ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের মানবেতর জীবন

ভেনেজুয়েলার অভিবাসী নাগরিকেরা কলম্বিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন
ভেনেজুয়েলার অভিবাসী নাগরিকেরা কলম্বিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন

কলম্বিয়াতে এই মুহূর্তে ১২ লাখের বেশি জেনেজুয়েলার নাগরিকের বাস। বছর শেষে এই সংখ্যা ২০ লাখ ছেড়ে যেতে পারে বলে কলম্বিয়ার সরকারের আভাস। কলম্বিয়াতে ভেনেজুয়েলার অভিবাসী জনসংখ্যার বৃদ্ধির মূল কারণ হচ্ছে দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক চরম মন্দাভাব।
কলম্বিয়ার অভিবাসী বিভাগের পরিচালক গত সপ্তাহে জনসম্মুখে নতুন তথ্য প্রকাশ করেন। এতে বলা আছে, বর্তমান ভেনেজুয়েলার নেতা নিকোলাস মাদুরো ক্ষমতায় থাকাকালে কলম্বিয়াতে ভেনেজুয়েলার অভিবাসী জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। অন্যদিকে জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য এবং ওষুধের অভাবে ভেনেজুয়েলা থেকে প্রায় ৩৪ লাখ মানুষ পালিয়েছে। মায়ামি হেরাল্ডের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে কলম্বিয়াতে ৭ লাখ ৭০ হাজার ৯৭৫ জন বৈধ ভেনেজুয়েলার অভিবাসী রয়েছে। বাকিরা সবাই অবৈধ বা যথার্থ কাগজপত্রহীন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভেনেজুয়েলার অসংখ্য অভিবাসী কলম্বিয়াতে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ৩৭ বছর বয়সী নারী মিলাগ্রোস জোসেপিনা জেরপা বলেন, বহু কষ্টে আছি এখানে। থাকা খাওয়ার কোনো জায়গা নেই। এখানে ভেনেজুয়েলার অসংখ্য মানুষ আছে। মাদুরোর কারণে সবাইকে দেশত্যাগ করে এখানে আসতে হয়েছে। তাঁর স্বামী প্যানক্রিয়াটিক রোগে হাসপাতালে জীবন নিয়ে লড়াই করছেন।
জেরপা মেদেয়িনের নামের আরেকজন রাস্তায় বিভিন্ন খেলা দেখান। এতে তাঁর খাওয়ার খরচও মেলে না। মাঝে মাঝে বিদেশি ভ্রমণকারীরা খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে কিছু অর্থ দেন। সেই অর্থ তিনি স্বামীর চিকিৎসায় ব্যয় করেন।
৪৩ বছর বয়সী অস্কার হিদালগো বলেন, আমার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমাকে পঙ্গু বলতে পারেন। আমি রাস্তায় চুইংগাম ও চকলেট বিক্রি করি। জেরপার সঙ্গে দেখা হয়। তাঁর কষ্ট সহ্য হয় না।
৩৯ বছর বয়সী ইলিয়ানি ফ্রান্সেস কে কারিরা। রাস্তার পাশে দুই বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। ভিক্ষা কেন করেন?—জবাবে ইলিয়ানি বলেন, আমার তো কাগজপত্র নেই।
ইলিয়ানি তাঁর দুই মেয়েসহ ভেনেজুয়েলা থেকে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, মানুষের কাছ থেকে দৈনন্দিন যা পান এতে চলে না। ভেনেজুয়েলায় তাঁর আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু গত দুই বছরে তাঁর পরিবার প্রায় সর্ব শান্ত হয়। বড় মেয়ে ২২ বছর বয়সী ডিয়ানা মেদেয়িনে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। ৪ মে মধ্যরাতে ক্যালে ১০ রাস্তার পাশে ৫৬ বছর বয়সী জেসিয়েল মাথিয়াসকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি বলেন, আমাদের কষ্টের কথা কেউ জানে না। কলম্বিয়াতে তারপরও তিনি অনেক সুখে আছেন। মাথিয়াস বলেন, বহুদিন না খেয়ে থেকেছি ভেনেজুয়েলায়।
এল পাবলাদো রাস্তায় ভেনেজুয়েলার অসংখ্য অভিবাসীদের দেখা যায় এদিক সেদিক ঘুরতে। বিশেষ করে সন্তান কাঁধে নিয়ে নারীদের ক্যান্ডি বিক্রি করতে দেখা যায়। ২৪ বছর বয়সী মারিনা গুটিরেজ নামের আরেকজন বলেন, আমার জানা সবাই এখন কলম্বিয়াতে। তাঁরা কলম্বিয়ার বিভিন্ন অংশে থাকেন। গত মার্চে তিনি বহু কষ্টে কলম্বিয়াতে আসেন। এখানে প্রতিদিন ঠিকমতো খেতে না পারলেও অন্তত মাঝে মাঝে কিছু খেতে পান। ভেনেজুয়েলাতে দিনের পর দিন কিছু না খেয়ে তাঁকে থাকতে হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলম্বিয়া পুলিশের দুই কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক মাসে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি লক্ষ্য করছি। এদের সাধারণত রাস্তার পাশে ভিক্ষা করতে, খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করতে এবং দেহব্যবসা করতে দেখা যায়।