নারী ক্যাডেটদের কর্মসংস্থান

নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ মেরিন একাডেমি থেকে পাস করা ১৬ জন নারী ক্যাডেটের সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি না পাওয়ার বিষয়টি হতাশাজনক।

রোববার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, ২০১২ সালে মেরিন একাডেমিতে প্রথমবারের মতো ১৬ জন নারী ভর্তি হন। সমুদ্রগামী জাহাজে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণসহ যোগ্যতার সব পরীক্ষায় তাঁরা সফল হলেও গত দুই বছরে তাঁদের একজনও চাকরিতে ঢুকতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা বলছেন সমুদ্রগামী জাহাজমালিকেরা। অথচ নারী মেরিন ক্যাডেটদের চাকরির ক্ষেত্র শুধু সমুদ্রগামী জাহাজ। এখন এই নারী ক্যাডেটদের যদি কোনো সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরিই না হয়, তাহলে তাঁরা যাবেন কোথায়? তাঁদের এত কষ্টের ফল কি তাহলে বৃথা যাবে?

এই নারীদের সঙ্গে পাস করা পুরুষ ক্যাডেটদের অনেকে ইতিমধ্যে দেশি-বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরি করেছেন এবং করছেন। এখন নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে নারী ক্যাডেটের সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরিতে নিয়োগ দিতে না চাওয়ার যুক্তিটি কোনোভাবেই ধোপে টেকে না। আমাদের দেশের নারীরা উড়োজাহাজ চালাচ্ছেন, সশস্ত্র বাহিনীতে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন, নৌবাহিনীতে নাবিকের মতো পেশায় সাফল্য দেখিয়েছেন। এসব জায়গায় যদি নিরাপত্তার বিষয়টি বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরির ক্ষেত্রে সেটাকে কেন অজুহাত হিসেবে খাড়া করা হচ্ছে?

সরকারও যে এ ব্যাপারে খুব একটা গা করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। সরকারের যদি মাথাব্যথা থাকত তাহলে পাস করার দুই বছর পরও ১৬ জন নারী ক্যাডেটকে বেকার বসে থাকতে হতো না। নারীদের জন্য কোর্স খোলার সিদ্ধান্ত যখন কার্যকর হয়েছে, তখন পাস করলে তঁারা কোথায় কাজ করবেন, সেটাও সরকার ও নীতিনির্ধারকদের বিবেচনা করতে হবে।  

এ সমস্যা সমাধানে এখন সরকারকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন বেশ কয়েকটি নতুন জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এসব জাহাজে সরকার নারী ক্যাডেটদের নিয়োগ দিতে পারে। বেসরকারি জাহাজগুলো যাতে নারীদের নিয়োগ দেয়, বিধিবিধান তৈরিসহ সরকার তাদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারে।