ফেসবুকে তথ্য সুরক্ষা

মার্ক জাকারবার্গ
মার্ক জাকারবার্গ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বৃহত্তম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক থেকে তার গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি চুরি হওয়ার অভিযোগ অনেক পুরোনো, কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তা স্বীকার করছিল না। সম্প্রতি ‘কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা’ নামের এক ব্রিটিশ-আমেরিকান রাজনৈতিক পরামর্শ প্রতিষ্ঠানের একজন হুইসেলব্লোয়ারের তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার পর ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান মার্ক জাকারবার্গ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে ফেসবুক থেকে ৮ কোটির বেশি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হয়ে গেছে। আমাদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো এই ৮ কোটির মধ্যে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশের নাগরিক।

কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার গবেষণা বিভাগের সাবেক পরিচালক ক্রিস্টোফার ওয়াইলি যুক্তরাজ্যের দৈনিক গার্ডিয়ান-এর কাছে এমন কিছু গোপনীয় নথি হস্তান্তর করেন, যেখানে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এবং ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে প্রভাবিত করার কাজে ব্যবহার করার বিবরণ রয়েছে। গার্ডিয়ান এ সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর থেকে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কেমব্রিজ অ্যানালিটিকাকে নিষিদ্ধ করেছে, জাকারবার্গকে নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে এবং দেশে দেশে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি আরও জোরালোভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।

এতকাল এমন একটি ধারণা প্রচলিত ছিল যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি তাঁদের অনুমতি ছাড়াই বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার তথ্য ফাঁস হওয়ার পর জানা গেল, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেও এই অনৈতিক কাজটি করা হয়। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ‘একাডেমিক’ গবেষণার কথা বলে বিপুলসংখ্যক ফেসবুক ব্যবহারকারীর মনস্তত্ত্ব ও ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে প্রোফাইল তৈরি করেছে এবং সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা একই পদ্ধতিতে ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট গণভোটের সময়ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিল। উভয় নির্বাচনে ভোটারদের প্রভাবিত করার কাজে মিথ্যা তথ্য ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশে সামনে দশম জাতীয় নির্বাচন। যে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফেসবুক থেকে বেহাত হয়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার কাজে ব্যবহার করা হবে কি না, তা আমরা জানি না। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের উচিত নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসা এবং তাদের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। শুধু ফেসবুক নয়, গুগল, ইয়াহু, আমাজনসহ অনেক ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার সমস্যা আছে। এসব সমস্যা দূর ও সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য আইনি কাঠামো গড়ে তোলার বিষয়েও চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে।