সাংবিধানিক পদে শূন্যতা

যেকোনো মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রের কতগুলো মৌলিক বৈশিষ্ট্য থাকে। আবার সেই মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যেও কতগুলো অতি মৌলিক থাকে। সব অবস্থায় একটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি থাকতেই হবে। আমাদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী এই তিনটি পদ অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন শীর্ষ পদ হিসেবে স্বীকৃত। বিশেষ করে এই তিনটি পদের একটিও দীর্ঘকাল শূন্য রাখা সংবিধান কোনোভাবেই সমর্থন করে না।

কোনো জাতির জীবনে কোনো ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা, জরুরি অবস্থা বা ক্রান্তিকালের মতো কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসেও সামরিক শাসনে সাময়িক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য ছিল। সংসদও ছিল না। প্রধান বিচারপতিকে আমরা প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হতে দেখেছি। আবার প্রধান বিচারপতিকে আমরা রাষ্ট্রপতি করে পরে সেই প্রধান বিচারপতির পদেই ফিরিয়ে এনেছি। সে জন্য আমরা নির্দিষ্টভাবে ভূতাপেক্ষ বৈধতা দিয়ে সংবিধান সংশোধন করেছি। কিন্তু অতীতের সেই সব উপাখ্যানের কোনোটিই স্বাভাবিক বা আদর্শস্থানীয় বলে গণ্য হওয়ার নয়। প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রশ্নে আইন ও বিচারমন্ত্রী দুঃখজনকভাবে আমাদের অতীত স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু মন্দ নজির কখনোই পুনরাবৃত্তির ভিত্তি হতে পারে না।

প্রধান বিচারপতির পদ অনির্দিষ্টকাল ধরে খালি রাখার যে নজির তৈরি হচ্ছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এর পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। কেন রাষ্ট্রের একটি স্তম্ভের শীর্ষ পদ শূন্য রাখতে হবে, সে বিষয়ে আদৌ ব্যাখ্যা নেই। আমরা দেখছি, এ বিষয়ে ভুলভাবে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদের দোহাই দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি যেকোনো মেয়াদে কার্যভার পালন করতে পারেন। যদিও আইনমন্ত্রীর এমন মতের সঙ্গে দ্বিমত করেছেন আওয়ামী লীগেরই দুই সাবেক আইনমন্ত্রী। প্রধান বিচারপতির পদ খালি থাকা অবস্থায় সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালিত হয়েছে। দেশে সংসদের অধিবেশন চলছে, কিন্তু সরকার অনুগত বিরোধী দলের মুখে এ নিয়ে টুঁ-শব্দটি নেই।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার তারিখ ছিল ৩১ জানুয়ারি। রেওয়াজ অনুযায়ী ওই তারিখের আগেই নতুন প্রধান বিচারপতি কে হবেন, তা চূড়ান্ত হওয়ার কথা। এস কে সিনহার পদত্যাগের ৬৫ দিনেও প্রধান বিচারপতির পদটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। আমরা মনে করি, প্রধান বিচারপতির পদে নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়টি বিচার বিভাগের স্বাধীনতার যে ধারণা ও মর্যাদা, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। অনতিবিলম্বে এই পরিস্থিতির অবসান হোক। নতুন প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হোক।