অবৈধ স্থাপনার পক্ষে সাংসদ!

রাজধানীর জুরাইনে রেলের জমিতে করা অবৈধ স্থাপনা রাখা না-রাখা নিয়ে বিবাদে মেতেছেন দুই সাংসদ। সরকারদলীয় সাংসদ সানজিদা খানমের বাধায় উচ্ছেদ বন্ধ রয়েছে; অন্যদিকে সরকারেরই শরিক জাতীয় পার্টির সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা চাইছেন উচ্ছেদ চলুক। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের প্রশ্নটি আইনি প্রশ্ন, একজন আইনপ্রণেতা আইনের বিপক্ষে কী করে দাঁড়ালেন?
প্রথম আলোর সংবাদ জানাচ্ছে, জুরাইন রেলগেট এলাকায় গত মঙ্গলবার সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। রাস্তার দুই ধারের ১০-১৫টি সেমিপাকা স্থাপনা ও শতাধিক ভাসমান দোকান উচ্ছেদও করা হয়। কিন্তু একপর্যায়ে একটি হোটেল উচ্ছেদ করতে গেলে সাংসদ সানজিদা বুলডোজারের সামনে দাঁড়ান। হোটেলের মালিক-কর্মচারীদের নিয়ে তিনি হোটেলের সামনে চেয়ার পেতে বসে থাকেন। এ অবস্থায় অভিযান স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি অবৈধ স্থাপনা তৈরি হয়েছে রেলের জমিতে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ আজ অবধি অধিকাংশ স্থাপনাই অপসারণে ব্যর্থ হয়েছে। কোথাও রেল কর্তৃপক্ষের কারও কারও অবৈধ বখরা এবং কোথাও প্রভাবশালীদের বাধাই মূলত কারণ। সাংসদ সানজিদা খানম নিজেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে সমস্যাটা কোথায়, তা প্রমাণ করলেন। আইন বাস্তবায়নে সাধারণ মানুষ বাধা দিলে শাস্তির বিধান রয়েছে। সাংসদের জন্য কি সেই একই বিধান প্রযোজ্য নয়?
পাশাপাশি বাধাদানকারী সাংসদের অভিযোগও আমলে নিতে হবে। প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘যদি উচ্ছেদ অভিযান করতে হয়, তাহলে গেন্ডারিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত পুরো এলাকায় করুক। আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সব বাদ দিয়ে মাঝখান দিয়ে কেন করবে?’ সাংসদ পুরো এলাকা দখলমুক্ত করার যে দাবি জানিয়েছেন, তার সঙ্গে আমরাও একমত। কিন্তু ওই অজুহাতে কোনো অংশে অভিযান শুরু হলে তাতে বাধা দেওয়া মোটেও যুক্তির কথা নয়। শুরুটা যেকোনো জায়গাতেই হতে পারে। এসব অবৈধ স্থাপনার কারণে যেমন যানজট বাড়ে, তেমনি মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনাও ঘটে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে আরেকটি লাইন এবং গেন্ডারিয়া থেকে পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেলসংযোগের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। দুটি প্রকল্পের জন্যই রেলপথের দুই পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ জরুরি।