ক্যানভাসে সংগীতের অনুষঙ্গ

‘আমার ভুবন’, শিল্পী: ইফ্ফাত আরা দেওয়ান
‘আমার ভুবন’, শিল্পী: ইফ্ফাত আরা দেওয়ান

নির্জন ঘরে কার উপস্থিতি? ড্রয়িংরুম না কি রেওয়াজ করার সাধনাঘর। তানপুরা, হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন না কেউই, কিন্তু সুরের লহরি দেয়াল ছাপিয়ে বাইরের আকাশেও ছড়িয়ে পড়ছে। স্বচ্ছ ফুলদানির গোছানো ফুলগুলোও কি সুবাস দিচ্ছে? সংগীত ও চিত্রশিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ানের প্রদর্শিত ছবি দেখে মনে মনে এমন ভাবনা আসে। ‘চাঁদের এত আলো’ শিরোনামের প্রদর্শনীটি চলছে গ্যালারি শিল্পাঙ্গনে। শিল্পীর একান্ত ভুবন, অবকাশ, অবসর, নির্জন সন্ধ্যা, আলোয় উদ্ভাসিত ব্যালকনি, নানান রঙে সাজানো ফুল—এগুলোকে বিষয় করে ছবি এঁকেছেন ইফ্‌ফাত। ছবিগুলো যেন তাঁর সংগীতসত্তারও প্রতিনিধি।

‘চাঁদের এত আলো’ সিরিজচিত্রে অসীম নীলাকাশে পরিপূর্ণ গোলাকৃতি চাঁদ শান্তি ও স্বস্তির আবহ তৈরি করেছে। ‘আমার প্রাণের ভিতরে আগুন’ ছবিতে লাল রঙের চেয়ার শিল্পীর একান্ত অনুভূতির স্বাক্ষর। শুধু চাঁদ নয়, ড্রয়িংরুমের পর্দা ভেদ করে স্বর্ণালি আভার সূর্যের উঁকি আছে নির্জন ঘরে। বেশির ভাগ কাজে ঘরের আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, চায়ের কাপ, আরাম কেদারা, ফুলের টপ, ফুলদানিভরা ফুল দিয়ে সাজানো। কোথাও প্রাণের উপস্থিতি নেই, কিন্তু প্রাণের স্পন্দনের কমতিও মনে আসে না। ‘অপরাজিতা’ ছবিতে সংগীতের তানের মতো বিস্তার লাভ করছে অপরাজিতা ফুল। যেখানে রূপ-রস-গন্ধ দিয়েই এক প্রাণের উপস্থিতি, সংগীতের আবহ আর কবিতার ছন্দ। শিল্পী তাঁর সংগীতজীবনের দীর্ঘ সাধনার স্বরলিপির বাঁধন ভেঙে রং রেখায় স্বাধীন শিল্পীসত্তাকে ছুড়ে দিয়েছেন।

ইফ্‌ফাতের সাম্প্রতিক সময়ের কাজে অধিকতর সারল্য আছে। আছে সমবাদী ও বিসমবাদী রঙের মেলবন্ধন। অধিকাংশ কাজেই ড্রয়িংপ্রধান, যা রবীন্দ্র চিত্রকলা ও ইমপ্রেশনিস্ট ধারার ছকে বাঁধা। নিসর্গপ্রধান কাজগুলোতে বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় ও রামকিঙ্কর বেইজের কাজের সাদৃশ্য রয়েছে। শিশু-চিত্রকলার ধরনের সঙ্গেও তুলনা করা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে করা ‘নারী মুখ’ সিরিজের চিত্রগুলো অধিকতর রবীন্দ্র চিত্রকলার মতো, ফলে স্বকীয়তার অভাব এবং রসেরও ঘাটতি চোখে পড়ার মতো। সব মিলিয়েইফ্ফাত আরা দেওয়ানের কাজে পাওয়া যায় সংগীতের নির্যাস। ১৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীটি শেষ হবে ২৮ জানুয়ারি।