দখল দূষণে নদ-নদী মৃতপ্রায়

প্রতিবছরের মতো এ বছরও ১৪ মার্চ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে নদীর প্রতি সবার দায়বদ্ধতার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া।

কিন্তু দেশে এখন নদ-নদীগুলোর যে পরিস্থিতি তাতে মনে হয় না যে কারও নদীর প্রতি কোনো দায় আছে। নদীকৃত্য তো নয়, যেন নদীর শেষকৃত্য করা হচ্ছে। দিনে দিনে আমরা মেরে ফেলছি নদীগুলোকে। সরকারের অবহেলা ও ভুল নদীশাসন, উজানে ভারতের পানি প্রত্যাহার এবং দখল ও দূষণের কারণে এখন অস্তিত্বসংকটে রয়েছে দেশের বেশির ভাগ নদী।

নদীকৃত্য দিবসে প্রথম আলোর দুটি সংবাদের শিরোনাম উদ্বেগজনক। একটি শিরোনাম হচ্ছে ‘তিন নদীর মোহনায় চর, পরিবেশে বিরূপ প্রভাব’, অপর শিরোনাম হচ্ছে ‘দখল, দূষণে মরে যাচ্ছে ময়ূর নদ’।

এই দুটি সংবাদে দক্ষিণাঞ্চলের পায়রা, বিষখালী, বলেশ্বর ও ময়ূর—এই চার নদ-নদীর দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে নদ-নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। এগুলো ছাড়াও বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, শীতলক্ষ্যাসহ দেশের আরও বহু নদ-নদী এখন হারিয়ে যাওয়ার পথে।

নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বড় বড় কলকারখানা, নদীতে শত শত বাঁধ। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদীকে ব্যবহার করা হচ্ছে। নদী ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা। বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ—এখন এ কথা বলার আর কোনো উপায় নেই। এ দেশ এখন নদীবৈরী দেশে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের নদীব্যবস্থার ওপর প্রথম আঘাত আসে ইংরেজ আমলের ভুল নদী ব্যবস্থাপনায়। এরপর ষাটের দশকে সবুজ বিপ্লবের নামে ক্ষতিকর বাঁধ, আশির দশকে বিশ্বব্যাংকের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নদীগুলোর ভালোর বদলে মন্দই করেছে বেশি। গত দুই দশকে শিল্পকারখানা ও বাণিজ্যের প্রসারের জন্য নদীর দখল ও দূষণ ঘটেছে ব্যাপক হারে।

আমাদের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি, শিল্প-সাহিত্য—সবকিছুর সঙ্গে আমাদের নদীগুলো সম্পর্কযুক্ত। হাজার বছর ধরেই এসব নদ-নদী আমাদের কৃষি, প্রকৃতি ও অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। নদী রক্ষা না করলে তাই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে না।

এ জন্য নদী রক্ষাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এ জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে নদ-নদী বাঁচাতে খুব দ্রুত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের গতি যেমন ত্বরান্বিত করতে হবে, তেমনি এসব কাজের জবাবদিহি বাড়াতে হবে। নদী দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।