রিজার্ভের অর্থ চুরি

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের যে অংশ (সাড়ে ছয় কোটি ডলার) এখনো উদ্ধার করা যায়নি, তা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় প্রচেষ্টা বজায় রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক আইনে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এই অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের ব্যাংক ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের দায়দায়িত্ব নিরূপণ এক বছরেও সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়টি অস্বস্তিকর।
চুরি হওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে নতুন ফিলিপাইন সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন ঘটে থাকলে আন্তর্জাতিক আইনই বড় ভরসা। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর অবশ্য বলেছেন যে, ফিলিপাইনে আদালতে চলমান মামলার রায় হলে অর্থ ফেরত পাওয়া যাবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, ফিলিপাইনের সরকার যদি এ ব্যাপারে শিথিল অবস্থান নেয় তবে আদালতের বিচার–প্রক্রিয়াতেও তা প্রভাব ফেলতে পারে। কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফিলিপাইন থেকে দেড় কোটি ডলার ফেরত আনার বিষয়টি একটি ইতিবাচক অগ্রগতি। কিন্তু বাকি বেশির ভাগ অর্থ ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে লক্ষণীয় কোনো অগ্রগতি নেই। অর্থমন্ত্রী নিজেই হতাশার সুরে বলেছেন, ‘এক বছর তো হয়ে গেল, এখনো পুরো অর্থ ফেরত পেলাম না।’ তবে সরকার বাকি অর্থ ফেরত আনার পথ খুঁজছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনা তদন্তে ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিটির প্রতিবেদন ঘোষণা দিয়েও সরকার দীর্ঘদিনে প্রকাশ করেনি। সরকারের এই অবস্থান দুর্ভাগ্যজনক। এই প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ না পাওয়ার বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা মনে করি এই চুরি সঙ্গে কারা জড়িত বা কাদের দায়িত্বে অবহেলার জন্য ঘটনাটি ঘটতে পেরেছে, তা জানার অধিকার জনগণের রয়েছে। তদন্তে কারও সংশ্লিষ্টতা বা দায়িত্ব পালনে অবহেলার বিষয়টি উঠে এলে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব সরকারের।
রিজার্ভ চুরির অর্থ বের করে নেওয়ার জন্য ব্যবহৃত ফিলিপাইনের ব্যাংক আরসিবিসি এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করেই বলেছে যে, বাংলাদেশকে কোনো অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা তাদের নেই। রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কোনো দায়িত্ব অস্বীকার করে তারা বলেছে, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলা ও অসাবধানতার’ দায় বাংলাদেশকেই নিতে হবে। সুতরাং বর্তমান বাস্তবতায় দোষীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি এখনো উদ্ধার না হওয়া অর্থ অবিলম্বে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক আইনের ব্যবহারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।