ইরানের জন্য আমেরিকার রণতরী প্রস্তুত

সুয়েজ খালে অবস্থান নেওয়া উড়োজাহাজভর্তি রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন। ছবি: রয়টার্স
সুয়েজ খালে অবস্থান নেওয়া উড়োজাহাজভর্তি রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন। ছবি: রয়টার্স

ইরানের সম্ভাব্য হামলার গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রণতরী নিয়ে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের হামলার জবাব দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে হরমুজ প্রণালিতে রণতরী পাঠাবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন নৌবাহিনীর বাহরাইনভিত্তিক নৌবহরের কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জিম ম্যালয়।

আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, রয়টার্সকে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে জিম ম্যালয় বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ইরানের তরফ থেকে ঝুঁকি দেখলেও প্রয়োজনে হরমুজ প্রণালিতে রণতরী পাঠাতে পিছপা হবে না। তবে তিনি জানাননি যে ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন নামের রণতরীটি ইরানের এই জলপথে কবে নাগাদ পাঠাবেন। গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালি তেল সরবরাহে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন ইরানকে সতর্কবার্তা দেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে এই নৌবহর মোতায়েন করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এই বহর লোহিত সাগরের সুয়েজ খালে অবস্থান নেয়। নৌবহরটি এখন জিম ম্যালয়ের নির্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। রয়টার্সের সঙ্গে টেলিফোনে ম্যালয় বলেন, ‘যদি প্রণালির ভেতর এটা (রণতরী) নেওয়ার প্রয়োজন হয়, আমি নেব। মধ্যপ্রাচ্যে এটি পরিচালনায় আমার কোনো দিক দিয়ে কোনো বাধা নেই, কোনো চ্যালেঞ্জ নেই।’

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শাখা দ্য ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং তেল রপ্তানিতে ইরানকে হটিয়ে দিতে দেশটির ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপে চাপ সৃষ্টি করেছে। ওই তালিকাভুক্ত করার পর এটাই কোনো গণমাধ্যমকে দেওয়া জিম ম্যালয়ের প্রথম সাক্ষাৎকার। ট্রাম্পের কিছু সমালোচকের মতে, হোয়াইট হাউস ইচ্ছে করে ইরানকে উত্তেজিত করছে। ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কায়নে বলেছেন, তিনি চিন্তিত যে ট্রাম্প প্রশাসন খামাখাই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এদিকে ইরানকে হুমকি উল্লেখ করে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইরান। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করা ছয়টি দেশের মধ্যে বছরখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক বিধি–নিষেধ আরোপ করে। এতে দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি হয়।

মার্কিন নৌবাহিনীর বাহরাইনভিত্তিক নৌবহরের কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জিম ম্যালয়। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন নৌবাহিনীর বাহরাইনভিত্তিক নৌবহরের কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল জিম ম্যালয়। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন জানিয়েছে, মার্কিন বাহিনীকে বা মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানার পরিকল্পনা ইরানের রয়েছে বলে তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আভাস দিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আব্রাহাম লিংকন রণতরী এবং বোমারু বিমান মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হয়েছে।

জিম ম্যালয় বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃত যে কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে, তার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থা সম্পৃক্ত। আর সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল...এটা বলার জন্য যে আমরা এটাকে হুমকি হিসেবে দেখেছি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর একটি পক্ষ আভাস দিয়েছে, ইরান জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে এগিয়েছে। ওই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোট জাহাজ থেকেও নিক্ষেপ করা যায় বলে মনে করা হচ্ছে। এর বাইরে ইরান–সমর্থিত ইরাকের শিয়া মিলিশিয়াদের কারণেও ঝুঁকি বাড়ছে।

জিম ম্যালয়ের বাহিনী ওই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর সুরক্ষায় সহায়তা দিচ্ছে। জিম ম্যালয় মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও তিনি নিশ্চিত করেন যে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু উদ্বেগ আছে। তিনি বলেন, এটা ইরানের প্রযুক্তির নতুন কোনো ক্ষেত্র হতে পারে।

যুদ্ধ চান না উল্লেখ করে গতকাল একই ধরনের বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী জাহাজগুলোর একটি রয়েছে আমাদের এবং তা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা কিছু করতে চাই না।’