'বন্দুকযুদ্ধ' কি চলতেই থাকবে?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সদস্যদের দ্বারা ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও বন্ধ হয়নি। বরং কিছুদিন পরপর একেকটি ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনায় মনে হচ্ছে, অপরাধীদের বিচার করে শাস্তি দেওয়ার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া এড়িয়ে স্রেফ হত্যা করার এই চর্চা একটি স্থায়ী ব্যবস্থার অংশ হয়ে উঠেছে। আইনের শাসনের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার যে নির্দেশনা এই প্রজাতন্ত্রের সংবিধানে রয়েছে, যা পালনের অঙ্গীকার সব সরকারের আমলে করা হয়, পরিকল্পিতভাবে ও নিয়মিতভাবে তা লঙ্ঘন করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
পটুয়াখালীতে তরিকুল ইসলাম ওরফে কালা ভাই নামের এক ব্যক্তি ১৭ জুলাই নিখোঁজ হওয়ার ১০ দিন পর র‌্যাব সদস্যদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার পর র‌্যাবের পটুয়াখালী ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক সংবাদমাধ্যমের কাছে এই ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন, তা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ সম্পর্কে আইন প্রয়োগকারীদের দেওয়া একই গল্পের পুনরাবৃত্তি।
র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, নিহত তরিকুলের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ নানা অভিযোগে ২৮ থেকে ৩০টি মামলা আছে। অর্থাৎ তাঁকে একজন পেশাদার অপরাধী হিসেবে তুলে ধরলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তাঁর প্রাণ হারানোর গল্পটি অপরাধপীড়িত জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য করার চেষ্টা বলে মনে হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর মনোভঙ্গিরও পুনঃপ্রকাশ ঘটেছে। কিন্তু হত্যাকারী বা ডাকাত কিংবা অন্য কোনো গুরুতর অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলেই কোনো ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা আইনসিদ্ধ নয়, বরং এটাও একটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। আইনের শাসনের পরিপন্থী ও সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই চর্চা অবশ্যই বন্ধ করা উচিত।
বর্তমান সরকার বিরোধী দলে থাকার সময় ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘বন্দুকযুদ্ধে’র নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারা সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি; বরং এ সরকারের আমলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা আরও বেড়েছে। কিন্তু সরকারের উপলব্ধি করা উচিত, এই বিচারবহির্ভূত হত্যার চর্চা আর চলতে দেওয়া যায় না।