সমতামূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা চাই

দারিদ্র্য হ্রাসের শ্লথগতির সঙ্গে যখন ধনী ও গরিবের ব্যবধান উত্তরোত্তর বাড়তে দেখি কিংবা অঞ্চলে অঞ্চলে ব্যাপক আয়বৈষম্য লক্ষ করি, তখন উন্নয়নের বুলি অসার বলেই প্রতীয়মান হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল সব ধরনের শোষণ-বঞ্চনার অবসান। আমাদের সংবিধান ও রাজনৈতিক দলগুলোর ঘোষণাপত্রে যে শোষণমুক্ত সমাজ কায়েমের অঙ্গীকার রয়েছে, তা থেকেও তারা সরে যেতে পারে না।

আঞ্চলিক বৈষম্য এখন সমগ্র জাতির মনঃপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের কোনো এলাকাকে পেছনে ফেলে কোনো এলাকা এগিয়ে যেতে পারে না। আমরা উত্তরাঞ্চল থেকে ‘মঙ্গা’ বিদায় করতে পারলেও সেখানে এখনো দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি। কুড়িগ্রামে প্রায় ৭১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের দারিদ্র্যের হারও উদ্বেগজনক। সংশ্লিষ্ট এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠা তথা কর্মসংস্থান না থাকার কারণেই এটি হয়েছে। অন্যদিকে সবচেয়ে কম দরিদ্র মানুষ বাস করে নারায়ণগঞ্জে। সেখানে দারিদ্র্যের হার ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সমতা থাকা জরুরি। ধনীকে আরও ধনী করা এবং গরিবকে ভিজিএফ কার্ডের সুবিধা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ চাইলে তাদেরও কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া আঞ্চলিক বৈষম্য কমাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং তা যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।  

গত ছয় বছরে দারিদ্র্য গড়ে ১ দশমিক ২ শতাংশ হারে কমার তথ্যও আমাদের আশান্বিত করে না। এই ধারা চলতে থাকলে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আমাদের আরও কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে। দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্তিই হোক সরকারের সব উন্নয়ন পরিকল্পনার লক্ষ্য।