আফসানার প্রতিবাদ

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের একদল কর্মীর প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফসানা আহমেদকে শীতের রাতে হল থেকে বের করে দেওয়া কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর সঙ্গে ছাত্রলীগকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অব্যাহত শিথিল মনোভাবের বিষয়টিকে নাকচ করা যাবে না।
ছাত্রলীগের মিছিলে যোগ না দেওয়ার ‘অপরাধে’ একজন আফসানার প্রতিবাদী হয়ে ‘খবর’ হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ধরনের উদ্যোগের ফল নিয়ে খুব আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ দূষণমুক্ত করা অপরিহার্য। সে জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে চাইলে আওয়ামী লীগকে বিশ্বস্ততার সঙ্গে বাকৃবির ওপর কেন্দ্রীয়ভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চলমান প্রশ্নবিদ্ধ তৎপরতা বন্ধ না করা হলে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থেকে যাবে।
বহু বছর ধরে ওই বিদ্যাপীঠে এক অলিখিত রুগ্‌ণ রেওয়াজ চালু করা হয়েছে যে ছাত্রলীগের মিছিল ও নানা ধরনের কর্মসূচিতে, বিশেষ করে নবাগত শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করতেই হবে। প্রায় প্রতিটি হল থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থীকে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন কেয়ার মার্কেটে আয়োজিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়। নৈতিক সাহস প্রদর্শনের জন্য আফসানাকে আমরা অভিবাদন জানাই। কিন্তু তাঁর একক প্রতিবাদ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক যে জবরদস্তি বা হয়রানি চলে আসছে, তা প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট হবে না। আফসানার ঘটনাকে ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রফ্রন্টের চক্রান্ত হিসেবে দেখছে।
আমরা মনে করি, এ ধরনের অবস্থায় নীরবতা পালন করে আওয়ামী লীগ তার এই সহযোগী এবং জাতির ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটির কী সর্বনাশ করেছে, তা তাদের মূল্যায়ন করা উচিত। গত ৪২ বছরে ছাত্রসংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১৬ জন বলি হয়েছেন। ১৯৯৩-৯৪ সালে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের কোন্দলে লাশ পড়েছে, বিচার হয়নি, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থেকেছে। আবার এখন শতভাগ ওই সব সংগঠন‘মুক্ত’ পরিবেশেও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ পড়ে। ২০১৩ সালে টেন্ডারবাজি ও নিয়োগ-বাণিজ্যে ছাত্রলীগের সভাপতি, সম্পাদক ও সমর্থকদের সংঘাতে শিশু রাব্বি নিহত হয়। পরের বছরই ছাত্রলীগের কর্মী সায়াদ খুন হন। ছাত্রলীগেরই ১৪ জন অভিযুক্ত হন। কিন্তু বিচারহীনতার ধারা ছিন্ন হয়নি।
সুতরাং আফসানাকে হল থেকে বের করে দেওয়া এবং প্রতি সপ্তাহে বাধ্যতামূলক কর্মসূচি পালন করানোর যে অপরাধ, তার দায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব এড়াতে পারেন না। আশা করব, উল্লিখিত তদন্ত কমিটি আফসানাকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সক্ষমতা দেখাতে পারবে।