পাহাড়ে অশনিসংকেত

গত রোববার রাঙামাটির সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে দুই পাহাড়ি নেত্রীর অপহৃত হওয়া এবং বাড়িটি পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা খুবই উদ্বেগজনক। অপহৃত দুজন হলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফের নারী সংগঠন হিল উইমেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা এবং রাঙামাটি শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমা। তাঁদের সঙ্গে থাকা আরও দুই পাহাড়ি নেতা বাড়িতে ছিলেন। সন্ত্রাসীরা গোলাগুলি শুরু করলে তাঁরা পালিয়ে যান।

এ ঘটনার পেছনে আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিরোধ নাকি অন্য কোনো রহস্য আছে, সেটি তাঁরা উদ্ধার হওয়ার পরই পরিষ্কার হবে। অভিযোগ আছে, ইউপিডিএফ থেকে বের হয়ে যাওয়া একটি গ্রুপের সদস্যরা এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। বরং অপহৃত মন্টি চাকমার ভাই জানিয়েছেন, সামাজিকভাবে তাঁদের উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগেও পাহাড়ে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের পণবন্দী দিয়ে অপহৃত ব্যক্তিদের উদ্ধার করা হয়েছে। আবার অনেককে জীবিত উদ্ধার করা যায়নি।

রাজনীতি যখন নীতি-আদর্শের চেয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের কাছে বন্দী হয়ে পড়ে, তখন প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও অপহরণের ঘটনা ঘটে। এ হলো মুদ্রার এক পিঠ। অপর পিঠ হলো, সেখানে জননিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও নিয়োজিত আছেন। ১৯৯৭ সালে সইকৃত পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা বাহিনীর সব স্থায়ী ক্যাম্প পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি জননিরাপত্তার দোহাই দিয়ে। যে কায়দায় দুই পাহাড়ি নেত্রীর অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তা প্রমাণ করে যে সেখানে মানুষ নিরাপদ নয়।

 ইউপিডিএফ হিল উইমেন ফেডারেশনের দুই নেত্রীকে উদ্ধারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। আজ বুধবার সড়ক ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিয়েছে তারা। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্য হবে দ্রুত তাঁদের উদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগ করা। অপহরণকারীরা যদি মুক্তিপণ দাবি করে থাকে তাহলে তাদের খুঁজে বের করা কঠিন নয়। কিন্তু যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে পাহাড়ের বাসিন্দা তো বটেই সারা দেশের মানুষের কাছেই ভুল বার্তা যাবে। সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা লক্ষ করা গেছে, সেটি আরও বাড়বে। জননিরাপত্তা মারাত্মক হুমকিতে পড়বে।

এসব ঘটনা পাহাড়ে চুক্তি বাস্তবায়নের দাবিতে যে আন্দোলন হচ্ছে, তা–ও পিছিয়ে দেবে। এ ব্যাপারে পাহাড়ি নেতাদেরও সজাগ থাকতে হবে। মত ও পথের ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর স্বার্থকেই তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। আর সরকারকেও উপলব্ধি করতে হবে, পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চুক্তি বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।