ডাকযোগে ভোট নিয়ে মার্কিন ডাক বিভাগের সতর্কবার্তা

নভেম্বরের নির্বাচনে ডাকযোগে দেওয়া সব ভোট সময় মতো পৌঁছানোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে আমেরিকার ডাক বিভাগ। ছবি: রয়টার্স
নভেম্বরের নির্বাচনে ডাকযোগে দেওয়া সব ভোট সময় মতো পৌঁছানোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে আমেরিকার ডাক বিভাগ। ছবি: রয়টার্স

আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে ডাকযোগে দেওয়া সব ভোট সময় মতো পৌঁছানোর ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে আমেরিকার ডাক বিভাগ। দেশের ৪৬টি রাজ্য সরকার ও ওয়াশিংটন ডিসির নির্বাচন অফিসকে সম্প্রতি এক চিঠিতে ডাক বিভাগ এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।

আমেরিকার ডাক বিভাগ বর্তমানে চরম অর্থ সংকটে ভুগছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভাগটির ১০ শতাংশ ডাক পৃথক করার যন্ত্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডাক বিভাগের কর্মীদের ওভারটাইমও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর পছন্দের লোক লুইস ডিজয়কে ডাক বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। লুইস যোগ দেওয়ার পরই বিভাগটি সার্ভিস কমিয়ে অর্থ সংকট সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানানো হয়েছে।

গত জুলাই মাসের শেষ দিকে ডাক বিভাগ রাজ্যগুলোকে এমন চিঠি দিয়ে সতর্ক করেছে বলে ১৪ আগস্ট ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের ডাকযোগে সময় মতো ভোটাররা ভোট দিলেও ডাক বিভাগের সীমাবদ্ধতার কারণেই বহু ভোট সময় মতো পৌঁছানো যাবে না। সময়ের মধ্যে ভোট না পোঁছানো গেলে ওই ভোট গণনায় আসবে না।

করোনা মহামারির কারণে এবারে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দশ গুণ বেশি ডাকযোগে ভোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমেরিকার অধিকাংশ এলাকায় এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে। নভেম্বরের আগে এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমেরিকার লোকজনকে এমনিতেই ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে হিমশিম খেতে হয়। এবারে এর সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা সংক্রমণের ভয়। বিপুলসংখ্যক লোকজন এবারে কেন্দ্রে যাওয়ার বদলে ডাকযোগে ভোট দেওয়াকে প্রাধান্য দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

মিশিগান, পেনসিলভানিয়া এবং ফ্লোরিডার মতো অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে ভোট চূড়ান্ত ফলাফলে ব্যাপক প্রভাব রাখবে। এসব রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল খুবই কাছাকাছি হবে এবং জয়ের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এসব রাজ্যে জয়ী হয়ে আসতে হবে।

আমেরিকার প্রতিটি রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নির্বাচনী আইন। এসব রাজ্যের ডাকযোগে ভোটের আবেদন ও ভোট প্রদানের সময়সীমাও ভিন্ন ভিন্ন। ডাক বিভাগের পক্ষ থেকে এসব রাজ্যকে আলাদা করে ডাকযোগে ভোট গ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাতে সময় মতো ডাকে দেওয়া ভোট গণনার জন্য পৌঁছাতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ আগে থেকেই বলে আসছেন, এবারে ডাকযোগে ভোটের মাধ্যমে ব্যাপক কারচুপি হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। তিনি বলেছেন, আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কারচুপির নির্বাচন হবে আসছে নভেম্বরের নির্বাচন।

ডেমোক্রেট দল ডাক বিভাগের জন্য ২৫ বিলিয়ন অর্থ বরাদ্দের জন্য চাপ দিচ্ছে। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য আরও সাড়ে তিন বিলিয়ন যোগ করার অনুরোধ করা হয়েছে। রিপাবলিকান দল এবং হোয়াইট হাউস থেকে প্রথমে ডাক বিভাগের জন্য অর্থ বরাদ্দের বিরোধিতা করা হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ১৪ আগস্ট বলেছেন, ডেমোক্রেটরা করোনাভাইরাস প্রণোদনা প্যাকেজ নিয়ে সমঝোতায় আসলে তিনি ডাক বিভাগে অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রস্তুত আছেন। যদিও তিনি সম্প্রতি নিউইয়র্ক ও ভার্জিনিয়া রাজ্যে ডাক বিভাগে ভোটের কারচুপি ও ফলাফল বিভ্রাট নিয়ে আবারও কথা বলেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ভার্জিনিয়া রাজ্যে পাঁচ লাখ ভুয়া ব্যালট পেপার ছাড়া হয়েছে। এর মধ্যে কুকুরের নামে, মৃত ব্যক্তিদের নামেও ব্যালট পেপার ডাকে ছাড়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

ডাকযোগে ভোটের মাধ্যমে কারচুপি নিয়ে ট্রাম্পের আগে থেকে দেওয়া হুঁশিয়ারি রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন। ফলাফল কাছাকাছি হলে এ নিয়ে মামলা হবে এবং ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল জানতে দীর্ঘ সময় লাগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।