শিশুর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য চিহ্নিত করতে হবে

‘শিশুর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন
‘শিশুর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এই বৈঠক আয়োজন করা হয়। ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

শিশুদের দারিদ্র্যের প্রকৃত চিত্র বুঝতে হলে শুধু অর্থনৈতিক নয়, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য চিহ্নিত করতে হবে। শিশুদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য কমাতে আলাদা বাজেট প্রণয়ন, শিশুবিষয়ক আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা জরুরি। শিশুদের কাছ থেকে তাদের বিষয়ে শুনতে হবে এবং নীতিনির্ধারণে তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলো আয়োজিত ‘শিশুর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে এ সভা আয়োজনে সহযোগিতা করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ও ইউনিসেফ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম এবং উপদেষ্টা গওহার নঈম ওয়ারা।

শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, কয়েকটি মন্ত্রণালয় শিশুদের নিয়ে কাজ করছে, বাজেট থাকলে শিশুরা উপকার পাবে। পরিসংখ্যান, গড়ের পেছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে থাকে। গড়ে দারিদ্র্য কমছে, প্রবৃদ্ধি বাড়ছে কিন্তু কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্য বাড়ছে।

শুরুতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিকল্পনা কমিশনের জিইডির উপপ্রধান মো. মনিরুল ইসলাম। তাতে বলা হয়, শিশুর বহুমাত্রিক দারিদ্র্য চিহ্নিত করতে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমান—এই তিনটি ক্ষেত্রকে ১০টি সূচকে পরিমাপ করা হয়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার ৪৮ শতাংশ শিশু দরিদ্র। দেশের শিশুদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য চিহ্নিতকরণে জরিপ পরিচালনা করতে পরিকল্পনা কমিশন ইউনিসেফের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। ইউনিসেফের সোশ্যাল পলিসি, ইভালুয়েশন, অ্যানালিটিক অ্যান্ড রিসার্চের প্রধান কার্লোস অকাসটা বলেন, দারিদ্র্য নির্মূলে বাংলাদেশের শক্তিশালী ও পরিষ্কার নীতিমালা রয়েছে। গৃহীত নীতিমালার প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে। দেশের ৪৬ শতাংশ শিশু দরিদ্র। অথচ, তাদের জন্য সরকারের সামাজিক সুরক্ষার মাত্র ৮ শতাংশ বরাদ্দ।

শিশুদের দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে বলে মনে করেন নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির। তিনি বলেন, শিশু ও তরুণদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ওই বয়সীদের যুক্ত করতে হবে। নাগরিক হিসেবে শিশুদের দায়িত্ব কী, সে বিষয়ে শিক্ষা দিতে হবে।

দেশের শিশুবিষয়ক আইনগুলোর কার্যকর প্রয়োগ নেই বলে মন্তব্য করেন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির শ্রম উপদেষ্টা কাজী সাইফুদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ছাড়া শিশুর দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন সম্ভব নয়। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত হলেও অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের জীবনমান বাড়ছে না বলে মন্তব্য করেন সেভ দ্য চিলড্রেনের শিশু সুরক্ষার পরিচালক লায়লা খন্দকার। তিনি বলেন, দ্রুত নগরায়ণের ফলে পারিবারিক বন্ধন ভেঙে পড়ছে। শিশুদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্য দূর করতে হলে শিশুদের চাহিদার বিষয়গুলো শিশুদের কাছ থেকে শুনতে হবে, সন্তানদের সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে হবে।

ইউনিসেফের সামাজিক নীতি বিশেষজ্ঞ হাসিনা বেগম বলেন, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি না পেলে শিশুরা ভবিষ্যতের সমাজ পরিবর্তনের কারিগর হতে পারবে না। শিশুদের দারিদ্র্য বিমোচনে শুধু নীতিমালা করলেই হবে না, কাঙ্ক্ষিত সেবা শিশুদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।

বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন পরিকল্পনা কমিশনের জিইডির প্রধান আবদুর রহিম।