মেয়র আইভীর ওপর হামলা

রাষ্ট্রের দায়িত্ব নাগরিকদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং সন্ত্রাসী হামলা থেকে রক্ষা করা। কিন্তু ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে সিটি মেয়রের ওপর সন্ত্রাসী হামলার সময় পুলিশ সদস্যরা বিস্ময়করভাবে নীরব থেকেছেন। গণমাধ্যমের কল্যাণে জনৈক নিয়াজুলের হাতে তাক করা গুলিভর্তি পিস্তলের ছবিও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। নিয়াজুল তাঁর ভাইকে দিয়ে থানায় আগ্নেয়াস্ত্র ‘ছিনতাইয়ের’ অভিযোগে মামলা দায়ের পর্যন্ত করেছেন। পুলিশ সেই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করলেও এর মালিক নিয়াজুলকে খুঁজে পায়নি।

ওই ঘটনার নয় দিন পর ২৪ জানুয়ারি পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করে। যেখানে অস্ত্রধারী ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে হামলা করেছে, সেখানে সবাইকে ‘অজ্ঞাতনামা’ বলাও সত্য আড়াল করার নামান্তর। ঘটনার পর জেলা প্রশাসন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি করলেও গত এক মাসে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি। অথচ সাত কর্মদিবসে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা।

ঘটনার পর আক্রান্ত মেয়র গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাঁকে ঢাকার ল্যাবএইডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। ল্যাবএইডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ তাঁকে দেখতে গিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁদের সেই আশ্বাস ছিল নিছকই কথার কথা। অথবা তাঁদের চেয়েও যিনি শক্তিমান, তাঁর অঙ্গুলি হেলনে তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তার দুটোই আটকে গেছে।

আমাদের ধারণা, জেলা প্রশাসন এ কারণে তদন্ত রিপোর্ট দিচ্ছে না যে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসতে পারে। সিটি মেয়র আইভী সড়ক হকারমুক্ত রাখা এবং পথচারীদের জন্য তা উন্মুক্ত করার ঘোষণা দিলে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ (তিনি ওই এলাকার সাংসদও নন) শামীম ওসমান প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি নির্দেশ দিচ্ছি, সড়কে হকাররা বসবে।’

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পুলিশ যদি কারও চাপে সত্য আড়াল করতে না চায়, তাহলে তাদের কর্তব্য হবে অবিলম্বে নিয়াজুলসহ মেয়রের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা।