এডিপি বাস্তবায়ন

ইতিমধ্যে চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) সাড়ে সাত মাস পার হয়ে গেছে। বাকি আছে মাত্র সাড়ে চার মাস। এই সময়ের মধ্যে কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে অতীতের রেকর্ড ভাঙলেও সাত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, এডিপি বাস্তবায়নে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে শিল্প মন্ত্রণালয়। গত সাত মাসে প্রকল্প বাস্তবায়নের হার মাত্র ৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেছে মাত্র পৌনে ৮ শতাংশ। ছাড়া জাতীয় সংসদ সচিবালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি), আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নের হারও ১০ শতাংশের নিচে। একই সময়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগ বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ।

এ অবস্থায় গত জুলাইতে ঘোষিত বাজেটে উন্নয়ন খাতে যে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, তার কত ভাগ চলতি বছরে ব্যয় করা সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যদি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নই না করতে পারে, তাহলে বাজেট করা কী প্রয়োজন।

প্রতিবারই এডিপি বাস্তবায়ন না হওয়া নিয়ে সমালোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেন। কিন্তু উল্লিখিত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মনে হয় বছরের বেশির ভাগ সময় কুম্ভকর্ণের ঘুমে আচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করেন। এরপর যখন তাঁদের ঘুম ভাঙে, তখন আর সময় থাকে না।

অর্থবছরের শেষে এসে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প শেষ করেন, যাতে কাজের মান খারাপ হয়, অনেক সময় কাজ না করেও ঠিকাদারেরা অর্থ তুলে নেন। এসব নিয়ে লেখালেখি হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের শাস্তি হওয়ার রেওয়াজ তেমন নেই। বড়জোর এক মন্ত্রণালয় থেকে তাঁদের অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।

অনেক সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হয়ে থাকে। কিন্তু চলতি অর্থবছরে দেশে হরতাল বা অবরোধের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। তাই রাজনৈতিক কারণে প্রকল্প বিলম্বের অজুহাত টিকবে না। এ সময় উত্তরাঞ্চলে বন্যা হলেও দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের দোহাই ধোপে টিকবে না।

আর এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও যদি বিদ্যুৎ বিভাগ বা সড়ক বিভাগ অধিকাংশ কাজ শেষ করতে পারে, তাহলে ওই সাত মন্ত্রণালয় কেন পারল না? বাজেট তথা জনগণের অর্থ নিয়ে এই স্বেচ্ছাচারিতা চলতে পারে না। প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করতে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতেই হবে।

আরেকটি নীতিগত বিষয়ের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। বাংলাদেশে অর্থবছর শুরু হয় জুলাই মাসে। তখন বর্ষার মৌসুম শুরু হয়ে যায়। ফলে অর্থবছরের প্রথম দিকে কাজ শুরু করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অর্থবছর এগিয়ে আনার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে পারে। ভারতে ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে অর্থবছরের হিসাব করা হয়।

সবশেষে যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো, যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে যেমন বাহবা দিতে হবে, তেমনি ব্যর্থতার ভারে ন্যুব্জ মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে তিরস্কার করতে হবে। প্রয়োজনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিতে হবে। কেননা, তাঁরা জনগণের উন্নয়ন ও সেবা করবেন—এই শর্তেই সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা নিয়ে থাকেন।