প্রযুক্তি যখন রেস্তোরাঁ কর্মীদের শঙ্কিত করে

(দশম পর্ব) সানডে টেলিগ্রাফে ৪ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ অনাহারে থাকতে পারে—এমন আশঙ্কা করে কলকাতা থেকে পাঠানো ডেভিড লোসাকের একটি সংবাদ ছাপে যার শিরোনাম ছিল, ‘পূর্ব পাকিস্তানে মানুষের অনাহারে থাকার আশঙ্কা’ [Starvation threat to E.Pakistan]

সংবাদের সংক্ষেপরূপ এমন—
গত ১০ দিন ধরে গৃহযুদ্ধ ও বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অনাহারে থাকার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
একজন বাঙালি বলেছেন, এটি একটি গণযুদ্ধ, সেনাবাহিনীর সঙ্গে সব বাঙালি জাতির যুদ্ধ, সেনারা এখানে জিততে পারে না। এই মুহূর্তে সেনারা শহরগুলোর দখল নিলেও দীর্ঘমেয়াদে এই দখল রাখা সম্ভব হবে না বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
এই সংবাদটিতে সরবরাহের ঘাটতি মোকাবিলায় পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় মুদ্রা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়।
অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে নিউইয়র্ক টাইমস, ‘বাংলায় রক্তগঙ্গা’ [Bloodbath in Bengal] শিরোনামে আরেকটি সম্পাদকীয় ছাপে।
সংক্ষেপে এই সম্পাদকীয়টি বলা হয়—
বিচ্ছিন্নতাকামী পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি বাহিনীর নির্বিচারে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও নির্বাচিত নেতৃত্বকে অপসারণে জড়িত থাকার প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সত্ত্বেও ওয়াশিংটনের ক্রমবর্ধমান নীরবতা ধারণাতীত।
পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন প্রতিনিধি গতকাল স্বীকার করে বলেন, ‘যদি এই রকম কোন পরিস্থিতিতে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে, তবে আমরা উদ্বিগ্ন হব’। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমেরিকা এখন পর্যন্ত এ রকম কোন ঘটনা সরাসরি অবগত নয়। এটি কূটতর্ক। মাত্র গত মাসেই মার্কিন পররাষ্টমন্ত্রী বার্ষিক বৈদেশিক নীতিমালার প্রতিবেদনে বলেন, ‘এটি ইউএস-সজ্জিত আর্মি।’ যেকোনো ভিত্তিতেই হোক, আমেরিকার একটি মানবিক দায়িত্ব হলো বাংলায় এই রক্তগঙ্গার বিরুদ্ধে বলা, ইতিমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়ন যা করেছে। পাকিস্তানের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আমেরিকার দ্বিগুণ দায়িত্ব হলো, যুদ্ধ কৌশল হিসেবে এই সব এখনই বন্ধ করতে বলা এবং বর্বর এই দমন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ও খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ বন্ধ রাখা।
আমেরিকার নিজের স্বার্থেই অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করতে বলা উচিত। অন্যথায় ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে সাম্প্রদায়িক শত্রুতা ছড়িয়ে পড়তে পারে, আন্তর্জাতিক টানাপোড়েনও দেখা দিতে পারে।
১৪ এপ্রিল গার্ডিয়ান পত্রিকা একটি সম্পাদকীয় ছাপে যার শিরোনাম ছিল, ‘বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি ও বাস্তবতা” [Rhetoric and reality]
সংক্ষেপে সম্পাদকীয়টি হলো—
তিন সপ্তাহের রক্তপাতের পর পাকিস্তানি মিলিটারি এখন কোথায় দাঁড়িয়ে? ভাসা-ভাসাভাবে তাদের অগ্রগতি হয়েছে। এই বাহিনীকে পাঠানো হয়েছে শহর এলাকাকে চ্যাপ্টা করতে। ইয়াহিয়া খান শিগগিরই কঠোরভাবে সব শহরের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের কর্মীরা মৃত, বন্দী অথবা উপেক্ষণীয়। পাকিস্তান আতঙ্কগ্রস্ত।
কেউ সঠিকভাবে বলতে পারবে না, তিন সপ্তাহ আগে ইয়াহিয়ার কানে কী কৌশল ফিসফিস করছিল, তবে অনুমান করতে পারবে। প্রতীয়মান হয়, তারা মনে করেছিল মাথা কেটে ফেললেই বাঙালি জাতীয়তাবাদকে হত্যা করা যাবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক তার উল্টো। প্রতীয়মান হয়, তারা বিশ্ব জনমতের কথা ভুলে গিয়েছিল। তারা মনে হয় পাগলের মতো ভারতীয় সেনাবাহিনীকে উড়িয়ে দিয়েছিল, ভুলে গিয়েছিল অনিয়ন্ত্রিত সীমান্তের কথা, ভুলে গিয়েছিল কূটনীতিক জটিলতার কথা।
পুনরাবৃত্তি করা প্রয়োজন, বাংলাদেশ (বাংলা দেশ) বিষয়টি দ্বিতীয় বায়াফ্রা নয় অথবা দিল্লি ও রাওয়ালপিন্ডির বিবাদের ফল নয়, এর সৃষ্টি হয়েছে একটি শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর, যার ফল সেনারা কখনো মেনে নিতে পারেনি। এই ঘটনার পরিণতি হলো স্বাধীনতা।
নিউইয়র্ক টাইমস ১৩ এপ্রিল তাদের নয়াদিল্লি সংবাদদাতা সিডনি এইচ সেনবার্গের ভারতের আগরতলা থেকে পাঠানো একটি বড় আকারের প্রতিবেদন ছাপে যেখানে তিনটি বড় আকারের ছবি ছিল। এই সংবাদদাতা চারদিন বাংলাদেশে ঘুরে এসে এই প্রতিবেদন তৈরি করেন। সংবাদটির শিরোনাম ছিল ‘রক্তপাতের মধ্যে বাঙালিরা মন্ত্রিসভা গঠন করেছে’ [Bengalis form cabinet as the bloodshed goes on]

সংবাদটি সংক্ষেপে এরকম—
পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা আন্দোলনে যদিও অনেক নেতাই নিহত হয়েছেন এবং ব্যাপক মাত্রায় রক্তপাত চলছে, এর মধ্যেও আন্দোলনের নেতারা যাঁরা জীবিত আছেন, তাঁরা মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন।
তাঁরা শেখ মুজিবুর রহমানের সহকারী তাজউদ্দীনকে প্রধান করে মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন। এই সংবাদদাতা কমপক্ষে ছয়জন নেতার সঙ্গে দেখা করেন। তারা নতুন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমদকে মনোনীত করেন। শেখ মুজিবকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ইশতেহার প্রকাশ করেন, যদিও শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী।

প্রতিদিন যুদ্ধের সংবাদ
প্রতিদিন যুদ্ধের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। দলে দলে শরণার্থী তাদের বাক্স ও সুটকেস নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে সাময়িক আশ্রয়ের জন্য ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করছে। এই প্রতিবেদক দেখতে পান, পাকিস্তানি সেনারা কুমিল্লার বহু গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
সেনারা বোমাবর্ষণ করে খাদ্য সরবরাহ, চা কারখানা, পাটকল ও প্রাকৃতিক গ্যাস ক্ষেত্র ধ্বংস করেছে। ভারতে পালিয়ে আসা একটি চা বাগানের একজন স্কটিশ ব্যবস্থাপক বলেছেন, ‘তারা দেশটিকে ২৫ বছর পিছিয়ে দিল। মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের ঠেকাতে ব্রিজ, কালভার্ট, রেললাইন, রাস্তা উড়িয়ে দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হলেও তাদের গোড়া থেকে শুরু করতে হবে।’ সেই ব্যবস্থাপকসহ আরও দুজন উপব্যবস্থাপক যারা পালিয়ে এসেছেন, তারা তাদের নাম জানাতে অস্বীকার করেন। কারণ তাদের পরিবার তখনো বাংলাদেশে অবস্থান করছিল।
সেই তিনজন বলেন, ভারত থেকে আসা নয় ট্রাকের অস্ত্র ও গোলাবারুদ ধ্বংসের পাকিস্তানি রেডিওর খবর আসলে সঠিক নয়। এগুলো ছিল চা বাগানের খালি ট্রাক।
এই প্রতিবেদক সীমান্তে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কথা বলেন। তিনি দেখতে পান, তাদের অস্ত্র, গোলাবারুদ, যানবাহন ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র অভাব। এমনকি মুক্তিবাহিনীর সদস্যদের খালি পায়ে দেখতে পান। মুক্তিবাহিনীর কাছে তিনি সবচেয়ে ভারী যে অস্ত্রটি দেখতে পান, তা ছিল ৩ ইঞ্চি মর্টার। যদিও তারা পাকিস্তান বাহিনীর কাছ থেকে বেশ কিছু ভারী অস্ত্র দখল করেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে পালিয়ে আসা একজন সেকেন্ড লেফটেন্যান্টের সঙ্গেও কথা বলেন। এই প্রতিবেদক গেরিলা কমান্ডার ৩২ বছর বয়সী মেজর খালেদ মোশাররফের সঙ্গে কথা বলেন। তার সঙ্গে ১০ জন ছিল, যাদের কাজ ছিল পাকিস্তানি সেনাদের হয়রানি করা। এই প্রতিবেদক তার দলের সঙ্গে যান ও দেখতে পান, তারা ধান খেতকে ব্যবহার করে পাকিস্তানি সেনাদের খুব কাছ থেকে আক্রমণ করেন। প্রায় ২০ মিনিট গোলাগুলি চলে, এরপর বাঙালিরা নিরাপদ স্থানে চলে আসে। পাকিস্তান বাহিনী প্রথম পর্বে সাফল্য পেলেও বাঙালিরা অপেক্ষা করছে বর্ষার জন্য, যা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই শুরু হবে।
বাংলাদেশের চারদিকে জালের মতো নদী। একজন বাঙালি সৈন্য এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমরা বর্ষায় জন্য অপেক্ষা করছি, ওই সময় তারা ভারী অস্ত্র নিয়ে কোথায়ও যেতে পারবে না। পাঞ্জাবিরা শুকনা এলাকার মানুষ, এরা পানিকে ভয় পায়।’ এই প্রতিবেদককে অনেকেই প্রশ্ন করেন, কেন আমেরিকা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা প্রতিবেদকের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে। প্রতিবেদক সীমান্তে একজন প্রকৌশলীকে দেখতে পান যিনি সবে মাত্র সীমান্ত পেরিয়ে স্ত্রী ও পুত্রকে নিয়ে ভারতে এসেছেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ঘটনাকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ভারতের আগরতলা থেকে নিউইয়র্ক টাইমস–এর বিশেষ প্রতিনিধি সিডনি এইচ সেনবার্গ আরেকটি প্রতিবেদন পাঠান যা ছাপা হয় ১৩ এপ্রিল। শিরোনাম ছিল, ‘অবরুদ্ধ এক বাঙালি কর্মকর্তার আতঙ্কের কয়েক ঘণ্টা’ [Hours of Terror for a trapped Bengali officer] ।
একজন বীর বাঙালি সামরিক কর্মকর্তা যিনি কুমিল্লা সেনানিবাসে বন্দী অবস্থায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন এটি তাঁর সাক্ষাৎকার। কর্মকর্তাটি প্রতিবেদককে তার নাম বলেছিলেন ‘দবির’ যা তার আসল নাম নয়। পদবি সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট।
সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদনটি এমন—
২৫ মার্চ রাত, দবির স্মরণ করে বলেন, তিনি ও তাঁর দুই সহকর্মী পূর্ব পাকিস্তানের অফিসার ৫৩ ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে শুনতে পান, তাদের কমান্ডার পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারদের ডেকে বলছেন—
‘তোমরা সবাই এখন শহরে যাবে এবং সকালের মধ্যে আমরা দেখতে চাই, কুমিল্লা লাশে পরিপূর্ণ। যদি কেউ এই আদেশ অমান্য করে, তার ক্ষমা নেই।’
দবির বললেন, তিনি ও আরও দুই বাঙালি কর্মকর্তাকে পাঁচ দিন গৃহবন্দী করে রাখার পর ৩০ মার্চ শেষ বিকেলে তাদের হত্যার জন্য একজন পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাকে তাদের কক্ষে পাঠান হয়। কিন্তু দাবির আহত অবস্থায় মৃত্যুর ভান করে সেখান থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন।
তিনি এখন বাংলাদেশর জন্য যুদ্ধ করতে বাঙালি বাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। বাঙালিরা এখন পূর্ব পাকিস্তানের যে নাম দিয়েছে তা হলো ‘বাংলাদেশ’।
যে দিন স্বাধীনতা আন্দোলনকারীদের ধ্বংস করতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা নেমেছে, সেই দিন রাতেই তারা বাঙালি সৈন্যদের হত্যা করা শুরু করে।
সুঠাম দেহের ২০ বছর বয়সী সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট দবির অবিবাহিত। তিনি এই প্রতিবেদককে পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্ত পোস্টে সেই রাত ও তার পরবর্তী সময়ের কথা বলছিলেন। দবির তার আসল নাম নয়, তিনি এই ছদ্ম নাম ব্যবহার করতে অনুরোধ করেন। কারণ দেশে তার পরিবারে বাবা–মা, এক ভাই আর তিন বোন হয়তো এখনো জীবিত।
অত্যন্ত ধীর ও নিচু স্বরে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন—
কমান্ডার চলে যাওয়ার পর সব কর্মকর্তা অস্ত্রাগারে গেলেও বাঙালি কর্মকর্তাদের ডেকে গৃহবন্দী করা হয়, যদিও কমান্ডার বলেছিল তাদের অফিসের কাজ দেওয়া হবে। কমান্ডারের অফিসের পাশের কক্ষে তাদের রাখা হয়। রাতে দবির ঘুমাতে পারেননি। রাত ১টার দিকে কম্পাউন্ডের মধ্যই ৭–৮ রাউন্ড গুলির শব্দ হয়। পরবর্তী তিন দিন দবির ও দুজন ক্যাপ্টেন, টেলিফোনে উত্তর দেন ও কাগজ-পত্র গোছান। তারা জানালা দিয়ে দেখতে পান, রেজিমেন্টের প্রায় ৬০ জন বাঙালি সৈন্যকে হাত ওপরে উঠিয়ে ভবনের পেছনে নেওয়া হয় এবং এরপর তারা একটানা গুলির শব্দ শুনতে পান। তাঁর ধারনা, তাদের হত্যা করা হয়েছে। তাদের একটি কক্ষে তালা বদ্ধ করে রাখা হয়।
৩০ মার্চ বিকেলে পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তা মেশিনগানের নল দিয়ে জানালার কাচ ভেঙে ভেতরে গুলি চালায়, দুজন ক্যাপ্টেন গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে মারা যায়। দবির দরজার পাশে দেয়ালে নিজেকে আড়াল করে বেঁচে যায়। কর্মকর্তাটি কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে আবার গুলি চালায়। দবির বলল, ‘একটি গুলি আমাকে আঘাত করল। আমি শব্দ করে মাটিতে পড়ে মরে যাচ্ছি ভান করলাম। লোকটা গুলি চালান বন্ধ করল, ভাবল আমি মরে গেছি।’ একটি বুলেট দবিরের ডান হাতের কবজিতে লাগল, আরেকটি গাল ছুঁয়ে গেল। সে কবজি থেকে রক্ত নিয়ে মুখে মাখল। কর্মকর্তা যখন লাশগুলো পরীক্ষা করছিল, দবির তখন দম বন্ধ করে রাখেন। তিনজনই মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে সে চলে গেল। পরবর্তী দুই আড়াই ঘণ্টা পাকিস্তানি সৈন্যরা দৃশ্য দেখতে এল। প্রতিবারই দবির দম বন্ধ করে মরার মতো পড়ে রইল।
‘সময় যাচ্ছে’ দবির বলতে থাকল, ‘রক্ত শুকিয়ে গেল। মাছি ভন ভন করতে লাগল, বিশ্রি গন্ধ বের হতে লাগল’। সাত ঘণ্টা পর সে জানালা দিয়ে চার ফুট নিচে পড়ল। শব্দ শুনে একজন পাহারাদার গুলিও ছুড়ল। খুব অন্ধকার ছিল, গুলি এদিক–সেদিক গেল। অন্য সৈন্যরাও এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ল। দবির হামাগুড়ি দিয়ে ধান খেত, জলাভূমি ও একটা ছোট্ট নদী পার হয়ে পালাতে পারল। পরদিন একজন স্থানীয় চিকিৎসক তার গুলি বের করে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল।
দবির দেখতে এখনো বালক, ওজন মাত্র ১২০ পাউন্ড। কিন্তু তার ব্যবহার দেখে কোন সন্দেহ নেই, সে একজন পূর্ণবয়স্ক। মাত্র তিন মাস আগে পাকিস্তানের কাকুল মিলিটারি একাডেমি থেকে সে চতুর্থ স্থান পেয়ে গ্র্যাজুয়েট করেছে।

(চলবে)
লেখক: কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরি হলিস শাখার ম্যানেজার
ইমেইল: [email protected]