সহপাঠীদের তামাশার নকশাটাই ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির অফিশিয়াল লোগো

স্কুলছাত্রের কাঁচা হাতের এই নকশাকে ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি তাদের টি-শার্টের অফিশিয়াল লোগো বানিয়েছে। ছবি: টুইটার
স্কুলছাত্রের কাঁচা হাতের এই নকশাকে ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি তাদের টি-শার্টের অফিশিয়াল লোগো বানিয়েছে। ছবি: টুইটার

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের এক স্কুলের খুদে শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির স্বেচ্ছাসেবী ক্লাব বলতে পাগল! ওই স্বেচ্ছাসেবীদের কমলা রঙের টি-শার্ট, ক্যাপসহ পোশাকপরিচ্ছদে তার দারুণ আগ্রহ। তাই স্কুলের ‘কলেজ কালারস ডে’ অনুষ্ঠানে ওই রকম স্বেচ্ছাসেবী সেজে সে হাজির হতে চায়। তবে ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির লোগোযুক্ত কোনো পোশাক তার ছিল না। তাই নিজেই সাদা কাগজের একটি টুকরোর ওপর কাঁচা হাতে ‘ইউ টি’ লিখে লোগো বানায় ছোট্ট ছেলেটি। পিন দিয়ে তা আটকে নেয় কমলা রঙের টি-শার্টে। 

নিজের নকশায় করা টি-শার্ট পরে স্কুলে যাওয়ার পর সহপাঠীদের হাসিঠাট্টা শুরু হয়। তবে বিদ্রূপকারীদের ওই আচরণ শাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। ভাইরালের এ যুগে একান-ওকান হয়ে তা পৌঁছে যায় ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি কর্তৃপক্ষের কাছে। নাটকীয়ভাবে তারা স্কুলছাত্রের সেই নকশাকে তাদের অফিশিয়াল টি-শার্টের লোগো বানিয়েছে।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় দারুণ খুশি ওই স্কুলছাত্র। সেই সঙ্গে খুশি তার স্কুলের শিক্ষক লরা স্নাইডার। কারণ, এ ঘটনার পেছনে তাঁর ভূমিকাই বেশি। তবে তিনি ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষায় স্কুলছাত্রের পরিচয় প্রকাশ করেননি। সিএনএনের খবরে শুধু উল্লেখ করা হয়েছে ছেলেটির স্কুলের নাম, অল্টামন্টে এলিমেন্টারি স্কুল।

স্কুলছাত্রের নিজের সেই নকশা। ছবি: ফেসবুক
স্কুলছাত্রের নিজের সেই নকশা। ছবি: ফেসবুক

স্কুলছাত্রের শিক্ষক লরা স্নাইডার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে গত বুধবার লিখেছিলেন, ‘সে কমলা রঙের টি-শার্টের ওপর পিন দিয়ে ইউ টি লেখা কাগজটি গেঁথে দিয়েছিল। কলেজ কালারস ডেতে সে শার্ট পরে আমাকে দেখাতে আসে। ওই সময় সে খুব উত্তেজিত ছিল। আমি তার এ কাজে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু দুপুরের খাবারের সময় সে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এল। পাশের টেবিলের কয়েকটি মেয়ে তার টি-শার্ট দেখে হাসাহাসি করেছে। সে এতে খুব দুঃখ পেয়েছিল।’

শিক্ষক জানান, ছাত্রের অবস্থা দেখে তিনি ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির অফিশিয়াল লোগোযুক্ত টি-শার্ট কিনে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। তবে পরদিন বৃহস্পতিবারের মধ্যে তাঁর সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবী ক্লাবের সদস্যদের মধ্যে। এরপর আর দেরি হয়নি। অল্প সময়ের মধ্যে ছেলেটির জন্য কর্তৃপক্ষ পাঠিয়ে দেয় লোগোযুক্ত টি-শার্ট, ক্যাপ, নোটবুক, ব্যাকপ্যাকসহ এক বাক্স উপহার।

স্কুলছাত্রের জন্য আসা এক বাক্স উপহার। ছবি: ফেসবুক
স্কুলছাত্রের জন্য আসা এক বাক্স উপহার। ছবি: ফেসবুক

গত শুক্রবার ফেসবুকে বিষয়টি জানান শিক্ষক লরা স্নাইডার। তিনি জানান, উপহার পেয়ে দারুণ খুশি তাঁর ছাত্র। সে টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে খুব খুশি।

তবে ঘটনার এখানেই শেষ নয়। ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির অফিশিয়াল ক্যাম্পাস স্টোর তাদের টুইটার পেজে জানিয়েছে, স্কুলছাত্রের সেই নকশাকে তারা অফিশিয়াল লোগো হিসেবে নিয়ে টি-শার্ট তৈরি করছে। প্রতিটি টি-শার্ট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ চলে যাবে অ্যান্টি বুলিং বা উৎপীড়ন বিরোধী ফাউন্ডেশনে।

ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির পাঠানো টি-শার্ট ও ক্যাপ পরেছে স্কুলছাত্রটি। ছবি: ফেসবুক
ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির পাঠানো টি-শার্ট ও ক্যাপ পরেছে স্কুলছাত্রটি। ছবি: ফেসবুক

লরা স্নাইডার জানিয়েছেন, নিজের নকশা নিয়ে টি-শার্ট তৈরি হচ্ছে জেনে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে তাঁর ছাত্র।

সবার এই ভালোবাসায় মুগ্ধ ছেলেটির মা। তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনা তাঁর ছেলেকে সারা জীবনের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে।

ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির অনলাইন শপের দেওয়া তথ্য অনুসারে, শনিবারের মধ্যেই স্কুলছাত্রের নকশার টি-শার্টের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে।