জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা

গত ১ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলায় বিষখালী, পায়রা, বলেশ্বর নদ-নদীসহ বঙ্গোপসাগরের মোহনায় ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা ধরা হচ্ছে। আর তা করা হচ্ছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে!

শনিবার প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে একশ্রেণির অসাধু জেলে দিনরাত জাটকা ধরছেন। এটা শুধু ওই তিনটি নদীতে ঘটছে না। উপকূলীয় নদীতে জাটকা ধরার মহোৎসব চলে। যাঁদের এসব প্রতিরোধ করার কথা তাঁরাই উল্টো জাটকা ধরতে জেলেদের সহযোগিতা করলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদৌ কোনো লাভ আছে কি?

উপজেলার কাকচিড়া ও চরদুয়ানি ইউপির চেয়ারম্যান এবং বেশ কয়েকজন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে জেলেদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে জাটকা শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা, কোস্টগার্ডের সদস্য ও নৌ-পুলিশের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ রয়েছে। উৎকোচের বিনিময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জাটকা নিধনে জেলেদের সহায়তা করার বিষয়টি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যাঁরা এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।

তবে এ বিষয়ে সরকারের নীতি-পরিকল্পনায়ও ঘাটতি আছে। উপকূলীয় এলাকাসহ নদ-নদীতে আট মাস জাটকা শিকার নিষিদ্ধ হলেও সরকার জেলেদের খাদ্যসহায়তা দিচ্ছে মাত্র চার মাস-মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত। বাকি চার মাস জেলে পরিবারের সদস্যদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়। এ অবস্থার উত্তরণে সরকারের উচিত ওই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।

আশার কথা বাংলাদেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। রপ্তানির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা প্রত্যাহারেরও ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এতে জেলেরা উৎসাহিত হবেন। অন্যদিকে ইলিশের প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে হলে বা এ নিষেধাজ্ঞা যে উদ্দেশ্যে, সেই ফল পেতে হলে এ সময়ে জেলেদের পর্যাপ্ত সহায়তা ও বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রতি নজর দিতে হবে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় তাঁদের আরও বেশি সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, জাটকা শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযানে যাওয়ার ট্রলার, জ্বালানি এবং জনবল-সংকট রয়েছে। তাই নিয়মিত অভিযান চালানো যায় না। সরকারকে এসব দিকেও নজর দিতে হবে। এরপরও যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরেন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।