নিরাপত্তা পরিষদের নিন্দা

আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, মিয়ানমারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত নিয়োগ, জরুরি ভিত্তিতে রাখাইনে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও মানবিক সহায়তা সংস্থার অবাধ প্রবেশাধিকারের মতো যেসব সুনির্দিষ্ট সুপারিশ রাখা হয়েছে, তা কতটা কী কার্যকর হয়, সে বিষয়ে বিশ্বকে সোচ্চার ও সজাগ থাকতে হবে। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে মিয়ানমার যদি তার রোহিঙ্গা নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সন্তোষজনক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয়, তাহলে নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই কড়া ব্যবস্থাসংবলিত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাসের দিকে যেতে হবে।

মিয়ানমার সরকারের তরফে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতি শত্রুতা লুকোছাপার বিষয় নয়। তাই সোমবারের বিবৃতিতে একজন বিশেষ উপদেষ্টা নিয়োগে জাতিসংঘের মহাসচিবকে যে অনুরোধ করা হয়েছে, তার ত্বরিত বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এটা অনুশোচনার বিষয় যে জাতিসংঘসহ কোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক সংস্থাকে যখন রাখাইনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, তখন জঙ্গি সংগঠন আরসার দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাকে বড় করে দেখানোর কসরত অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বারংবার চেষ্টার পর যে বিবৃতি নিরাপত্তা পরিষদ পাস করল, তাতে জেনোসাইড, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ দূরে থাক, জাতিগত নির্মূল কথাটিরও উল্লেখ নেই। রাখাইনে কী ধরনের অপরাধ হয়েছে, তা যেন নিরাপত্তা পরিষদ জানেই না!

বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করা হলেও তার ওপর ‘স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের’ দায় চাপানো হয়েছে। অথচ স্বতঃস্ফূর্ত প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব শতভাগ মিয়ানমারের। মিয়ানমার নিরাপত্তা পরিষদের ওই বিবৃতি নাকচ করায় আমরা বিস্মিত হইনি। বাংলাদেশের সঙ্গে তারা ‘মসৃণ গতির দ্বিপক্ষীয় সমাধান প্রক্রিয়ায় রয়েছে’—এমন বর্মি ভাষ্য সত্যের অপলাপ।

সেই ২০০৭ সালে নিরাপত্তা পরিষদ যখন রাখাইন পরিস্থিতিতে বিবৃতি পাস করতে চেয়েছে, তখন রাশিয়ার সমর্থনে চীনকে আমরা ভেটো দিতে দেখেছি। এই ধারা এক দশকেও বদলে যায়নি। তাদের এই নিস্পৃহ ভূমিকা রাখাইনে গণহত্যায় প্ররোচনা জুগিয়েছে কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন।

আমরা আশা করব, আগামী ৩০ দিনে বর্মি মনোভাবে কোনো বদল না ঘটলে মানবতা ও সভ্যতার স্বার্থে চীন ও রাশিয়া তাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করবে।