অবহেলিত দ্বীপ জেলা

দ্বীপজেলা ভোলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু যেন প্রদীপের নিচে নিকষ অন্ধকারের প্রতীক হয়ে আছে মুজিব নগর। এখানকার প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ যেদিন শুনেছিল, আগের ইউনিয়ন নূরাবাদ ভাগ করে নতুন ইউনিয়ন হচ্ছে আর তার নামকরণ করা হয়েছে মুজিব নগর (যদিও মুজিব নগর নামে আরও ঐতিহাসিক স্থান আছে), তখন তারা নিশ্চয় আশায় বুক বেঁধেছিল। তারা ভেবেছিল, চারদিকে যখন উন্নয়নের ডঙ্কা, তখন নিশ্চয় এলাকাটি সরকারের নেক নজরে পড়বে। কিন্তু সে আশার গুড়ে বালি। তারা এই যুগেও এখনো এমন একটি ‘প্রশাসনিক ইউনিট’, যেখানে কিঞ্চিৎ সৌরবিদ্যুৎ গেলেও নিয়মিত বিদ্যুৎ-সুবিধাবঞ্চিত।

বিসিএস ধরনের যাঁরা প্রশ্নকর্তা, তাঁরা প্রশ্ন সাজাতে পারেন, বাংলাদেশের কোন ইউনিয়ন পাকা রাস্তা, হাসপাতাল, হাইস্কুল ও কলেজমুক্ত? এর উত্তর হলো মুজিব নগর ইউনিয়ন। এই এলাকার ক্ষমতাসীন দলীয় সংসদ সদস্যের প্রভাব একেবারে কম নয়। তার নমুনা হলো, তিনি মুজিব নগর নামকরণে নেতৃত্ব দিয়ে কয়েক বছর আগে চর লিউলিনে পাকা রাস্তা নির্মাণের জন্য ইতিহাসের প্রথম ভিত্তিপ্রস্তরটি স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসী আজও জানে না এই রাস্তার কাজ কবে শুরু হবে। অবশ্য এলাকাবাসীর উদ্দেশে সম্প্রতি তিনি কথিতমতে ঘোষণা করেছেন যে, এলজিইডি তহবিলের ‘সবচেয়ে বড়’ অংশটিই তিনি তাঁর এলাকার জন্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। আর বাস্তবতা হলো, এই দ্বীপ তল্লাটের মানুষ স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও জীবনের সব ক্ষেত্রে পিছিয়ে।

দেশের অবকাঠামো খাতে বিরাট উন্নয়ন নিশ্চয় একটি বাস্তবতা। কিন্তু তা যে কত বৈষম্যমূলক হতে পারে, মুজিব নগর তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। এখন সরকারের উচিত মুজিব নগরের মতো এ রকম এলাকা খুঁজে বের করে সেখানে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আধুনিক জীবনের ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত করা। এই জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রাষ্ট্র যে আচরণ করছে, তা অন্যায়। ২০ হাজার মানুষের জন্য এক ছটাক পাকা রাস্তা (একটি ওয়ার্ডে কোনো রাস্তাই নেই) থাকবে না, একটি হাইস্কুল পর্যন্ত থাকবে না, এটা তো রীতিমতো অবিচার।

লক্ষণীয়, এই এলাকার মানুষ দরিদ্র কিন্তু জাতীয় অর্থনীতির প্রাণস্পন্দন সচল রাখতে তুলনামূলক বেশি ভূমিকা রাখছে। তাদের প্রশংসনীয় কর্মশক্তির উৎস ৪৫ হাজার একরের তিন ফসলি জমি। চলতি মৌসুমে শুধু তারা তরমুজ বিক্রি করেছে ২০ কোটি টাকার। ২০ হাজার মানুষ শুধু তরমুজে ২০ কোটি টাকার জোগানদাতা হলেও রাষ্ট্রের কোনো পুরস্কার তাদের জন্য নেই। ১৭ মে প্রথম আলোর বরিশাল পাতায় ‘৪০ কিমি সড়কই কাঁচা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, তার প্রতি আমরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করি। অনুন্নয়নের মডেলটি রূপান্তরিত হোক উন্নয়নের মডেলে।