দামি মোবাইল ছাড়া চলবে কেন!

বিপণনকর্মীদের তাঁদের প্রতিষ্ঠান থেকে দামি ঘড়ি, মোবাইল ফোনসেট ও ভালো পোশাক পরতে উৎসাহিত করা হয়। কারণ, ‘প্যাহলে দর্শনধারী, বাদ মে গুণ বিচারি’। আমাদের সরকারেরও সম্ভবত ধারণা হয়েছে যে এ দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবদের হাতে দামি মোবাইল ফোন না থাকলে জনগণের কাছে তাঁরা দাম পাবেন না। এত দিন মোবাইল ফোন কেনার জন্য যে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হতো, সেই ফোনে তাঁদের মানসম্মান থাকছে না! পাঁচ গুণ করে এখন তা ৭৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। ফোনের বিলের টাকাও করা হয়েছে সীমাহীন।

ব্যাংক থেকে যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাচ্ছে, ঘুষ-দুর্নীতি করে যেখানে অনেকে শত শত কোটি টাকার মালিক হচ্ছেন এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন, সেখানে ৭৫ হাজার টাকার মোবাইল আর এমন কী! সব মিলিয়ে এতে আর কত টাকাই বা খরচ হবে! কিন্তু এসব সিদ্ধান্তে কেন যেন জনগণ ক্ষুব্ধ হয়। সম্ভবত বড় বড় দুর্নীতি, অপচয় আর লুটপাটের খবরের ভিড়ে যখন মন্ত্রী-সচিবদের মোবাইল ফোন কিনতেও জনগণের টাকায় হাত দেওয়া হয়, তখন জনগণের কাছে তা বাড়তি খোঁচা মনে হয়।

মন্ত্রিসভা যখন গত সোমবারের বৈঠকে সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা-২০১৮-এর খসড়া অনুমোদন করেছে, তখন মন্ত্রী-সচিবদের হাতে আমরা সামনে যে মোবাইল ফোনগুলো দেখব, ধরে নিতে হবে যে সেগুলোর দাম ৭৫ হাজারের নিচে নয়। জনগণের সেবকদের ব্যাপারে সরকারের এই উদার মনোভাব অবশ্য নতুন নয়। এর আগে উপসচিব থেকে শুরু করে ওপরের সব আমলার গাড়ি কেনার জন্য বিনা সুদে ৩০ লাখ টাকা ঋণের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই গাড়ি পোষার জন্য জনগণের অর্থ থেকে সবাই প্রতি মাসে পাবেন আরও ৫০ হাজার টাকা। এরপর সচিব পদমর্যাদার আমলাদের নিরাপত্তা আর রান্নার জন্য মাসে ভাতা নির্ধারণ করা হলো ৩২ হাজার টাকা। তা তাঁরা বাবুর্চি বা নিরাপত্তারক্ষী না রাখলেও পাবেন।

এখানেই শেষ নয়। উপসচিব ও এর ওপরের পদমর্যাদার আমলাদের জন্য মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণের সুবিধা নিশ্চিত করা আছে। ২০ বছর মেয়াদের এই ঋণ নিয়ে তাঁরা বাড়ি নির্মাণ কিংবা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন।

কোথা থেকে আসে এত টাকা? এই টাকা দেশের সাধারণ মানুষের টাকা। জনগণের সেই টাকার বিধিব্যবস্থা ও এর মাধ্যমে জনসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরা ৭৫ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেট হাতে নিয়ে না হয় নিজেদের মানসম্মান কিছুটা বাড়ালেন, কিন্তু জনগণ তাঁদের কাছ থেকে কী সেবা পাচ্ছে? বিভিন্ন কাজে যাঁরা বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে যান, তাঁরা কী সেবা পান? আমাদের নাগরিক জীবনযাপনের ন্যূনতম কী সুযোগ-সুবিধা তাঁরা নিশ্চিত করতে পারছেন? জনগণের অভিজ্ঞতা কী বলে? ৭৫ হাজার টাকার ফোন পাওয়ার পর জনগণ কি তাদের সেবকদের কাছ থেকে একটু বেশি সেবা পাবে?