সভা-সমাবেশের অধিকার

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির আলোচনার উদ্যোগে দেশের রাজনীতিতে সুস্থধারা ফিরে আসার যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল, তা সম্ভবত তিরোহিত হতে যাচ্ছে নতুন বছরের শুরুতেই। দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বার্ষিকীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একাধিক কর্মসূচি পালন করলেও বিরোধী দল বিএনপিকে সেটি করার অনুমতি না দেওয়া দুঃখজনক।
৭ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি না পেয়ে বিএনপি দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ ধরপাকড় শুরু করে এবং কার্যালয় কার্যত বেষ্টন করে রাখে। সংবিধানে সভা-সমাবেশ করার অধিকার যেকোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের আছে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন কোনো তথ্য-প্রমাণ দাখিল করা হয়নি যে বিএনপি আহূত সমাবেশে আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কিছু ঘটতে পারে। তা সত্ত্বেও একটি দলের অফিস এভাবে ঘিরে ফেলা শুধু রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতার প্রকাশ নয়, গণতান্ত্রিক রীতিরও পরিপন্থী।
সমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে বিএনপি গতকালও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে বাধার মুখোমুখি হয়েছে। কোনো কোনো স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বিকার ছিল। এর আগে ৫ জানুয়ারিও একই ঘটনা ঘটেছে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কারও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে বাধা দেওয়া যায় না।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কড়া সমালোচনা করে থাকেন। কিন্তু বিএনপি যখন ঘোষণা দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিচ্ছে, তখন তাতে বাধা দেওয়ার অর্থ হলো রাজনীতিকে ফের নৈরাজ্য ও সহিংসতার পথে ঠেলে দেওয়া, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
অতএব, বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হোক। একযাত্রায় দুই ফল হতে পারে না। এর আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে ঢাকায় সমাবেশ করার ক্ষেত্রে নানা রকম শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। বিএনপি সেই শর্ত মেনেই কর্মসূচি পালন করেছে। কেবল বিরোধী দল নয়, সব দলের সভা-সমাবেশ করতে সেই শর্ত আরোপ করতে হবে, যাতে জনগণের ভোগান্তি কম হয়।
বিএনপির আমলে আওয়ামী লীগ অফিস আর আওয়ামী লীগের আমলে বিএনপির অফিস ঘেরাও থাকবে, এই অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা ও সহাবস্থান আশা করা যায় না।