স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কমিউনিটি প্যারামেডিকের ভূমিকা

গত ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, প্রথম আলোর আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য খাতে দক্ষ কমিউনিটি প্যারামেডিকের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে প্রকাশ হলো।


আলোচনায় সুপারিশ

• দুই বছরের কোর্স করা কমিউনিটি প্যারামেডিকদের কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে

• কমিউনিটি ক্লিনিকে প্যারামেডিকদের নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার

• কমিউনিটি প্যারামেডিকদের রেফারেল যেন চিকিৎসকেরা মূল্যায়ন করেন, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন

• প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারামেডিকেরা যেন নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারেন, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি সহায়তা দরকার

• কমিউনিটি প্যারামেডিকদের পাঠ্যক্রমের সংশোধন বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম: আমাদের স্বাস্থ্য খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থে্যর ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জন করেছি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায় আর সে ক্ষেত্রে কমিউনিটি প্যারামেডিকদের আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আজ আলোচনা করব।

আবুল ফজল মো. এহসানুল হক
আবুল ফজল মো. এহসানুল হক

আবুল ফজল মো. এহসানুল হক

গত এক দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের মতো বড় অর্জন বাংলাদেশের রয়েছে। কিন্তু এই সাফল্যের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। সারা বিশ্বে যত মাতৃমৃত্যু হয়, তার ২ শতাংশ বাংলাদেশে হয় এবং বাংলাদেশে যত শিশু জন্মগ্রহণ করে, তার ৫০ শতাংশ এখনো অদক্ষ দাইয়ের হাতে হয়ে থাকে।
এর মূল কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর এখনো অভাব। গ্রামাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে প্রণীত কমিউনিটি প্যারামেডিক নীতিমালা এর মধ্যে অন্যতম।
এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাস করার পর দুই বছর মেয়াদি কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং দুই বছরের পূর্ণাঙ্গ এই কোর্স সম্পন্ন করার পর তঁারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবেন। বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এই কোর্সের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে মোট ২৩টি ইনস্টিটিউট ২০১১ সাল থেকে এই কোর্স পরিচালনা করা শুরু করে।
২০১১–১৫ সাল পর্যন্ত সুইসকন্ট্যাক্টের টারসান প্রকল্প কমিউনিটি প্যারামেডিক নামক স্বাস্থ্যসেবকদের প্রতিষ্ঠাকরণ এবং তাদের নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছে। টারসান প্রকল্পের ধারাবহিকতায়, নোভারটিস গ্লোবাল ও সুইসকন্ট্যাক্টের আর্থিক সহায়তায় ‘আস্থা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে আমরা কমিউনিটি প্যারামেডিকদের প্রতিষ্ঠিতকরণ, সেবার মানোন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের জন্য কাজ করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের তিনটি জেলা—নীলফামারী, পটুয়াখালী ও সুনামগঞ্জে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

দুই বছরের কোর্সের পর কমিউনিটি প্যারামেডিকরা  প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এই কমিউনিটি প্যারামেডিকরা রোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তাদের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান (রেফার) করতে সক্ষম।

এই কমিউনিটি প্যারামেডিকদের সরকার পরিবার পরিকল্পনা ও নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দিতে পারে। যেহেতু তঁাদের দুই বছরের কোর্স করা রয়েছে, ফলে তঁাদের অতিরিক্ত কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে না। ফলে দক্ষ নার্সের যে সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটি পূরণেও এটি সহায়ক হবে।

সুরাইয়া বেগম
সুরাইয়া বেগম

সুরাইয়া বেগম

কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের আওতায় হয়। তাদের খাতা মূল্যায়নের সময় আমরা লক্ষ করেছি যে শিক্ষার্থীরা চমৎকার লেখে।ইনস্টিটিউশনগুলোতে ভালো পড়ানো হয় বলেই পরীক্ষায় তারা ভালো লিখতে পারে। দুই বছরের পূর্ণাঙ্গ কোর্স করার পর তারা যদি আমাদের মূলধারার স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রবেশের সুযোগ পায়, তাহলে তাদের দক্ষতার সুফল সাধারণ মানুষ পাবে। ফলে আমি মনে করি, সরকারের উচিত এই কমিউনিটি প্যারামেডিকদের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া।
বিশেষ করে আমাদের প্রতিটি উপজেলায় যে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো রয়েছে, সেখানে কমিউনিটি প্যারামেডিকরা খুব কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে।
যেহেতু তাদের দুই বছরের কোর্স করা রয়েছে, ফলে তাদের নিয়োগের পর অতিরিক্তভাবে কোনো প্রশিক্ষণ দেওয়ার দরকার হবে না। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই এই কমিউনিটি প্যারামেডিকদের নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

এস এম মহিউদ্দিন কামাল
এস এম মহিউদ্দিন কামাল

এস এম মহিউদ্দিন কামাল

কমিউনিটি প্যারামেডিকদের পাঠ্যক্রম পরিবারকল্যাণ পরিদর্শকদের পাঠ্যক্রমের আদলে প্রণয়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ এই কোর্স করার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী পরিবারকল্যাণ পরিদর্শকের সমপর্যায়ের দক্ষতা অর্জন করে থাকেন।
কমিউনিটি প্যারামেডিকরা কোর্স শেষ করার পর কী করবেন, সেটি নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন। এই অনিশ্চয়তা দূর করার জন্য যোগ্যতা অনুসারে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে তঁাদের কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া দরকার।
কমিউনিটি প্যারামেডিকদের বর্তমান পাঠ্যক্রম যুগোপযোগী করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা দরকার। পাশাপাশি এই পাঠ্যক্রমে কম্পিউটার ও প্রযুক্তিশিক্ষাকে গুরুত্বসহকারে সংযুক্ত করা যেতে পারে। আমাদের দেশে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দক্ষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর বিরাট চাহিদা রয়েছে।
আমার জানামতে, এই কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বিশেষভাবে কোনো জনবল তৈরি করার কোনো সরকারি কর্মসূচি নেই। কমিউনিটি প্যারামেডিকরা এই চাহিদা পূরণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে যদি আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে পারি, তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে খুব সহজেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। আর সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি প্যারামেডিকের অবদান রাখার বিরাট সুযোগ রয়েছে।

মাশরেকা পারভীন
মাশরেকা পারভীন

মাশরেকা পারভীন

কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্সে আমরা সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসারে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা এবং প্রজননসেবার বিষয়ে শিক্ষালাভ করি। পাঠ্যক্রমে আমরা যে বিষয়গুলো শিখেছি, সেগুলো আমরা দক্ষতার সঙ্গে প্রয়োগ করতে সক্ষম।
আমরা গর্ভবতী মায়েদের রক্তচাপ পরিমাপ, তাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ নির্ণয়ের মতো পরীক্ষাগুলো করতে পারি। গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান, পরিচ্ছন্নতা ও শিশুর যত্ন সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান করতে আমরা সক্ষম। এ ছাড়া আমরা পরিবার পরিকল্পনাসহ প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক অন্যান্য সেবা দিতেও সক্ষম।
আমাদের পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে দুই বছরে আমরা যা শিখি, তার মাধ্যমে সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকের সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার মতো দক্ষতা আমাদের তৈরি হয়। গর্ভকালীন ও গর্ভ–পরবর্তী বিভিন্ন সেবা ও পরামর্শ প্রদান করার মাধ্যমে আমরা মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে অবদান রাখতে পারি।
আমরা যারা এই কোর্স করি, তারা নিজ নিজ কমিউনিটিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারি, যেখানে অনেক সময় অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা হয়তো যেতে চান না। আমরা কোর্স করার সময় নিরাপদ প্রসব করানোর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এই প্রশিক্ষণকে আরও জোরদার করলে আমরা গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকেই নিরাপদে প্রসব করাতে সক্ষম হব।

বাংলাদেশ সরকার এসএসসি পাস করার পর এই কোর্স করার মাধ্যমে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দক্ষতা অর্জনের সুযোগ করে দিয়েছে। এখন যদি আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পদায়নের সুযোগ করে দেয়, তাহলে আমরা দেশের গ্রামীণ জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে অবদান রাখতে পারব।

মো. খায়রুল ইসলাম
মো. খায়রুল ইসলাম

মো. খায়রুল ইসলাম

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা খাতে পেশাজীবীদের তদারক করার জন্য তিনটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ চিকিৎসা ও দন্ত চিকিৎসা পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ এবং বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল। এই তিনটি কর্তৃপক্ষ তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে কর্মরত পেশাজীবীদের কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করে এবং নিয়ন্ত্রণ করে।
কিন্তু আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকে যেসব স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছেন, তঁারা কোন কর্তৃপক্ষের আওতায় কাজ করছেন, সেটি পরিষ্কার করে বলা নেই। ফলে তঁাদের কাজের ও দক্ষতার কোনো রকম তদারক করার সুযোগ নেই।
কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবার মান রক্ষা করতে হলে ধীরে ধীরে এই ন্যূনতম দুই বছরের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারামেডিকদের সেখানে নিয়োগ দিতে হবে।
কমিউনিটি প্যারামেডিকরা দুই বছরের কোর্স শেষ করে যদি নিজেদের উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে এমনিতেই আরও অনেক শিক্ষার্থী এই কোর্স করতে আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

শুধু সরকারি চাকরির মাধ্যমে এই কোর্সকে জনপ্রিয় করার কথা না ভেবে নিজ উদ্যোগে সেবাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করে কীভাবে তঁাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়, সেদিকেও নজর দেওয়া দরকার।

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা
সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা

কমিউনিটি প্যারামেডিকদের সংজ্ঞায় কিছুটা সমস্যা রয়েছে বলে আমি মনে করি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞায়নে দুই ধরনের কর্মীর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে; একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী এবং আরেকটি প্যারামেডিকস।
কমিউনিটি প্যারামেডিকস সম্পর্কে কোনো ধরনের সংজ্ঞা সেখানে উল্লেখ নেই। যেহেতু এই কমিউনিটি প্যারামেডিকদের সরকার স্বীকৃতি প্রদান করেছে, সেহেতু তঁাদের কাজ, দক্ষতা ও দায়িত্ব কী হবে, সেটি যথাযথভাবে সংজ্ঞায়নের মাধ্যমে নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ইনস্টিটিউটগুলো থেকে যঁারা পাস করছেন, তঁাদের চর্চার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন এবং এই চর্চা কত দিনের হবে, সেই বিষয়েও সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
যেসব ইনস্টিটিউট এই কোর্স করাচ্ছে, তাদের যথাযথ তদারকি ও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য নির্দিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষ থাকতে হবে। এই কর্তৃপক্ষ ইনস্টিটিউটগুলোর শিক্ষা ও অন্যান্য কার্যক্রমের মান যাচাই-বাছাই করে স্বীকৃতি প্রদান করবে।
কমিউনিটি প্যারামেডিক হিসেবে যঁারা কোর্স করে বের হচ্ছেন, তঁাদের শিক্ষাটা যেন দক্ষতাভিত্তিক হয়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা পুরোপুরি দক্ষতানির্ভর কাজ, শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞানের মাধ্যমে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা সম্ভব নয়।

আমি মনে করি, দুই বছরের কোর্সের মাধ্যমে কমিউনিটি প্যারামেডিক তৈরির এই উদ্যোগ একটি ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগের যেসব জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে দূর করে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় এই প্যারামেডিকদের কাজে লাগানো দরকার।

অনির্বাণ ভৌমিক
অনির্বাণ ভৌমিক

অনির্বাণ ভৌমিক

কমিউনিটি প্যারামেডিক প্রকল্পটি স্বাস্থ্যসেবার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিরাটসংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর যে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এসএসসি পর্যন্ত পড়ার পর ঝরে যাচ্ছে, তাদের দক্ষতাভিত্তিক কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য কমিউনিটি প্যারামেডিক কর্মসূচি অত্যন্ত উপযোগী। এটিকে বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে দিতে হলে অবশ্যই সরকারি ও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে।
এই কোর্স করে সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পাশাপাশি এই প্যারামেডিকরা যেন নিজস্ব উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ২০১৭ সাল থেকে এই কোর্সের পাঠ্যক্রমে স্বাস্থ্যসেবায় উদ্যোগ বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে এসব স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের সরকারি নীতিগত পৃষ্ঠপোষকতা এবং বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে যেমন একটি বিরাটসংখ্যক মানুষের মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজন, তেমনি একটা বিরাট তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান তৈরি করাও জরুরি।
কমিউনিটি প্যারামেডিক কর্মসূচিটি এই দুই চাহিদার মধ্যে মেলবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে।

মো. জাহিদুর রহমান
মো. জাহিদুর রহমান

মো. জাহিদুর রহমান

কমিউনিটি ইনস্টিটিউটগুলোর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং আমাদের চাহিদা অনুযায়ী প্যারামেডিক তৈরি করে নেওয়ার একটা সুযোগ আমাদের তৈরি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা নির্ধারণ করে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালনা নিশ্চিত করতে পারলে এখান থেকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক আমরা তৈরি করতে সক্ষম হব। আর শিক্ষার মান ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আমরা যদি আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারি, তাহলে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও এই প্যারামেডিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ফলে আমি মনে করি, এই কর্মসূচি আমাদের জন্য একটি বিরাট সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মান ঠিক রাখতে হলে অবশ্যই সঠিক নীতিমালার মাধ্যমে একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে দিতে হবে এবং সব প্রতিষ্ঠান সেই মানদণ্ড মানছে কি না, তা নিয়মিত তদারক করতে হবে।
এই কমিউনিটি প্যারামেডিকরা নিজ নিজ এলাকায় থেকেই এই কোর্সে অংশ নিচ্ছেন এবং কোর্স শেষ করে নিজের এলাকায় ফিরে যাচ্ছেন। ফলে এর মাধ্যমে এলাকাভিত্তিক দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মী তৈরির একটি বিরাট সুযোগ রয়েছে।
এসব প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা কমিউনিটি প্যারামেডিকরা যেন নিজেদের এলাকায় সরকারিভাবে অথবা নিজেদের উদ্যোগে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারে, সে সুযোগ করে দেওয়া দরকার।

মীর রবিউল করিম
মীর রবিউল করিম

মীর রবিউল করিম

আমাদের এই কোর্সে যঁারা শিক্ষালাভ করেন, তঁাদের দক্ষতা নিশ্চিত করার জন্য দুই বছরের কোর্সের শেষের চার মাস তঁাদের প্রত্যেককে একটি সরকারি হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে তঁারা স্বাস্থ্যসেবার সব বিষয়ে প্রশিক্ষিত হয়ে থাকেন। এই প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হচ্ছে কি না, সেটি আমরা ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে গুরুত্বসহকারে তদারক করে থাকি।
আমাদের ইনস্টিটিউটগুলোতে যঁারা শিক্ষকতা করেন, তঁারা পূর্ণকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত থাকেন। কোনো প্রকার খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে আমরা কোর্স পরিচালনা করি না। আর আমাদের সব শিক্ষকই সুইসকন্ট্যাক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ফলে শিক্ষার মান নিয়ে আমরা কোনো প্রকার ছাড় দিতে রাজি নই।
আমরা যখন প্রথম এই কোর্স পড়ানো শুরু করি, তখন আমাদের চিন্তা ছিল তঁারা পাস করার পর কোথায় কাজ করবেন। কিন্তু প্রথম দুটি ব্যাচ পাস করে বের হওয়ার পর আমরা দেখলাম, তঁারা নিজেদের এলাকায় গিয়ে খুব দক্ষতা ও সফলতার সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারছেন।
গ্রামীণ এলাকার অদক্ষ কোয়াক ও দাইরা যে কাজগুলো করতেন, সেগুলো আমাদের কমিউনিটি প্যারামেডিকরা খুব দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন এবং সাধারণ মানুষ তঁাদের দক্ষতার ওপর ভরসা করছে।

জাফর আহ্‌মাদ হাকিম
জাফর আহ্‌মাদ হাকিম

জাফর আহ্‌মাদ হাকিম

এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দুই বছরের কোর্সের মাধ্যমে দক্ষ কমিউনিটি প্যারামেডিক হিসেবে গড়ে তোলার এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। এর মাধ্যমে দেশে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরির মাধ্যমে বেকার সমস্যা দূরীকরণ সম্ভব।
এই কমিউনিটি প্যারামেডিকদের দক্ষতার ভিত্তিতে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার চাইলে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে কমিউনিটি ক্লিনিকে তঁাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। এ ছাড়া পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে সরাসরি তঁাদের আবেদনের সুযোগ করে দিতে পারে। এ জন্য শুধু নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের শর্তে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
দুই বছরের এই কোর্স করে কমিউনিটি প্যারামেডিকরা ইতিমধ্যেই গ্রামপর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছেন। তঁাদের দক্ষতাকে সরকারিভাবে কাজে লাগানো উচিত বলে আমি মনে করি।সরকারি পর্যায়ে তঁাদের কাজের সুযোগ সৃষ্টির দেওয়ার জন্য নিয়োগপ্রক্রিয়ায় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

মোহাম্মদ শরীফ
মোহাম্মদ শরীফ

মোহাম্মদ শরীফ

আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গ্রামাঞ্চলে বিশাল পরিসরে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে। আমি নিজে একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখেছি, সেখানে সারা দিনে ২৩৫ জন রোগী এসেছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যসেবার জন্য। কিন্তু এই কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
দুই বছরের কোর্স করে কমিউনিটি প্যারামেডিকরা খুব সহজে ও দক্ষতার সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। আর তঁাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নিয়োগ দিলে সেবার মানও বাড়বে।কমিউনিটি প্যারামেডিকদের পাঠ্যক্রমে পুষ্টি ও বাল্যবিবাহ রোধ করার বিষয়ে কিছু প্রশিক্ষণ যুক্ত করা উচিত। বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর বড় একটি কারণ হলো ১৮ বছরের কম বয়সে গর্ভধারণ করা। ফলে বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে পারলে মাতৃমৃত্যুও কমে আসবে।
আমরা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু নিয়োগ পরীক্ষায় যেন এই দুই বছরের কোর্স করা প্যারামেডিকরা অংশ নিতে পারেন, সেই বিষয় উল্লেখ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি।
আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিকের নিয়োগেও তঁাদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া উচিত।

আমাদের দেশে উপজেলা পর্যায়ের নিচে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে চিকিৎসক দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার মতো সক্ষমতা আমাদের এখনো তৈরি হয়নি।

কোনো চিকিৎসকই ইউনিয়ন পর্যায়ে গিয়ে সেখানে থেকে চিকিৎসাসেবা দিতে আগ্রহী হবেন না। ফলে ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে হলে আমাদের দক্ষ প্যারামেডিকদের কাজে লাগাতে হবে।

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন
মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আজ একটি ভালো পর্যায়ে এসে দঁাড়িয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থার এই উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকের অবদান সবচেয়ে বেশি।
দেশে বর্তমানে মোট ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৪ হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিকল্পনা কেন্দ্র চালু রয়েছে। এই কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে উন্নত স্বাস্থ্যসেবাকে পিছিয়ে পড়া গ্রামীণ জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
আর পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে দক্ষ প্যারামেডিকদের নিয়ে যেতে পারলে এই স্বাস্থ্যসেবার মান অবশ্যই বাড়বে। এ ছাড়া জটিল রোগের ক্ষেত্রে দক্ষ প্যারামেডিকরা একজন রোগীকে উপযুক্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করতে পারবেন।
কমিউনিটি প্যারামেডিকরা যেহেতু এলাকাভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবেন, সেহেতু তঁাদের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ প্রদান করা হলে সরকারকে একটি ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালে একজন চিকিৎসককে আর নিয়োগ দিতে হচ্ছে না।
কমিউনিটি ক্লিনিকে এই প্যারামেডিকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করবেন এবং জটিল রোগের জন্য জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে রোগীকে নির্দেশনা (রেফার) দিয়ে দেবেন।
এতে করে গ্রামীণ জনগণের কাছে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও কার্যকরভাবে পৌঁছে দেওয়া যাবে। আর কমিউনিটি প্যারামেডিকরা যেসব রোগীকে রেফার করে দিচ্ছেন, তাদের যেন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা দেখেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

আমাদের দেশের চিকিৎসকদের মধ্যে এখনো রেফারেন্সের মাধ্যমে আসা রোগী দেখার মানসিকতা গড়ে ওঠেনি। এই মানসিকতা তৈরির লক্ষ্যে কাজ
করতে হবে।

আমি মনে করি, এই দক্ষ কমিউনিটি প্যারামেডিকদের কীভাবে স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, সেই বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ভাবা উচিত এবং আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

জাহিদ মালেক
জাহিদ মালেক

জাহিদ মালেক

বর্তমান সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে। আর স্বাস্থ্য খাতে এই উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী উদ্যোগ কমিউনিটি ক্লিনিক বিশেষ অবদান রেখেছে। তঁার এই উদ্যোগ দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে, আমাদের পরিকল্পনা আছে মোট ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক তৈরি করার।
কমিউনিটি ক্লিনিক অনেক মা ও শিশুর জীবন বঁাচাতে ভূমিকা রেখে চলেছে। কারণ, এই ক্লিনিকগুলোতে ৩০ রকমের ওষুধ বিনা মূল্যে প্রদান করা হয় এবং পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শও প্রদান করা হয়।
স্বাস্থ্য খাতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমাদের যথেষ্ট পরিমাণে হয়েছে। এখন আমাদের যেটি খুব প্রয়োজন তা হলো দক্ষ জনবল। প্রতিটি হাসপাতাল, প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটি বিভাগে আমাদের জনবলের সংকট রয়েছে। দক্ষ জনবল না থাকলে অবকাঠামো যতই উন্নত হোক না কেন, মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা যায় না।
এই সমস্যা দূর করার জন্য আমরা ইতিমধ্যেই চিকিৎসক, নার্স, মিডওয়াইফ, স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। সব নিয়োগ সম্পন্ন হলে জনবলের সংকট দূর করা সম্ভব হবে আশা করি।

শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে আছি। এর জন্য দক্ষ জনবলের অভাবই দায়ী বলে আমি মনে করি।

আমরা অনেক প্রকল্প, অনেক কার্যক্রম গ্রহণ করলেও দক্ষ জনবলের অভাবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারছি না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে আমরা তিন হাজার মিডওয়াইফ তৈরি করছি। ইতিমধ্যেই আমাদের দুই হাজার মিডওয়াইফকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে গেছে। সারা দেশের সব প্রসূতি মায়ের সেবা দিতে হলে আমাদের মিডওয়াইফ প্রয়োজন ২২ হাজার। ফলে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি এখনো।

তবে এ ক্ষেত্রে কমিউনিটি প্যারামেডিকরা ভূমিকা রাখতে পারেন বলে আমি মনে করি। বেসরকারিভাবে তঁারা দুই বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে সরকারি হাসপাতালে চর্চা করে দক্ষতা অর্জন করছেন। যঁারা বর্তমানে তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন, তঁাদের চেয়ে এই কমিউনিটি প্যারামেডিকরা ভালো সেবা দিতে পারবেন বলে আমি মনে করি।

এখন তঁাদের সরকারিভাবে নিয়োগ দিতে হলে নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সেই পরিবর্তন এনে এবং কমিউনিটি প্যারামেডিকদের দক্ষতা যাচাই করে তঁাদের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি বিবেচনা করব।

আব্দুল কাইয়ুম: কমিউনিটি ক্লিনিকের কল্যাণে আজ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার যে লক্ষ্য সেটা অনেকটাই অর্জিত হয়েছে। আলোচনায় সবাই একমত পোষণ করেছেন যে কমিউনিটি ক্লিনিক-ব্যবস্থায় কমিউনিটি প্যারামেডিকদের যুক্ত করলে সেটি সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন

জাহিদ মালেক: সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন: প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন

মোহাম্মদ শরীফ: পরিচালক, এমসিএইচএস অ্যান্ড এলডি-এমসিআরএএইচ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

অনির্বাণ ভৌমিক: কান্ট্রি ডিরেক্টর, বাংলাদেশ সুইসকন্ট্যাক্ট

আবুল ফজল মো. এহসানুল হক: প্রজেক্ট ম্যানেজার,আস্থা প্রকল্প, সুইসকন্ট্যাক্ট          

জাফর আহ্‌মাদ হাকিম: সিনিয়র অ্যাডভাইজার, আস্থা প্রকল্প, সুইসকন্ট্যাক্ট

সুরাইয়া বেগম: রেজিস্ট্রার, বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল (বিএনএমসি)

সৈয়দ আবু জাফর মোহাম্মদ মুসা: বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল

মো. খায়রুল ইসলাম: কান্ট্রি ডিরেক্টর, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ

মো. জাহিদুর রহমান: সচিব, স্টেট মেডিকেল ফ্যাকাল্টি অব বাংলাদেশ

এস এম মহিউদ্দিন কামাল: প্রিন্সিপাল, রাড্ডা প্যারামেডিক ইনস্টিটিউট

মীর রবিউল করিম: মহাসচিব, বাংলাদেশ সিপিটিআই অ্যাসোসিয়েশন

মাশরেকা পারভীন: কমিউনিটি প্যারামেডিক, রাড্ডা এমসিএইচ–এফপি সেন্টার, মিরপুর

সঞ্চালক

আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো