নিরাপদ খাদ্য সবার জন্য

৮ এপ্রিল ২০১৮, প্রথম আলোর আয়োজনে ও সুপার স্টোর চেইন শপ স্বপ্নের সহযোগিতায় ‘নিরাপদ খাদ্য সবার জন্য’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হলো।

আলোচনায় সুপারিশ
 নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কৃষককে স্বাস্থ্যসম্মত চাষাবাদ সম্পর্কে সচেতন করা প্রয়োজন
 যথাযথ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অনুমোদন ছাড়া ফসলে কীটনাশক ব্যবহার করা যাবে না
 খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ জরুরি
 খাদ্যের মান ঠিক রাখতে সরবরাহকারীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে
 ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে
 খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিক্রয় ও ভোক্তার খাদ্য গ্রহণ—প্রতিটি পর্যায়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
 নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সব শ্রেণি–পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টি বর্তমানে বেশ আলোচিত। নানাভাবে খাদ্যে ভেজাল ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ এ খাবার গ্রহণ করছে। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। মানুষের সুস্থ জীবনের জন্য নিরাপদ খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই।
সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, এটাই আজকের আলোচনার উদ্দেশ্য। এখন এ বিষয়ে আলোচনা করবেন মো. মাহদী ফয়সাল

মো. মাহদী ফয়সাল
মো. মাহদী ফয়সাল


মো. মাহদী ফয়সাল
বিশুদ্ধ খাদ্যদ্রব্য সুলভে সরবরাহ করার উদ্দেশ্যে ২০০৮ সালে স্বপ্ন বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। সারা দেশে স্বপ্নের ৭৫টি বিপণনকেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪টি ঢাকা শহরে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় ১৫ লাখ ভোক্তা নিয়মিত পণ্য ক্রয় করেন।
দেশের ২ হাজার ৭৯২ জন কৃষকের কাছ থেকে স্বপ্ন নিরাপদ শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস নিজস্ব উদ্যোগে সংগ্রহ করে। স্বপ্নে চার হাজারেরও বেশি কর্মী কাজ করছেন। এসব কর্মী স্বপ্নকে নিরাপদ পণ্য জোগানে সহায়তা করেন।
স্বপ্নের পণ্যের প্রায় ৪৬ শতাংশ সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা না থাকায় ১১ থেকে ১৫ শতাংশ খরচ কমানো যায়, যার একটি অংশ কৃষককে প্রদান করা হয়। পাশাপাশি পণ্যের গুণগত মানও ঠিক থাকে।
সম্প্রতি খাদ্যপণ্যের চাষাবাদে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কীটনাশক নানাভাবে আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলছে। দেখা দিচ্ছে ফুসফুস ক্যানসার, লিউকেমিয়াসহ নানা ধরনের জটিলতা।
দেশের ৭৫ ভাগ কৃষক জানেন কীটনাশকে ক্ষতি হয়, তারপরও ফসল কম হবে এই আশঙ্কায় তাঁরা কীটনাশক ব্যবহার করেন। বেশি লাভবান হওয়ার ইচ্ছাও কৃষককে কীটনাশক ব্যবহারে উৎসাহী করে তুলছে।
কীটনাশক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না থাকায় সমস্যা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করছে। কৃষক, খুচরা বিক্রেতা এবং ভোক্তা কীটনাশক সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানার কারণেও এই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি স্বপ্ন যশোর ও ঝিনাইদহ এলাকায় ২০০ কৃষককে কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা দেয়।
এই সমস্যা সমাধানে নীতিনির্ধারক, গবেষক, গণমাধ্যম, বেসরকারি খাত ও কৃষকদের সম্পৃক্ত করে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। ক্রেতাদের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়ানো উচিত।

সাব্বির হাসান নাসির
সাব্বির হাসান নাসির


সাব্বির হাসান নাসির
২০১৭ সালে গ্লোবাল গ্যাপের (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস) প্রধান নির্বাহী প্রথমে স্বপ্নের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ও গ্লোবাল গ্যাপ সম্পর্কে জানান। স্বপ্নের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত মাঠ থেকেই পণ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে।
কিন্তু মাঠে কীভাবে ফসল উৎপন্ন হচ্ছে, এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অবগত নয়। মাঠের কার্যক্রম জানার জন্য পরবর্তী সময়ে স্বপ্ন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে স্বাস্থ্যসম্মত চাষাবাদের দিকে নজর দেয়। কারণ, স্বপ্ন বিশ্বাস করে, সুলভ মূল্যে নিরাপদ খাদ্য মানুষের অন্যতম অধিকার।
স্বপ্নের কোনো পণ্য সম্পর্কে অভিযোগ পাওয়া গেলে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পণ্যটি বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের নির্ধারিত খাদ্যের মানের সঙ্গে বৈশ্বিক মান অর্জন করা স্বপ্নের লক্ষ্য। সে লক্ষ্যে স্বপ্ন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানি করতে চাইলে বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করা জরুরি। এটা অর্জনের জন্যও স্বপ্ন প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কোনো সহজ কাজ নয়। সবাইকে নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের উচিত এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে ভোক্তাদের সচেতন করা। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
ভোক্তারা পণ্যের গুণগত মান সম্পর্কে সচেতন হলে ভালো পণ্যটির জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন। অন্যদিকে গুণগত পণ্যের যথার্থ মূল্য পেলে কৃষকও উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
স্বপ্ন অল্প সময়ের মধ্যে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। তবে এখনো কিছু সমস্যা রয়েছে। খুব দ্রুত সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেন প্রত্যেকের কাছে নিরাপদ খাদ্য পৌঁছে দেওয়া যায়।

মোহাম্মদ মাহফুজুল হক
মোহাম্মদ মাহফুজুল হক


মোহাম্মদ মাহফুজুল হক
বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে ২৫ লাখ ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়ী ও ১৮টি মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া দেশে প্রায় ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব প্রতিষ্ঠানের অধীন প্রায় ১২০টি আইন ও নীতিমালা রয়েছে।
দেশে ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাদ্য ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগের পেশাগত জ্ঞান বা প্রশিক্ষণ নেই। সব মানুষের জন্য নিরাপদ খাদ্য একটি জাতীয় প্রত্যাশা। দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, ধর্মীয় মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে যেন সবাই সহজে ও সুলভ মূল্যে খাদ্য পেতে পারে, সে জন্য সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইনের বাস্তবায়নের জন্য নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠিত হয়। সর্বস্তরে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত আইন রয়েছে, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সেগুলো কার্যকর করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
৬৪টি জেলায় ও আটটি বিভাগীয় শহরে ৭৪টি নিরাপদ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইন মেনে চলার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী নানা সংগঠনের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে বিধিমালাগুলো প্রণয়নের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় গুণগত পরিবর্তন আবশ্যক। আধুনিক ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে চাষাবাদের জন্য কৃষককে আগ্রহী করতে হবে। এ ছাড়া এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ও সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটিয়ে কাজের গতি বৃদ্ধি করা হচ্ছে।
ফুড সেফটি অথরিটি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করছে। খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষার জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।
পরীক্ষাগারগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। কাঁচাবাজারগুলো অস্বাস্থ্যকরভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং সহজেই দূষিত হচ্ছে খাদ্যদ্রব্য। আবার অনেকের অজ্ঞতার কারণেও খাদ্যে জীবাণু সংক্রমিত হচ্ছে।
এ জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। সচেতনতার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি করতে হবে। সর্বোপরি নিরাপদ খাদ্যের বিষয়টিকে একটি সামাজিক আন্দোলনে রূপ দিতে হবে।

মো. সাইফুল ইসলাম
মো. সাইফুল ইসলাম


মো. সাইফুল ইসলাম
গত ডিসেম্বর থেকে স্বপ্ন আমাদের প্রায় ১০০ জন চাষিকে তিন মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করে। তিন মাসে আমরা বিভিন্নভাবে উপকৃত হয়েছি। এখন আমরা কীটনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে অনেকটা সচেতন।
সরকার কোন কীটনাশক নিষিদ্ধ করেছে, কোনটার অনুমোদন দিয়েছে, আগে সেটি জানতাম না। আবার কীটনাশক ব্যবহারের সময় মাথায় টুপি, ফুলপ্যান্ট, মাস্ক, হাতমোজা পরা সম্পর্কে আমরা সচেতন ছিলাম না। স্বপ্ন আমাদের এসব বিষয়ে সচেতন করেছে।
কখন চারা রোপণ করতে হবে, কখন সার দিতে হবে, কীটনাশকের পরিমাণ কতটুকু হবে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কেও স্বপ্ন আমাদের সচেতন করেছে। আগে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতাম। এ কারণে একদিকে কীটনাশকের অপচয় হতো আর অন্যদিকে খাদ্যের গুণগত মান ঠিক থাকত না।
কীটনাশক ব্যবহারের কত দিন পর শস্য বাজারজাত করা হবে, সে বিষয় সম্পর্কে স্বপ্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। ধীরে ধীরে কৃষকের অজ্ঞতা কমে আসছে ও ফসল আগের চেয়ে বেশি উৎপাদিত হচ্ছে।
স্বপ্নের মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে এলে নিরাপদ খাদ্য নিরাপত্তা আন্দোলন আরও দ্রুতগতিতে অগ্রসর হবে।

মো. সহিদুজ্জামান
মো. সহিদুজ্জামান


মো. সহিদুজ্জামান
নিরাপদ খাদ্য একটি কৌশলগত ব্যবস্থাপনা। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িত। আমাদের শরীরে ৩৩ শতাংশ রোগ হওয়ার পেছনে রয়েছে ভেজাল খাদ্য। পাঁচ বছরের নিচে শিশুর ৪০ ভাগ রোগ হয় দূষিত খাদ্য থেকে। খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে খাবার টেবিলে আসা পর্যন্ত নানা পর্যায়ে দূষিত হয়। এর মূল কারণ অসচেতনতা।
কৃষক বাজারজাত করার সময় খাদ্য দূষিত করে, ক্রেতা ভালো পণ্যের সঙ্গে ভেজাল পণ্যের মিশ্রণ ঘটিয়ে খাদ্যের দূষণ ঘটায়। এই দূষণ রোধ করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
উৎপাদনের পরিবেশ খাদ্যের মানকে প্রভাবিত করে। বাজারের তাজা মাছ কোন পরিবেশে বড় হয়েছে, সেটি কিন্তু মাছের গুণগত মান নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। মাছকে যে খাবার দেওয়া হয়, তা থেকেও মানুষের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। এ জন্য উৎপাদনের পরিবেশকে স্বাস্থ্যকর করতে হবে। নতুবা ক্ষতির আশঙ্কা থেকে যাবে।
এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করতে হবে। গবেষণার ফলের ভিত্তিতে করণীয় ঠিক করে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করতে হবে।
কোনো খাদ্যকে বিশুদ্ধ ঘোষণার সঙ্গে তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে হবে। শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, তার কার্যকর প্রয়োগও ঘটাতে হবে। নতুন আইন প্রয়োজন হলে সবকিছু বিবেচনা করে তা প্রণয়ন করতে হবে। বিষয়টি কার্যকর করতে হবে। কৃষককে আইন সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

অনিরুদ্ধ হোম রায়
অনিরুদ্ধ হোম রায়


অনিরুদ্ধ হোম রায়
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ খাদ্যের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছে। এ জন্য একমুখী খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, বছরে প্রায় ৬০ কোটি মানুষ অনিরাপদ খাদ্য থেকে সৃষ্ট নানা সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং তার মধ্যে ৪ লাখ ২০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। পৃথিবীর প্রায় ৭৫ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। এই পরিসংখ্যানগুলো আমাদের জন্য উদ্বেগজনক।
নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করতে না পারলে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করার কথা চিন্তাও করা যায় না। কৃষিতে ঢালাওভাবে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার হচ্ছে।
মাংস উৎপাদনে অসচেতনভাবে ভেটেরিনারি ডোজ ব্যবহার করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কর্তৃপক্ষকে বাজারে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
খাদ্য ও স্বাস্থ্য একটি আরেকটির পরিপূরক। ইউএসএআইডি নিরাপদ খাদ্যের ওপর জোর দেওয়ার সঙ্গে খাদ্যের উৎপাদন ও অন্য বিষয়গুলো তদারক করে। সর্বোপরি সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হলে সরকারি, বেসরকারি খাতসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

পল বানডিক
পল বানডিক


পল বানডিক
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার আগে কৃষকের দিকটি বিবেচনা করতে হবে। যখন কৃষক তাঁর যথার্থ পারিশ্রমিক পান না, তখন তিনি নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অনিরাপদ খাদ্য কৃষক, ব্যবসায়ী, ভোক্তা সবার জন্যই ক্ষতিকর।
ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে। ভোক্তার সচেতনতার জন্য নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে কৃষক ও ব্যবসায়ী ভোক্তার কথা মাথায় রেখে পণ্য সরবরাহ করবেন। স্বপ্ন যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটা সারা দেশে সাড়া জাগিয়েছে। তাদের উদ্যোগ মানুষকে সচেতন করতে সহায়তা করবে।
কীটনাশকের ব্যবহার সম্পর্কে অনেকে অবগত নন। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফসল বিষাক্ত হয়ে উঠছে। মানুষের শরীরে অল্প সময়ে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয় না। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে তা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্যের ব্যবস্থাপনা একটি জটিল বিষয়। সে জন্য প্রত্যেককে সচেতন হতে হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে নির্ভর করতে হয় কৃষকের ওপর। তাই সচেতনতা কৃষক থেকে শুরু হতে হবে।
সবার জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা রাতারাতি সম্ভব নয়। ধীরে ধীরে বিদ্যমান সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান কীটনাশক উৎপাদন করে, তাদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় স্বার্থে নতুন নীতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে পারে।

বানি আমিন
বানি আমিন


বানি আমিন
ভালো খাদ্য পেতে হলে ভোক্তাদের উপযুক্ত মূল্য দিতে হবে। কৃষক ন্যায্য মূল্য না পেলে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করবে না। এ জন্য ভোক্তার নিরাপদ খাদ্যের চাহিদা থাকতে হবে। প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় করার মানসিকতা থাকতে হবে।
দেশে লাখ লাখ কৃষকের কাছে আমরা কীভাবে যেতে পারি, এ জন্য বিভিন্ন উপায় বের করতে হবে। আমরা এ ক্ষেত্রে এমন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি, যারা কৃষকদের কাছে যেতে পারে। এসব প্রতিষ্ঠান কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে ভোক্তাদের নিকট সরবরাহ করে।
ফলে এই প্রতিষ্ঠানগুলো ভোক্তাদের নিরাপদ খাদ্যের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে কৃষকদের খাদ্য উৎপাদনের নিয়মকানুন মেনে চলার প্রশিক্ষণ দেবে। এভাবে দেশে নিরাপদ খাদ্যের একটা চেইন তৈরি হবে।
একটা ধারণা আছে, বাংলাদেশে একজন মানুষ বছরে ১৭৩ কেজি চালের ভাত গ্রহণ করে। এখন অবশ্য অভ্যাস বদলাচ্ছে। আমরা দেখেছি, এখন গ্রামের মানুষ সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। কোনো দোকান বা রেস্টুরেন্ট থেকে চা-বিস্কুট, পরোটা ইত্যাদি খেয়ে নেয়। অধিকাংশ সময় সকালে তাদের ভাত খাওয়া হয় না। দেশের মানুষ যা–ই খান না কেন, এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবার দায়িত্ব।

শাইখ সিরাজ
শাইখ সিরাজ


শাইখ সিরাজ
নিরাপদ খাদ্য সবার জন্য প্রয়োজন। কিন্তু খাদ্য বিভিন্নভাবে দূষিত হয়। সেগুলোর মাধ্যমে নানা ধরনের রোগজীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ভোক্তা যে পণ্যটি গ্রহণ করছে, সেটির গুণগত মান সম্পর্কে অসচেতন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভোক্তার সচেতনতা অনেক জরুরি।
বর্তমানে মাংস উৎপাদনের ক্ষেত্রে কিছু গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করা হচ্ছে, যেগুলো মানসম্পন্ন নয়। ঈদের সময় কিছু গরুর মাংস উৎপাদনে এমন হরমোন ব্যবহার করা হয়, ঈদের চার-পাঁচ দিনের মধ্যে গরুটি বিক্রি না হলে সেটি মারা যায়। এই মাংস মানুষের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ব্যক্তি কেবল অতিরিক্ত লাভের প্রত্যাশায় এই হরমোন ব্যবহার করছে। আরেকটি কারণ, বাংলাদেশে এ ধরনের হরমোনের সহজলভ্যতা। সরকার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই।
বীজ ও কীটনাশকের মোড়কের ভেতর কোথাও লেখা নেই এর দ্বারা কোনো ক্ষতি হলে কৃষক ক্ষতিপূরণ পাবেন। বীজ যদি না গজায়, কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হন। কিন্তু বীজ বিক্রেতাকে কিছু বলতে পারেন না। বর্তমানে কীটনাশক বা সারের ব্যবহার ছাড়া কৃষক ফসল ফলিয়ে খুব একটা লাভবান হন না। আবার কীটনাশক বা সারের ব্যবহার ছাড়া কৃষক যদি ফসল উৎপাদন করেন, তাহলে ক্রেতা বেশি দামে পণ্য কিনতে আগ্রহী নয়। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার পথে এটি একটি বড় অন্তরায়।
খাদ্যে ভেজাল মিশ্রণকারী ব্যক্তির যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি একজন অপরাধ করে বেঁচে যায়, তাহলে অন্যজন এই অপরাধ করার সাহস পায়। দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শুঁটকিতে অবাধে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কীটনাশক ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত। কৃষক তাঁর জমিতে যে পরিমাণ শ্রম দেন, তার জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক পান না। তবে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে কৃষকের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কৃষক উন্নত বীজ পেয়েছেন। আগের চেয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকের জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পেলে তাঁদের সমস্যাগুলো ভবিষ্যতে ধীরে ধীরে কমে যাবে।

অভিলাস গোরহে
অভিলাস গোরহে


অভিলাস গোরহে
কোনো খাদ্য বাজারে বিক্রয়ের জন্য ক্রেতার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা জরুরি। এ জন্য পণ্য সম্পর্কে সঠিক তথ্য ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করতে হবে। রাস্তার অনিরাপদ খাদ্যের চেয়ে বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে ঘোষিত নিরাপদ খাদ্যের ওপর ভোক্তা বেশি আস্থাশীল।
ভোক্তা নিরাপদ ও প্যাকেটজাত খাবার গ্রহণ করতেই বেশি আগ্রহী হয়। এ ক্ষেত্রে কৃষককে আধুনিক প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ জ্ঞানের সহায়তা নিতে হবে। খাবারের প্যাকেটে এর গুণগত মান, মেয়াদ, অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে; যা জানা একজন ভোক্তার অধিকার।
খাবারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বৈশ্বিক বাজারে যে পরিমাণ লাভবান হওয়া যায়, স্থানীয় বাজারে ক্রেতাদের কাছ থেকে সেই পরিমাণ লাভবান হওয়া যায় না।
স্থানীয় বাজারে বিক্রেতা ভালো দ্রব্য কম দামে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে না। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাকে ভালো পণ্যের জন্য যথাযথ অর্থ ব্যয়ের কথা মাথায় রাখতে হবে। নিরাপদ খাদ্য বা স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে হলে সবাইকে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়ে সচেতন করতে হবে।

কামরুল ইসলাম
কামরুল ইসলাম


কামরুল ইসলাম
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের দেশে অনেক আইন রয়েছে। কিন্তু এসব আইনের সঠিক প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না। ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হলো কৃষি।
ইউএসএআইডি ও গ্লোবাল গ্যাপের (যারা সঠিক নিয়ম মেনে ফসল উৎপাদন করে, তাদের স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান) ভ্যালু চেইনের সঙ্গে আমরা কয়েক বছর ধরে কাজ করছি। গ্লোবাল গ্যাপের অধীনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
কৃষকদের যদি ভালো কিছুতে আগ্রহী করে তোলা হয়, তাহলে তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের সম্পৃক্ত করে ফেলেন। বর্তমানে কৃষকের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেকোনো নতুন প্রযুক্তি তাঁরা খুব সহজেই গ্রহণ করছেন। নিরাপদ খাদ্যের জন্য কৃষকের পাশাপাশি ভোক্তাকে সচেতন হতে হবে।

মো. ইকবাল রউফ মামুন
মো. ইকবাল রউফ মামুন


মো. ইকবাল রউফ মামুন
বর্তমানে কৃষকেরা স্বাস্থ্যসম্মত চাষাবাদ করছেন কি না, তার তত্ত্বাবধান করছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচার এক্সটেনশন। কৃষকদের নানা ধরনের সাহায্য করছে প্রতিষ্ঠানটি। খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহন, বিক্রয় ও ভোক্তার চূড়ান্ত গ্রহণ—প্রতিটি পর্যায়ই নিরাপদ খাদ্য নিশ্চয়তার সঙ্গে জড়িত। চাষাবাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্যাপকে অনুসরণ করতে হবে। তবে যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গ্যাপ নেই, সেই ক্ষেত্রে গ্লোবাল গ্যাপকে অনুসরণ করা যাবে। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কৃষককে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ, মাছ চাষের পরিবেশ সম্পর্কে তত্ত্বাবধান করার জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট বিভাগের লোক রয়েছেন। কর্তৃপক্ষ ভালোভাবে তদারক করলে খাদ্যে ভেজাল হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।
কোনো কোনো সময় বাজারে একটি নিরাপদ খাদ্য আসার পরও কেবল অসচেতনতার জন্য অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। আবার বাজার থেকে ভোক্তা বাসায় নিয়ে গিয়েও কোনো সময় খাবারকে দূষিত করছে।
কোনো কোনো গবেষণা আমাদের সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়। ফলে সৃষ্টি হয় মতভেদ ও বিভ্রান্তি। টেস্টিং সল্ট, স্যাকারিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, মিনিকেট চাল ইত্যাদি ক্ষতিকর নয়।
গ্লোবাল গ্যাপ প্রতি কেজি ফলে যে পরিমাণ ফরমালিন স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি নয় বলে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি হওয়া ফলগুলোতে সেই পরিমাণ ফরমালিন পাওয়া যায়নি। অথচ এ নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি মানুষের মধ্যে রয়ে গেছে।
কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ যদি ফলের মধ্যে থেকে যায়, সেটা অবশ্যই ক্ষতিকর। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে শাকসবজি নিরাপদ খাদ্য। ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করলে তাতে আর কোনো জীবাণুই থাকে না।

মোস্তফা মাহফুজ
মোস্তফা মাহফুজ


মোস্তফা মাহফুজ
নিরাপদ খাদ্য পাওয়ার জন্য খাবার সংরক্ষণ করা বা নিরাপদে রাখা অত্যন্ত জরুরি। সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করতে পারলে বিশুদ্ধ খাবার দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দূষিত খাবারের ফলে হুমকির মুখে পড়ছে শিশুর স্বাস্থ্য।
শিশুদের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে তাদের বেড়ে ওঠার যোগসূত্র রয়েছে। আক্রমণকারী রোগজীবাণুর ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। সম্প্রতি বসতি এলাকার হাঁস-মুরগি থেকে সংক্রমিত শিশুদের শরীরে বিশেষ ধরনের জীবাণু লক্ষ করা যাচ্ছে। এটা থেকে পরবর্তী সময়ে শিশুদের আরও কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নিরাপদ খাবারের ক্ষেত্রে নিরাপদ পানি অতি জরুরি। বেশির ভাগ সময় খাওয়ার পানি অস্বাস্থ্যকর বা অনিরাপদ। অনিরাপদ পানি পানের ফলে নানা ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যা স্বাস্থ্য খাতে খরচের হার বৃদ্ধি করছে।

সাব্বির হাসান নাসির
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ঘটানো প্রয়োজন। স্বপ্ন খাবারের বিশুদ্ধতা ও সরকারি নীতি অনুসরণ করে ভোক্তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে। বিভিন্ন সময় সরকারি কর্মকর্তারা স্বপ্নের পণ্যে ফরমালিনের জন্য অভিযোগ করেছেন ও জরিমানাও করেছেন। পরবর্তী সময়ে দেখা গেল, সেই পণ্যে ফরমালিন নেই। সে জন্য আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
পণ্যে ফরমালিন আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী স্বপ্ন উদ্যোগী হয়ে অনেক অর্থ খরচ করে ফরমালিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। অথচ পরবর্তী সময়ে আবার সরকারি আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকেই বলা হলো, এভাবে ফরমালিন পরীক্ষা করা যায় না। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য এই সমন্বয়হীনতা দূর করা জরুরি।
বর্তমানে যে আইনগুলো রয়েছে, সেগুলো বাস্তবসম্মত নয়। পণ্যের ক্ষেত্রে যেসব নীতিমালা রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে সব অংশীদারের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। দেশীয় বাজারে ক্রেতাদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ গ্যাপ অনুসরণ এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের জন্য গ্লোবাল গ্যাপ অনুসরণ করতে হবে।

আব্দুল কাইয়ুম
নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণন—প্রতিটি পর্যায়েই সচেতনতা প্রয়োজন। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য আজকের আলোচনায় অনেকগুলো প্রস্তাব এসেছে। আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

যাঁরা অংশ নিলেন
মোহাম্মদ মাহফুজুল হক: চেয়ারম্যান, ফুড সেফটি অথরিটি
সাব্বির হাসান নাসির: নির্বাহী পরিচালক, সুপার স্টোর চেইন শপ, স্বপ্ন
শাইখ সিরাজ: পরিচালক ও বার্তা প্রধান, চ্যানেল আই
মো. ইকবাল রউফ মামুন: সদস্য, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও অধ্যাপক, রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কামরুল ইসলাম: সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)
মো. সহিদুজ্জামান: অধ্যাপক, প্যারাসাইটোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
অনিরুদ্ধ হোম রায়: প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজর, ইউএসএআইডি, বাংলাদেশ
পল বানডিক: চিফ অব পার্টি (সিওপি), অ্যাগ্রিকালচারাল ভ্যালু চেইনস প্রজেক্ট, ইউএসএআইডি
মোস্তফা মাহফুজ: ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর, নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিস ডিভিশন, আইসিডিডিআরবি
অভিলাস গোরহে: ফুড সেফটি কনসালট্যান্ট, ফার্ম প্রোডিউস অ্যান্ড ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রি
বানি আমিন: ডেপুটি চিফ অব পার্টি (সিওপি), অ্যাগ্রিকালচারাল ভ্যালু চেইনস প্রজেক্ট, ইউএসএআইডি
মো. মাহদী ফয়সাল: হেড অব বিজনেস, সুপার স্টোর চেইন শপ, স্বপ্ন
মো. সাইফুল ইসলাম: তৃণমূল কৃষক, কুল্লাপাড়া, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম: সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো