৈন্যদের ওপর হামলা করার ক্ষমতা ইরান-সমর্থিত ইরাকি সেনাদের রয়েছে।
ইরানের কোদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানির কথা উদ্ধৃত করে ওয়েব পত্রিকাটি বলেছে, শিগগিরই হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধতে চলেছে।