এ কেমন সমুদ্রবন্দর?

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী মোংলা বন্দরের কাস্টম হাউসটি রয়েছে ৫৮ কিলোমিটার দূরত্বে খুলনা শহরের খালিশপুরে, যেখানে শুল্ক নির্ধারণসহ দাপ্তরিক কাজ হয়ে থাকে। আর বন্দরে কাস্টমের যে একটি ইউনিট আছে, সেটি শুধু পণ্যের মান যাচাই-পরীক্ষা ও কনটেইনার খালাসের কাজে সহায়তা করে থাকে। এর ফলে বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কোনো কোনো পণ্য ছাড় করতে তাঁদের একাধিকবার খালিশপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। আর ব্যবসায়ীদের ভোগান্তির শেষ ধকলটা গিয়ে পড়ে ভোক্তাদের ওপরই। 

আমদানি-রপ্তানিকারকদের এই ভোগান্তি ও হয়রানি দূর করতে মোংলা বন্দরে পূর্ণাঙ্গ কাস্টম হাউস প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ২০১১ সালে বন্দর উপদেষ্টা কমিটির সভায় কাস্টম হাউস স্থানান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। মন্ত্রী ছয় বছরেও দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দরে কাস্টম হাউসের জন্য অবকাঠামো তৈরি করতে পারেননি। সাধারণত চেয়ার বদলালে কথা বদলে যায়, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, চেয়ার ঠিক থাকলেও কথা বদল হয়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরসহ অনেক বেহুদা কাজে কোটি কোটি টাকা ফি বছর খরচ করে থাকে। অন্যদিকে যে মোংলা বন্দর দিয়ে হাজার হাজার কোটি টানার পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়, সেই বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ ব্যয় করতে পারে না, এটি অবিশ্বাস্য। বিগত অর্থবছরে মোংলা বন্দর ৭২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। সেই মুনাফার অন্তত একাংশ মন্ত্রণালয় বন্দরের উন্নয়নে ব্যয় করতে পারত।

আর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালিশপুর থেকে কাস্টম হাউস স্থানান্তর না করার পক্ষে যে যুক্তি দেখাচ্ছে, তা–ও গ্রহণযোগ্য নয়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে কাস্টমের দাপ্তরিক কার্যক্রম চালাতে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হয় না। সংশ্লিষ্টদের সদিচ্ছা আছে কি না, সেটাই মূল প্রশ্ন। গেল ছয় বছরে মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। আর বিলম্ব নয়, অবিলম্বে মোংলায় কাস্টম হাউস সরানো হোক।