বড় নদীতে ছোট নৌযান

বড় নদীতে স্পিডবোট ও ছোট ট্রলার চলাচলের নিয়ম নেই। কিন্তু দেশের বড় বড় নদীতে নিয়ম লঙ্ঘন করে বেপরোয়া গতিতে চলছে এসব নৌযান। 

এতে করে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু এসব দেখার যেন কেউ নেই।

১৫ মার্চ প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘনা, কীর্তনখোলা ও তেঁতুলিয়া নদীতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে প্রচুরসংখ্যক স্পিডবোট, ট্রলার ও লঞ্চ চলাচল করছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরের বিধি অনুযায়ী, বড় নদীতে ২০ মিটারের নিচের লঞ্চ ও ট্রলার চলাচল নিষিদ্ধ। কিন্তু এ নিষেধ মানা হচ্ছে না। অবাধে চলছে এ ধরনের নৌযান। একটি স্পিডবোটে আটজনের বেশি যাত্রী ওঠানোর নিয়ম না থাকলেও এর চেয়ে বেশি যাত্রী ওঠানো হয়। ট্রলারগুলোও অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বেপরোয়া গতিতে চলাচল করছে।

আবহাওয়া খারাপ হলে বা নদী হঠাৎ উত্তাল হয়ে পড়লে এসব নৌযানের দুর্ঘটনায় পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে স্পিডবোট উল্টে একজন চিকিৎসক ও তাঁর পরিবারের চারজন মারা যান। এর আগেও কয়েকটি দুর্ঘটনায় অনেক প্রাণহানি হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

নদীপথের শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের। কিন্তু তারা যে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, তা তো বোঝাই যাচ্ছে। কোথাও কোনো নজরদারি নেই। প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুর ও পুরো বরিশাল বিভাগে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মাত্র একজন পরিদর্শক রয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএর একজনও নেই। ফলে নিয়ম না মেনে বেপরোয়াভাবে চলা এসব নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো জনবলও নেই। বোঝাই যাচ্ছে দ্রুত লোকবল সংকটের সমাধান করা না গেলে কোনোভাবেই এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের যে হিসাব তুলে ধরা হয়েছে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। এই দুই প্রতিষ্ঠানের হিসাব অনুযায়ী, দৈর্ঘ্যে ২০ মিটারের নিচে এমন প্রায় ১০ হাজার লঞ্চ, ট্রলার ও স্পিডবোট দেশের নদীগুলোতে চলাচল করছে। এগুলোর প্রায় অর্ধেক
চলাচল করছে বরিশাল, ভোলা ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য এলাকার নদীতে। আর ১৬ অশ্বশক্তির নিচের নৌযানের নিবন্ধন লাগে না বলে এগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।

নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এসব ছোট ছোট নৌযান বড় নদীতে চলাচল তো করছেই। এর পাশাপাশি এগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা না নিয়ে চালনা ও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। বড় নদীতে এসব নৌযানের চলাচল নিয়ন্ত্রণের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নদীগুলোতে নজরদারি বাড়াতে লোক নিয়োগ করতে হবে। নিয়ম লঙ্ঘনকারী নৌযানগুলোর মালিকদের আইনের আওতায় আনতে হবে।