যে কারণে কমলাকে বেছে নেওয়া

কমলা হ্যারিস
কমলা হ্যারিস

যুক্তরাষ্ট্রের আগামী ‘নজিরবিহীন’ নির্বাচনের জন্য রানিং মেট হিসেবে সিনেটর কমলা হ্যারিসকে বেছে নিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। এই মনোনয়ন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রচার শিবিরের জন্য আক্রমণের নতুন রসদ জুগিয়েছে। জনসমর্থনে ধুঁকতে থাকা ট্রাম্প সেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে কমলাকে বেছে নেওয়ার অনেক কারণও রয়েছে, যা আগামী ৩ নভেম্বরে নির্বাচনে সফলতা এনে দিতে পারে বাইডেনকে।

বাইডেন কমলাকে রানিং মেট হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার পরপরই মঙ্গলবার ট্রাম্প এটাকে ‘বিস্ময়কর পদক্ষেপ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। কমলাকে একজন ঘৃণ্য, ভয়ংকর ও অভদ্র নারী হিসেবে অভিহিত করেন তিনি। আর ট্রাম্পের প্রচার শিবির কমলাকে ‘চরমপন্থী’ লেবাস দেয়। তাদের দাবি, উদারপন্থী বাইডেনকে কোণঠাসা করে ফেলবেন এই নারী।

তবে বর্তমান তথ্য-প্রমাণ কিন্তু বলছে না যে তিনি একজন চরমপন্থী। প্রতিষ্ঠিত ধারার রাজনীতি নিয়ে অস্বস্তি থাকলেও ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক এই আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেলের ডেমোক্রেটিক পার্টির বনেদিদের সঙ্গে ভালো মিত্রতা রয়েছে। এমনকি রিপাবলিকানদের মধ্যে বাইডেনের চেয়েও জনপ্রিয় কমলা। কমলাকে রানিং মেট ঘোষণা করার আগের দিন করা রয়টার্স-ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, নিবন্ধিত রিপাবলিকান ভোটারদের মধ্যে ২১ শতাংশ হ্যারিসকে আর মাত্র ১৩ শতাংশ বাইডেনকে পছন্দ করেন। অনেক উদার রিপাবলিকান ট্রাম্পকে পছন্দ করেন না। আর সেই কারণে রিপাবলিকানদের মধ্যে বাইডেনের ভোট বাড়তে পারে।

করোনাভাইরাস মহামারি, অর্থনীতিতে ধস এবং পুলিশি নৃশংসতা ও বর্ণবাদী অনাচারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভের কারণে ট্রাম্পের জনসমর্থন ফিকে হয়ে গেছে। তাই ট্রাম্প আর যাতে হোয়াইট হাউসে ঢুকতে না পারেন, সে জন্য ভোটারদের একটি বৃহৎ জোট গড়ে তুলতেই কমলাকে ভাইস প্রেসিডেন্টের জন্য মনোনীত করেছেন বাইডেন। 

সান ফ্রান্সিসকোর ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে থাকাকালে তখনকার ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম প্রধান সমালোচক ছিলেন কমলা। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্পের সমালোচকদের নামের তালিকা করা হলে তাতে প্রথম দিকেই থাকবেন কমলা। বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের সময় ট্রাম্পের ভূমিকাও ছিল বিতর্কিত। কৃষ্ণাঙ্গরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকায় ব্যাপক অসন্তুষ্ট হন। কমলা ওই আন্দোলনকে সামনে থেকে সমর্থন দেন। বিভেদের রাজনীতির মাধ্যমে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসতে চান বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই কৃষ্ণাঙ্গ ভোটব্যাংক সুসংহত রাখতে কমলার কোনো বিকল্প পাননি, সব জনমত জরিপেই ট্রাম্পের চেয়ে ১০ পয়েন্টের বেশি এগিয়ে থাকা বাইডেন।

কমলার মনোনয়ন ট্রাম্পের জন্য আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যৌন বা বর্ণবাদী আক্রমণ। কৃষ্ণাঙ্গ হওয়ায় ট্রাম্প যদি কমলার বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আক্রমণ করে বসেন, তাহলে তিনি আরও খাদের কিনারে চলে যাবেন। বাছবিচারহীনভাবে কমলার প্রতি আক্রমণ করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তরুণ ও নারী ভোটার, বিশেষ করে শহরতলির এমন ভোটারদের জন্য কমলা হতে পারেন আশার প্রদীপ। আবার ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা এশীয় ভোটারদের জন্য হবে বাড়তি আগ্রহের। এ ছাড়া বাকপটু কমলা বিতর্কে যে কাউকে ধরাশায়ী করতে পারেন।