গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালপল্লি

২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ চিনিকলের বাণিজ্যিক খামারে আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক–কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল নিহত ও অন্তত ২০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের পর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে তাদের বাড়িঘর লুটপাট, ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেয়। একটি স্কুলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ওই বছরের ১৬ নভেম্বর সাঁওতালদের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতনামা ৬০০ জনকে আসামি দেখিয়ে মামলা করা হয়। ২৬ নভেম্বর সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জন এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করা হয়। ঘটনার পর ১৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এসব মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। এসব মামলা এখন পিবিআইয়ের তদন্তাধীন এবং মাত্র দুজন আসামিকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সাঁওতালপল্লিতে তাণ্ডব চালানোর পরপরই এক ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে পুলিশের দুই সদস্য সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছেন। ওই দুই সদস্যকে শনাক্ত করার পর তাঁদের শাস্তি হিসেবে শুধু বদলি করা হয়েছে। তাঁরা এখন বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। এর চেয়ে হতাশাজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?

আদিবাসী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে স্মারকলিপি পাওয়ার পর জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল বলেছেন, এসব দাবি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। স্কুল পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এলাকা পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে সাঁওতালদের এসব দাবি পূরণের জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? কবে তারা ন্যায়বিচার পাবে, যেখানে মামলাগুলোরই কোনো অগ্রগতি নেই? চিনিকলের ইজারাকৃত পূর্বপুরুষের জমি থেকে সাঁওতালদের যে কায়দায় উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা যে আইনসংগত হয়নি, গোড়া থেকেই আমরা তা বলে আসছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, বিষয়টি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলাগুলোর তদন্তেই যদি কোনো অগ্রগতি না থাকে, তাহলে সত্য প্রমাণ হবে কীভাবে?

আমরা চাই সাহেবগঞ্জের সাঁওতালপল্লিতে তাণ্ডব চালানোর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি দেওয়া হোক এবং সাঁওতালদের দাবিদাওয়া পূরণ করা হোক।