পরিত্যক্ত আঞ্চলিক মহাসড়ক

দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর বেশ দুরবস্থা চলছে। এটা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালেখি, আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু তেমন কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। সড়ক-মহাসড়কগুলো খারাপ হতেই পারে, তার ফলে মানুষের দুর্ভোগ ও পণ্য পরিবহনে বাধাবিঘ্নও ঘটতে পারে। তবু তা সত্ত্বেও ভাঙাচোরা ও খানাখন্দময় সড়ক-মহাসড়কে যানবাহন চলাচল করে। ছয় ঘণ্টার পথ অতিক্রম করতে হয়তো ১২ থেকে ২২ ঘণ্টা লেগে যেতে পারে, কিন্তু তবু যান চলাচল বন্ধ হয় না, জীবন থেমে থাকে না। কোনো সড়ক বা মহাসড়কের অবস্থা কি এত খারাপ হতে পারে যে সেটা দিয়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়?

বিস্ময়কর হলেও এ রকম ঘটেছে। কোনো প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট রাস্তা নয়, বরং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আঞ্চলিক মহাসড়কের দুর্দশা এতই শোচনীয় হয়ে পড়েছে যে সেটা দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। শরীয়তপুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের শরীয়তপুর সদর উপজেলার মনোহরবাজার থেকে আলুর বাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ সম্পূর্ণভাবে পরিত্যক্ত হয়েছে। মহাসড়কটির ওই অংশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে এক মাস ধরে। এর অন্তত ১২ কিলোমিটার অংশজুড়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, কোনো কোনো গর্তের গভীরতা দুই-তিন ফুট পর্যন্ত। কোনো কোনো গর্ত এত চওড়া যে সড়কের দুই কিনার পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, সেখান দিয়ে এমনকি মোটরসাইকেলও যেতে পারে না।

অথচ জাতীয় অর্থনীতিতে এই আঞ্চলিক মহাসড়কের গুরুত্ব বিরাট। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলা এবং বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এই মহাসড়ক দিয়ে দিনে অন্তত ৮০০ যানবাহন চলাচল করত। এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ার ফলে সেসব যানবাহনকে এখন চট্টগ্রাম অঞ্চলে যাতায়াত করতে হচ্ছে ঢাকা হয়ে। ফলে পণ্য পরিবহনের সময় ও খরচ অনেক বেড়ে গেছে। শরীয়তপুরের এক রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেছেন, শরীয়তপুর-চাঁদপুর মহাসড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে এক মণ রড শরীয়তপুর আনতে তাঁর খরচ হতো ১ হাজার ৩০০ টাকা, আর এখন ঢাকা হয়ে খরচ পড়ছে ২ হাজার ১০০ টাকা।

এটা স্পষ্ট যে মহাসড়কটির এমন শোচনীয় দুর্দশা রাতারাতি হয়নি, দীর্ঘ সময় ধরে অযত্নের ফলেই এটা ঘটেছে। নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন আছে। প্রথম আলোর খবরে প্রকাশ, কিছু স্থানে মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছিল, কিন্তু বৃষ্টির কারণে ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। প্রশ্ন হলো, বৃষ্টির মৌসুম আসার আগেই কাজ শুরু হয়নি কেন? বর্ষা সবে শুরু হচ্ছে, শুকনো মৌসুমের জন্য অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হবে? তত দিন পর্যন্ত কি এই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কটি পরিত্যক্তই থেকে যাবে? এর দায় কার? সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের জবাবদিহি কোথায়?