হিমাগারের অভাবে সবজি নষ্ট

বুধবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নেত্রকোনায় প্রতিবছর সোয়া দুই লাখ মেট্রিক টনের মতো সবজি উৎপাদিত হয়। কিন্তু হিমাগার না থাকার কারণে উৎপাদিত এসব সবজি সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। ফলে কৃষকদের বাধ্য হয়ে কম দামে সবজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে করে অনেক কৃষক ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকের সবজি চাষের খরচই ওঠেনি। অন্যদিকে সারা বছর বাজারে সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় বাইরে থেকে তা আনতে হচ্ছে। ফলে ক্রেতাকেও সবজি কিনতে গিয়ে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকেরা সবজি সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কাছে হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

আটটি উপজেলা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা জেলার আয়তন ২ হাজার ৭৪৭ বর্গকিলোমিটার। কৃষিজমির পরিমাণ ২ লাখ ৯ হাজার ২২৪ হেক্টর। জেলার ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষির সঙ্গে জড়িত। লোকসংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। অথচ এমন একটি জেলায় কোনো হিমাগার নেই। এর চেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার আর কী হতে পারে? জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কেন মনে হয়নি যে এখানে হিমাগার স্থাপন করা কতটা জরুরি। এ থেকেই বোঝা যায়, কৃষকদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোর আসলে খুব একটা ভাবনা নেই। আর জেলা প্রশাসনই–বা কী করছে। তারা কেন এত দিন এ বিষয়টিতে নজর দেয়নি? তারা নজর দিলে এত দিনে এখানে নিশ্চিতভাবেই একটি হিমাগার গড়ে উঠত। তাদের এই উদাসীনতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

নেত্রকোনা জেলায় জরুরি ভিত্তিতে একটি হিমাগার স্থাপনের ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া সারা দেশেই হিমাগারের সংখ্যা বাড়ানো দরকার। দেশে বর্তমানে প্রায় ৪০০ হিমাগার আছে, যার ধারণক্ষমতা ৫০ লাখ মেট্রিক টন। অথচ আলুসহ উৎপাদিত সবজির পরিমাণ এর চেয়ে অনেক বেশি। বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশে শুধু আলু উৎপাদিত হয়েছে ১ কোটি মেট্রিক টন।

গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে সরকারের উচিত মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনা, গুদামজাত করা এবং প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানি করার মতো উদ্যোগ নেওয়া ও অবকাঠামো গড়ে তোলা। দেশের সার্বিক উন্নতির জন্যই এগুলো প্রয়োজন।