নানা রবীন্দ্রনাথের মালা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা

‘আমি চিত্রাঙ্গদা, আমি রাজেন্দ্র নন্দিনী/ নহি দেবী, নহি সামান্য নারী...পাবে তুমি চিনিতে মোরে/ আজ শুধু করি নিবেদন—/ আমি চিত্রাঙ্গদা রাজেন্দ্র নন্দিনী।’—মঞ্চে বসে শিক্ষার্থীরা গাইছেন গান, একই সঙ্গে চলছে নাচ। তখন সন্ধ্যা। মুহূর্তে মুহূর্তে চিত্রাঙ্গদা, অর্জুন আর সখীদের নৃত্যগীতে নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদার পরিবেশনায় ঝলমল করছে ‘গাহি সাম্যের গান’ মঞ্চটি।
আয়োজনটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫তম জন্মজয়ন্তীকে কেন্দ্র করে। ৮ মে রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিনে ময়মনসিংহের ত্রিশালের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মেতেছিলেন অন্য রকম অনুষ্ঠানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনায় এই আয়োজনটি হলেও এর কেন্দ্রে ছিলেন শিক্ষার্থীরাই। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া, সংগীত, ফোকলোর ও চারুকলা—এই পাঁচ বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে অংশ নিলেন নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদার পরিবেশনায়, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মঞ্চস্থ হলো নাটক বিসর্জন—এভাবে দিনব্যাপী তিন পর্বের আয়োজনে আরও ছিল সেমিনার, আলোচনা অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সব মিলিয়ে এ যেন ‘নানা রবীন্দ্রনাথের মালা’।
পুরো আয়োজন নিয়ে কথা হলো রবীন্দ্রজয়ন্তী আয়োজন কমিটির সদস্যসচিব ও ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের সভাপতি তুহিন অবন্তের সঙ্গে। তাঁর গলায় ‘দশে মিলে করি কাজ’-এর সুর, ‘বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলে অনুষ্ঠানটি করছি। ফলে এটি যদি সফলভাবে সম্পন্ন হয়, সে সাফল্য সবার।’

‘পূর্ব বাংলায় রবীন্দ্র হেজিমনি’ শিরোনামের সেমিনারের মধ্য দিয়ে সকালে শুরু হলো অনুষ্ঠান। এখানে মূল প্রবন্ধ পড়েন ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক মেহেদী উল্লাহ। পরে বিকেলে ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান। ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষক মনোজ কুমারের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক হায়াৎ​ মামুদ। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহীত উল আলম।

‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমরা কেন পড়ব, তাঁকে না পাঠ করলে কী ক্ষতি?’—বক্তৃতার শুরুতে এটি ছিল হায়াৎ​ মামুদের প্রশ্ন। পরে প্রশ্নের উত্তরটিও নিজেই দিলেন তিনি, ‘রবীন্দ্রনাথ পড়তে হয় এ কারণেই যে তাঁর রচনায় আমরা পাই উদারনৈতিকতা ও বাঙালিত্বের শিক্ষা।’

মোহীত উল আলম বললেন, ‘রবিঠাকুর তো সবখানেই আছেন—প্রেমে-অপ্রেমে, জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষণে পাই তাঁর স্পর্শ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময়ই একটা সাংস্কৃতিক আবহ বিরাজ করে। সেই আবহের ভেতরেই রবীন্দ্রনাথকে লালন করি আমরা। শুধু তা-ই নয়, আমাদের পাঁচটি বিভাগে—থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স, ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া, সংগীত, ফোকলোর ও চারুকলা—কোর্স হিসেবে আবশ্যিকভাবে পাঠ্য রবীন্দ্রনাথ।’

সন্ধ্যায় ছিল নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা ও নাটক বিসর্জন। সংগীত বিভাগের শিক্ষক আহমেদ শাকিল হাসমি ও সোমা রানী রায়ের সংগীত পরিচালনা এবং নির্মি মৌর নৃত্য পরিচালনায় চিত্রাঙ্গদার পরিবেশনা ছিল মনোহর। বিভাগীয় শিক্ষক নুসরাত শারমীনের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথের লেখা বিসর্জন নাটকটির মঞ্চায়ন করেন থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা। ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের ব্যবস্থাপনায় খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের তৈরি করা আমার রবীন্দ্রনাথ প্রামাণ্যচিত্রটির মাধ্যমে রবীন্দ্রজয়ন্তীর আয়োজনটি যখন শেষ হলো, তখন রাত। কিন্তু শিক্ষার্থীদের উদ্যমে কোনো কমতি নেই। কেননা, অনুষ্ঠান শেষে দেখা গেল পরিশ্রান্ত শিক্ষার্থীরা মঞ্চ থেকে ফিরছেন সাজঘরে, সে সময়ও তাঁদের কণ্ঠে গান, ‘আমি চিত্রাঙ্গদা...’।