বাসে যৌন হয়রানি

রাজধানীতে চলন্ত বাসে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টার ঘটনায় উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে অভিনব উপায়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তা যেকোনো ধরনের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে উৎসাহিত করবে। কোনো সহিংসতার পথ না ধরে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার জন্য ওই শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ।

প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রী গত শনিবার তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠলে চালকের সহকারী ও কন্ডাক্টর তাঁকে যৌন হয়রানি করার চেষ্টা করেন। তাঁদের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ছাত্রীটি একপর্যায়ে বাসচালকের সহকারী ও কন্ডাক্টরকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে বাস থেকে নেমে যান। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর স্বামী রোববার বিকেলে বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জানানোর পরই শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। শিক্ষার্থীরা যাত্রাবাড়ী থেকে আবদুল্লাহপুরগামী তুরাগ পরিবহনের বাসগুলো উত্তরায় পৌঁছালেই সেগুলো থামিয়ে দেন। তাঁরা মোট ৩৫টি বাস আটকে দেন এবং ঘোষণা দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা না হচ্ছে, ততক্ষণ তাঁদের আন্দোলন চলবে। সোমবার রাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করার পর শিক্ষার্থীরা আটকে রাখা বাসগুলো ছেড়ে দেন।

শিক্ষার্থীরা এভাবে আন্দোলন না করলে হয়তো এত দ্রুত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হতো না। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার আমাদের মনে সাময়িকভাবে স্বস্তি দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু উদ্বেগ দূর হয়নি। কেননা শেষ পর্যন্ত যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে, সেই ভরসা করা কঠিন। অন্যদিকে সাজা দেওয়া হলেই যে গণপরিবহনে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না, তা-ও হলফ করে বলা যাচ্ছে না। সম্প্রতি আলোচিত রূপা ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার পরিবহনশ্রমিককে ফাঁসি এবং একজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেই চলেছে।

চলতি এপ্রিল মাসেই লাব্বাইক পরিবহনের একটি বাসে বাংলাদেশ লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন পরিবহনশ্রমিকেরা। গত মার্চ মাসে নিউ ভিশন নামে একটি বাসে দুই নারীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করা হয়। একই মাসে এক কলেজছাত্রী একটি ফাঁকা বাসে উঠলে একই রকম ঘটনার শিকার হন। শুধু যে বাসে নারীদের হয়রানি করা হচ্ছে তা নয়, মার্কেটে, পথেঘাটে, কর্মস্থলে নারীরা যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। তবে ইদানীং দেখা যাচ্ছে নারীরা সাহস করে এসব ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। এটা একটা আশার দিক। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর।

এটা দুর্ভাগ্যজনক যে দেশে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে এখনো কোনো আইন হয়নি। আমরা আশা করব যে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেবে।