বাংলাদেশকে ২০ হাজার কোটি ইয়েন ঋণ সহায়তা দিচ্ছে জাপান

টোকিওতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। ছবি: সংগৃহীত
টোকিওতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনো। ছবি: সংগৃহীত

জাপান সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সোমবার সন্ধ্যায় টোকিওতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিথি ভবন ইকুরা হাউসে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারো কোনোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। দুই মন্ত্রী তাঁদের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানাদিকের ওপর আলোকপাত করেন এবং বৈঠকের পর সংবাদ ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হয়ে আলোচনার সার-সংক্ষেপ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।

বৈঠকের শুরুতে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কক্ষপথে সফল যোগাযোগ উপগ্রহ উৎক্ষেপণ এবং ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সফল একটি বৈঠক আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এবং বাংলাদেশের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে উত্থাপিত বিষয়াবলি মধ্যে বাংলাদেশের জন্য নতুন আর্থিক সহায়তা ছাড়াও রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা এবং কোরীয় উপদ্বীপের সাম্প্রতিক অগ্রগতিও অন্তর্ভুক্ত ছিল। সংবাদ ব্রিফিংয়ে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে জাপানের ভালো এক অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশের নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে সার্বিক সহায়তা প্রদান জাপান অব্যাহত রাখবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আনুমানিক ২০ হাজার কোটি ইয়েনের নতুন ঋণ সহায়তার উল্লেখ করে বলেন, ২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৫০-তম বার্ষিকীকে সামনে রেখে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করে নিতে এবং জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনি কাজ করে যাবেন।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রসঙ্গে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিশাল এই বোঝা বহনের জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন যে তিনি আশা করছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ইতিমধ্যে শুরু হওয়া আলোচনা প্রক্রিয়া শরণার্থীদের দ্রুত দেশে ফেরত যেতে সাহায্য করবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা চলার সময়েও শরণার্থীদের সাহায্য করায় দেশটির নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা তিনি করেছেন এবং সমস্যার সমাধান করে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় উভয় দেশের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত রাখতে জাপান প্রস্তুত আছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম চলে আসায় শরণার্থীদের দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনার মুখে সমস্যার দ্রুত সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন শরণার্থী সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে চলা সংলাপের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি তাঁর জাপানি প্রতিপক্ষকে অবহিত করেছেন। তিনি আশা করছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জাপানের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

কোরীয় উপদ্বীপের পরমাণু মুক্ত-করণের সম্ভাবনার আলোকে উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গে জাপানের মৌলিক অবস্থানের ব্যাখ্যা তারো কোনোর কোনো বৈঠকে দেন। উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাপানের অবস্থানের প্রতি তাঁর দেশের সমর্থন ব্যক্ত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী এ ছাড়া বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ২০১৬ সালের মর্মান্তিক ঘটনার পর জাপান বাংলাদেশের পাশে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোয় জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকেও ধন্যবাদ দেন।

মনজুরুল হক: শিক্ষক ও সাংবাদিক